পেকুয়ায় বাঁধের অভাবে বোরো চাষে অনিশ্চয়তা

দুই বছরেও কৃত্রিম বাঁধ নির্মাণ হয়নি

নিজস্ব প্রতিনিধি, পেকুয়া  »

কক্সবাজারের পেকুয়ার টইটং প্রবাহমান খালে এখনো মাটির বাঁধ নির্মিত হয়নি, চরম শংকায় বোরো চাষিরা। বোরো চাষে খালের মিঠা পানির উৎসের উপর নির্ভরশীল অন্তত আড়াই হাজার একর জমির বোরো চাষিরা। অকেজো রাবারড্যাম অংশে কৃত্রিম মাটির বাঁধ তৈরি হচ্ছে বিগত দুবছর ধরে। কারিগরি ত্রুটিতে টইটং খালের উপর স্থাপিত রাবারড্যাম ফুটো হয়ে গেছে।
কৃষি উৎপাদন স্বাভাবিক রাখতে নদীর ওই অংশে দেওয়া হচ্ছে মাটির বাঁধ। আগামী কয়েকদিনের মধ্যে শুরু হবে চলতি বোরো মৌসুম। এখনো খালের উপর মাটির বাঁধ নির্মিত হয়নি। বাঁধ নির্মাণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা ও নির্মাণ ব্যয়ের জন্য বরাদ্দ পেতে একমাত্র নিবন্ধিত সংগঠন টইটং সোনাইছড়ি পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতি লিঃ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে লিখিত আবেদন পাঠিয়েছেন। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) পেকুয়া উপজেলা প্রকৌশলী আসিফ মাহমুদকে আবেদন হস্তান্তর করেন। পরবর্তীতে ওই আবেদনটি এলজিইডি কক্সবাজার এর নির্বাহী প্রকৌশলী কার্যালয় থেকে পাঠানো হয়েছে ঢাকার সংশ্লিষ্ট বিভাগের মন্ত্রণালয়ে।

শুক্রবার (৩ জানুয়ারি) সকালে সরেজমিন গিয়ে চাষিদের সাথে কথা বলে জানা যায়, টইটং খালের উপর কৃত্রিম মাটির বাঁধ তৈরি করে পেকুয়ার দুটি ইউনিয়নের বিপুল জমিতে বোরো চাষ করা হয়। ২০০৫ সালে টইটং খালের উপর স্থাপিত হয় রাবারড্যাম। সাগরের লোনা পানি আটকিয়ে মিঠা পানির উৎস তৈরি করতে মুলত এ রাবারড্যাম নির্মিত হয়। ২০১১ সালে সরকারি কর্তৃপক্ষ রাবারড্যামের দায়িত্বভার কৃষকদের সমন্বিত উদ্যোগে গঠিত টইটং সোনাইছড়ি পানি ব্যবস্থাপনা সমিতির ওপর ন্যস্ত করে। তারা আরো জানান, ২০২২ সালের দিকে কারিগরি বিচ্যুতির কারণে নদীর তলদেশে রাবারড্যাম ছিদ্র হয়। ফলে বোরো চাষে অনিশ্চয়তা দেখা দেয়। কৃষি উৎপাদন স্বাভাবিক রাখতে ওই বছর থেকে সরকার মাটির বাঁধ তৈরি করছে খালে। ২০২৩ সাল থেকে সরকার সংশ্লিষ্ট দপ্তরের মাধ্যমে বাঁধ নির্মাণের জন্য অর্থ বরাদ্দ দিচ্ছে।

এদিকে চলতি মৌসুমে বোরো চাষ শুরু হবে। কৃষক বীজতলা তৈরি করছে। কিন্তু টইটং খালে রাবারড্যাম অংশে এখনো নির্মিত হয়নি মাটির বাঁধ। স্থানীয় কৃষক ও স্কিম মালিক নুরুল ইসলাম ও আহসান হাবিব বলেন, দ্রুত সময়ে খালে মাটির বাঁধ দেয়া না হলে টইটংয়ের হিরাবনিয়া, পশ্চিম সোনাইছড়ি, নাপিতখালী, বড় পাড়া, মিত্যান্তঘোনা, শের আলী মাস্টার পাড়া, সোনাইয়াকাটা, পন্ডিত পাড়া, মিয়াজিরঘোনা, ধনিয়াকাটা, ভেলোয়ার পাড়া, বারবাকিয়া ইউনিয়নের নয়াকাটা, নোয়াখালী পাড়া, আন্নর আলী পাড়া, কাদিমাকাটাসহ বিপুল অংশে বোরো চাষ অনিশ্চিত থাকবে। প্রায় আড়াই হাজার একর জমিতে বোরো চাষ হবেনা। এ ব্যাপারে টইটং সোনাইছড়ি পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতি লি.এর সভাপতি ডাঃ নুরুল কবির বলেন, আমরা দুঃচিন্তায় আছি। খুব দ্রুত সময়ে খালে মাটির বাঁধ দেয়া না হলে ৮০ হাজার মানুষ খাদ্য নিরাপত্তা ঝুঁকির মধ্যে থাকবে। ব্যাহত হবে আড়াই থেকে তিন হাজার একর জমির কৃষিসহ শীতকালীন শাক সবজির আবাদ। আমরা বরাদ্দের জন্য আবেদন পাঠিয়েছি।

এ ব্যাপারে উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রকৌশলী আসিফ মাহমুদ বলেন, আমরা বরাদ্দের জন্য প্রস্তাবনা পাঠিয়েছি। বরাদ্দ পেলে কাজ শুরু হবে। পেকুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ মঈনুল হোসেন চৌধুরী বলেন, আমাকে একটি লিখিত আবেদন দেওয়া হয়েছে। এলজিইডিকে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলেছি। আশা করছি দ্রুত সময়ে বাঁধ নির্মিত হবে।