শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর দেশ চলছে পুলিশ বাহিনী ছাড়া। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ ও ব্যাপক প্রাণহানির জেরে ঢাকাসহ সারা দেশে অনেক থানায় হামলা ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। বিশেষ করে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর পুলিশ সদর দপ্তরসহ দেশের বহু থানা ও পুলিশের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় হামলা, ভাঙচুর হয়। আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয় অনেক থানা ভবনে। অস্ত্র ও মালামাল লুট করা হয়। অনেক পুলিশ সদস্যকে হত্যা করা হয় । এমন ঘটনা অব্যাহত থাকায় সারা দেশের থানাগুলো পুলিশশূন্য হয়ে পড়ে।
অনেক থানার সবকিছু পুড়ে গেছে। থানায় বসে কাজ করার মতো কোনো অবস্থা নেই। মামলার নথিবদ্ধ করার কম্পিউটার, পুলিশ সদস্যদের যানবাহন, অস্ত্র ও রসদ সামগ্রী, চেয়ার ও টেবিলসহ সবকিছু পুড়ে গেছে।
এরমধ্যে বৃহস্পতিবার রাতে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে ১৭ সদস্যের একটি উপদেষ্টা পরিষদ অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্বভার গ্রহণ করেছেন। নতুন এই সরকার দ্রুত আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন করবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন।
তবে পত্রিকান্তরে জানা গেছে, পুলিশ সদস্যদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে নিজ নিজ কর্মস্থলে যোগ দিতে আহ্বান জানানো হলেও দেশের থানাগুলো এখনো চালু করা যায়নি। নিজের নিরাপত্তা নিয়ে পুলিশ সদস্যরা এখনো চিন্তিত; তাই থানায় যোগ দিতে সাহস পাচ্ছেন না।
শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর পুলিশবিহীন দেশের সর্বত্র যেভাবে গত কয়েক দিন ধরে অরাজকতা চলছে, তা নিয়ে শঙ্কিত না হয়ে পারা যায় না। আন্দোলনকারীরা কিংবা রাজনৈতিক দলের নেতারা প্রতিশোধস্পৃহার বিরুদ্ধে মতামত দিলেও তাদের কথা মেনে চলা হচ্ছে না। দেশজুড়েই চলেছে তাণ্ডব। এরমধ্যে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) নতুন কমিশনার যত দ্রুত সম্ভব থানায় বসে কাজ শুরু করার জন্য পুলিশ সদস্যদের নির্দেশ দিয়েছেন। অন্তত চেয়ার–টেবিল বসিয়ে দ্রুত মানুষকে সেবা দেওয়া শুরু করতে বলেছেন তিনি। বৃহস্পতিবার এক সমন্বয় সভায় এ নির্দেশ দেন ঢাকা মেট্রোপলিটান পুলিশ কমিশনার। ডিএমপির প্রধান কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এ সভায় ঢাকার থানাগুলোর ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি), অপরাধ বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) ও ডিএমপি সদর দপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সভায় বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা মতামত তুলে ধরেন। তাতে কর্মকর্তারা বলেন, হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের পর রাজধানীর থানাগুলোর এখন যে অবস্থা, তাতে কার্যক্রম চালু করতে সময় লাগবে। চট্টগ্রাম মহানগরের অবস্থাও তাই।
পুলিশের বিভিন্ন পর্যায়ে কথা বলে সংবাদকর্মীরা জানাচ্ছেন, মাঠপর্যায়ে পুলিশ সদস্যদের মধ্যে নিরাপত্তাবোধ ফিরে না আসা পর্যন্ত তাঁদের কর্মস্থলে আনা একটা চ্যালেঞ্জ। এমতাবস্থায় রাজধানী ঢাকাসহ অন্যান্য এলাকার থানাগুলো শিগগির পুরোদমে চালু করা যাচ্ছে না।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ছাড়া একটি রাষ্ট্র চলতে পারে না। দেশ ও মানুষের সবকিছু রক্ষা তথা আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশ বাহিনীর বিকল্প নেই। একটি গোষ্ঠী খুব সুচতুরভাবে দেশের প্রয়োজনীয় এই বাহিনীর মনোবল ভেঙে দেওয়ার অপচেষ্টা করেছে। তারই অংশ হিসেবে থানায় থানায় আক্রমণ। এই পরিস্থিতির দ্রুত উন্নয়ন না ঘটালে সমাজে আরও বিশৃঙ্খলা দেখা দেবে। গতকালও নগরের চেরাগী পাহাড়, নন্দনকানন এলাকায় ডাকাতির চেষ্টা করা হয়েছে। জেলের অভ্যন্তরে গোলাগুলি হয়েছে। এতে জনমনে ভীতির সঞ্চার হয়েছে। এই ভীতি দূর করার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা নিতে হবে অন্তর্বর্তী সরকারকে। দেশ ও জনগণের স্বার্থে পুলিশের মনোবল জাগিয়ে তুলে তাদের কাজে ফিরিয়ে আনতে হবে।