সুপ্রভাত ডেস্ক »
অবসায়নের মুখে থাকা আর্থিক প্রতিষ্ঠান পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইনান্সিয়াল সার্ভিস লিমিটেডকে পুনরুজ্জীবনে যে বোর্ড গঠন হচ্ছে, তার প্রধান হিসেবে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী কামাল উল আলম আদালতের বিবেচনায় আছেন।
পি কে হালদারের অর্থ কেলেঙ্কারিতে গাড্ডায় পড়া পিপলস লিজিং পুনর্গঠন বা পুনরুজ্জীবিত করার নির্দেশনা চেয়ে দুই সপ্তাহ আগে ২০১ জন আমানতকারী আইনজীবী শামীম আহমেদ মেহেদীর মাধ্যমে আবেদন করেন।
আমানতকারীদের আবেদনে সব পক্ষের বক্তব্য শোনার পর বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকারের একক ভার্চুয়াল বেঞ্চ গত সোমবার অবসায়ন না করে আর্থিক প্রতিষ্ঠান পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইনান্সিয়াল সার্ভিস লিমিটেডকে (পিএলএফএসএল) পুনরুজ্জীবিত করার সিদ্ধান্ত দেয় হাই কোর্ট। খবর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের।
সেদিন মৌখিক আদেশে আদালত বলে, এই বোর্ডের চেয়ারম্যান হবেন হাই কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত একজন বিচারপতি অথবা একজন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী। আর বোর্ডে একজন চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট, একজন আইনজ্ঞ, একজন উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তা ও আমানতকারীদের পক্ষ থেকে একজন প্রতিনিধি থাকবেন।
জানতে চাইলে আমানতকারীদের আইনজীবী আহসানুল করিম বলেন, “সম্ভবত বোর্ড চেয়ারম্যান হতে পারেন ব্যারিস্টার কামাল উল আলম সাহেব। উনার নাম বিবেচনার মধ্যে আছে, যদি তিনি রাজি হন। এছাড়া তালিকায় আর কারও নাম আমি শুনিনি।”
পিপলস লিজিংয়ের বোর্ডের চেয়ারম্যান হিসেবে নিজের নাম আসার কথা অস্বীকার না করলেও আইনজীবী কামাল উল আলম বলেন, “আদালতের আদেশ না হওয়া পর্যন্ত কিছু বলতে পারছি না।”
তবে এই পুনর্গঠন বোর্ড গঠনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট আদালতের একটি সূত্র বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বোর্ডের চেয়ারম্যান হিসেবে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী কামাল উল আলমের নাম প্রস্তাব করা হয়েছে এবং তাতে তিনি সম্মতিও দিয়েছেন।”
এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রশান্ত কুমার হালদার (পিকে হালদার) নানা কৌশলে নামে-বেনামে অসংখ্য কোম্পানি খুলে শেয়ারবাজার থেকে বিপুল পরিমাণ শেয়ার কেনেন এবং ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে ও পরে নিজের আত্মীয়, বন্ধু ও সাবেক সহকর্মীসহ বিভিন্ন ব্যক্তিকে পর্ষদে বসিয়ে চারটি ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণ নেন। ওই চার কোম্পানির মধ্যে পিপলস লিজিংও একটি।
পরে গ্রাহকদের কোটি কোটি টাকা লোপাট করে তিনি বিদেশে পালিয়ে যান বলে ২০২০ সালের শুরুতে খবর আসে। তাকে গ্রেপ্তারে ইন্টারপোলের মাধ্যমে জারি করা হয় রেড নোটিস।
১৯৯৭ সালের ২৪ নভেম্বর আর্থিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে পিপলস লিজিংকে অনুমোদন দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। এরপর থেকে প্রতিষ্ঠানটি গ্রাহকের কাছ থেকে মেয়াদি আমানত ও বিভিন্ন ব্যাংক-আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে টাকা ধার করে ঋণ কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিল।
২০১৮ সালের ডিসেম্বরে প্রতিষ্ঠানটির আমানত ছিল ২ হাজার ৩৬ কোটি টাকা। আর ঋণের পরিমাণ ছিল ১ হাজার ১৩১ কোটি টাকা, এর মধ্যে খেলাপিই ৭৪৮ কোটি টাকা। অর্থাৎ খেলাপি ঋণের হার ৬৬ শতাংশ।
২০১৫ সাল থেকে ধারাবাহিকভাবে লোকসান দেয় ওই কোম্পানি। খেলাপি প্রতিষ্ঠান থেকে টাকা আদায় করতে না পারায় আমানতকারীদের টাকাও ফেরত দিতে পারেনি তারা।
২০১৯ সালের ১৪ জুলাই পিপলস লিজিং অবসায়নের জন্য আদালতে মামলা করে বাংলাদেশ ব্যাংক। ওই দিনই মামলার শুনানি শেষে অবসায়নের পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ দেয় আদালত।
এছাড়া অবসায়ন কার্যক্রম পরিচালনার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বাজার বিভাগের উপ-মহাব্যবস্থাপক পদমর্যাদার একজনকে অবসায়ক নিয়োগ দিতে বলা হয়।
পরে সাময়িক অবসায়ক হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বাজার বিভাগের উপমহাব্যবস্থাপক আসাদুজ্জামান খানকে নিয়োগ দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
এদিকে আমনতকারীরা আদালতের দারস্থ হলে পিএলএফএসএল থেকে ৫ লাখ টাকার বেশি টাকা ঋণ নিয়ে খেলাপি হয়েছেন, এমন ২৮৬ জন ঋণ গ্রহীতাকে গত ২১ জানুয়ারি তলব করে হাই কোর্ট।
সাময়িক অবাসায়ক আসাদুজ্জামান খানের দেওয়া তালিকা দেখার পর সেদিন এ আদেশ দেয় উচ্চ আদালত।
সেদিনের আদেশে আদালত ২৮৬ জনকে দুই ভাগে হাজির হতে দিন নির্ধারণ করে দেয়। তাদের মধ্যে ১২২ ঋণ খেলাপি নির্ধারিত তারিখে আদালতে হাজির হননি।
এদিকে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অনিয়ম, দুর্নীতি বন্ধে সমন্বিতভাবে কীভাবে কাজ করা যায়, সে বিষয়ে গত ৯ মার্চ বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) চেয়ারম্যানের বক্তব্য শোনে আদালত।
তাদের বক্তব্য শোনার পর তলবে হাজির না হওয়া ১২২ জনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়।
ওই আদেশে বলা হয়, পরবর্তী আদেশ না হওয়া পর্যন্ত তারা যেন দেশত্যাগ করতে না পারেন, সেজন্য সংশ্লিষ্ট আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে সতর্ক এবং সজাগ থাকতে নির্দেশ দেওয়া হল।
আর পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফিনান্সিয়াল সার্ভিস লিমিটেডের (পিএলএফএসএল) সাময়িক অবাসায়ক (প্রবেশনাল লিক্যুইডেটর) মো. আসাদুজ্জামানকে ওই ১২২ ব্যক্তি বা সত্তার বর্তমান ঠিকানা সরবরাহ করতে নির্দেশ দেওয়া হয়।
পাশাপাশি আইন প্রয়োগকারী সংস্থা এবং রাষ্ট্রকে প্রয়োজনীয় সব ধরনের সহযোগিতা দিতে বলা হয় তাকে।