সরেজমিন : পতেঙ্গা এলাকা
নিজস্ব প্রতিবেদক »
নগরের পতেঙ্গা এলাকায় চলছে লোকাল বাস। সরকারি নিষেধাজ্ঞা তোয়াক্কা না করে স্বাস্থ্যবিধি না মেনে চলছে এসব বাস। ভাড়াও নেওয়া হচ্ছে দ্বিগুণ। প্রশাসনের সামনেই চলছে এসব বাস। কিন্তু এতে প্রশাসন নীরব ভূমিকা পালন করছে।
সরেজমিনে গতকাল সকালে সিমেন্ট ক্রসিং এলাকায় দেখা যায়, কিছুক্ষণ পর পর একটি করে মিনিবাস এসে দাঁড়ায়। বাসভর্তি যাত্রী নিয়ে চলে যায় ১৫ নম্বর এয়ারপোর্ট এলাকায়। এসব বাস এয়ারপোর্ট থেকে নতুন রাস্তা হয়ে আবার ফিরে আসে সিমেন্ট ক্রসিং এলাকায়।
বাসের হেলপার বলছেন, বাসে উঠলেই ২০ টাকা। বাসের কাছে যেতেই দেখা যায় স্বাস্থ্যবিধি না মেনে গাদাগাদি করে নেওয়া হচ্ছে যাত্রী। বাসে উঠতেই দেখা যায়, ড্রাইভার মোবাইল ফোনালাপে ব্যস্ত। তার কথা শুনে বুঝা যাচ্ছিলো বাস চলাচল নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে মোবাইল ফোন কলেই। কিছুক্ষণের মধ্যে এক যুবকের আগমন। জানালার বাইরে হাত পাতলে ড্রাইভার তাকে টাকা দেয়। কত টাকা দিয়েছে এবং কেন দেওয়া হয়েছে টাকা- তা জানতে চাইলে বাসের ড্রাইভার নিরুত্তর থাকেন।
কে এই যুবক? জানতে পিছু নেওয়া হলো তার। পকেটে টাকা নিয়ে সোজা ট্রাফিক বক্সের সামনে হাজির এ যুবক। আড্ডারত ট্রাফিক পুলিশেরা তাকে সুমন নামে ডাকছিলেন। ট্রাফিক পুলিশের সাথে তার এমন কী সম্পর্ক যে তিনি তাদের সাথে খুব আড্ডা জমাচ্ছিলেন? এসময় ট্রাফিক পুলিশের সার্জেন্ট রেহানা পারভিনের সাথেও খুব কথা হচ্ছিল তার।
সকাল গড়িয়ে দুপুর হয়, গুনতে গিয়ে দেখা যায় ১০ টিরও বেশি বাস চলাচল করছে। গাড়িগুলোর রেজিস্ট্রেশন নম্বর হলো- চট্টমেট্রো-জ-১১-১৮৪৩, একই সিরিয়ালের ১৫৭৭, ২১৭৯, ১১১৮, ১৮৭৬, ২৮৫৯, ২৯৪৪, ১১৮৬, ১৮৫৫, ২১৪৫ ও ২১৫১।
কাদের প্রশ্রয়ে চলছে এসব গাড়ি? একজন ড্রাইভারের কাছে জানতে চাইলে বলে, ‘পেটের দায়ে চালাচ্ছি।’ এসময় আবার ট্রাফিক বক্সে ফিরে এসে দেখা যায় ট্রাফিক কনস্টেবল মালেক, সিদ্দিক, জহিরুল ও গোলাম মওলা একটি বেঞ্চে বসে আড্ডা দিচ্ছেন। লাল টিশার্ট পরা এক ছেলেকে দেখা যায় কনস্টেবল মালেককে কিছু টাকা হাতে গুজে দিতে। একটি মোটরচালিত ভ্যান যাত্রী তুলবে তাই টাকা দিয়ে নিতে হয়েছে পারমিশন।
সুপ্রভাত প্রতিবেদকের অবস্থান টের পাওয়ার পর কনস্টেবল সিদ্দিক সুমনকে বলেন, ‘আর কোন বাস যেন এদিকে না আসে।’ যেই কথা সেই কাজ সুমন ফোনে বলে দিল বাস এদিকে যেন না আসে।
এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম মহানগরী বাস-মিনিবাস সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম সুপ্রভাতকে বলেন, ‘এসব গাড়ি প্রশাসনের আশকারায় চলছে। গত ২০ এপ্রিল সুমন বাস থেকে টাকা তুলে ট্রাফিক পুলিশ শুক্কুরকে দেওয়ার সময় হাতেনাতে ধরে ফেলেছিলাম। কিন্তু সে সমঝোতার জন্য সুমন ও টিটু নামক তাদের দুই লাইনম্যন দিয়ে আমাকে টাকা দেওয়ার প্রস্তাব পাঠিয়েছিল। আমি রাজি হইনি। তবে এতেও কিছু হয়নি। এখনো চলছে বাস।’
তিনি আরও বলেন, ‘মালিক সমিতির সাথে বৈঠকে বলা হয়েছে ঈদের আগে বাস নামাবো না। কিন্তু আমার সামনে আমি এমন অনৈতিক কাজ কী করে সহ্য করবো।’
সার্জেন্ট রেহানা পারভিনের কাছে জানতে চাইলে তিনি এ ব্যাপারে কিছু জানেন না বলে জানান। তিনি সুপ্রভাতকে বলেন, ‘সিমেন্ট ক্রসিং এলাকায় আমার সামনে কোন বাস চলতে পারে না। গার্মেন্টস শ্রমিকদের বাস চলার পারমিশন আছে তাই এসব বাস চলে।’
সকাল থেকে অবস্থান করে যে চিত্র দেখা হয়েছে তা বর্ণনা করলে তিনি সুমনকে চিনেন না বলে জানান। উল্লেখ্য, সুমনের সাথে আলাপচারিতার প্রমাণ রয়েছে সুপ্রভাতের কাছে। তার অবস্থানকালেও এমন অনেক বাস ছেড়ে গেছে সুপ্রভাত টিমের সামনে।
উল্লেখ্য, চলমান লকডাউনে গণপরিবহন চলাচল নিষিদ্ধ। কিন্তু তারপরও সড়কে চলাচল করছে বাস।