সুপ্রভাত ডেস্ক »
সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে (পিআর) নির্বাচনের বিষয়ে গণভোট করার দায়িত্ব রাজনৈতিক দলগুলোকে কে দিয়েছে- এ প্রশ্ন তুলেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।
আলোচনা সভায় আমীর খসরু বলেন, পিআরের জন্য আমাকে গণভোটে যেতে হবে কেন? আমাদের তো… প্রত্যেকটি দলের অনেকগুলো ইস্যু আছে, যেগুলো ঐকমত্য হয়নি। তাহলে যদি গণভোটের প্রক্রিয়ায় আপনি যেতে চান, আগামী দুই বছর যাবৎ আপনাকে গণভোটই করতে হবে। ফার্স্ট অব অল এই দায়িত্ব আমাদেরকে কে দিয়েছে? আমাদেরকে জনগণ গণভোট করার এই দায়িত্ব দেয়নি।
তিনি বলেন, গত ১৪ মাস ধরে একটা সরকার আছে, যে সরকার জনগণের নির্বাচিত কোনো সরকার না। তাই আগে একটি নির্বাচিত সরকার, নির্বাচিত সংসদ গঠন করতে হবে… তারপর প্রত্যেকটি দলের অধিকার আছে তাদের বিষয়গুলো নিয়ে জনমত সৃষ্টি করার, জনগণের কাছে যাওয়ার। আমাদের মনে রাখতে হবে যে, ডেমোক্রেসি ইজ এ কারেকশন প্রসেস।
‘যেকোনো কিছুর আগে জনরায় দরকার’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এ সদস্য বলেন, মান্না ভাই (মাহমুদুর রহমান মান্না) বললেন, জনগণ কিছুই জানে না পিআর সম্বন্ধে। যারা পিআরের পক্ষে এটা তাদের দায়িত্ব হবে তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে এনে জনগণের কাছে নিয়ে জনগণের ম্যান্ডেট নিতে হবে। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনে যেটা হয়েছে অর্থাৎ যতটুকু ঐকমত্য হবে আমরা সে নিয়ে এগোব। আর যেটাতে ঐকমত্য হবে না সেটা ক্লোজ করার দরকার নাই… সেটা প্রত্যেকটি দলকে জনগণের কাছে নিয়ে যেতে হবে, ম্যান্ডেট নিতে হবে।
আমীর খসরু বলেন, এবার ঐকমত্য যেসব বিষয়ে হয়েছে সেটারও তো ম্যান্ডেট লাগবে… বাংলাদেশের জনগণ আমাদের ২০/৩০টা রাজনৈতিক দলকে কোনো দায়িত্ব তো দেয় নাই যে আপনারা বসে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ ঠিক করবেন। হু আর ইউ? বাংলাদেশের মানুষ কি এই কমিশনকে বা ২০/৩০টা রাজনৈতিক দলকে দায়িত্ব দিয়েছে যে, আগামীর বাংলাদেশ কেমন হবে, বাংলাদেশের গণতন্ত্র কী হবে, গণতন্ত্রের প্রক্রিয়া কীভাবে হবে… এটা তো জনগণ দেয় নাই।
তিনি বলেন, ডেমোক্রেসি হচ্ছে কনভারসেশন, ডায়ালগ, ইন্টার্যাকশন ইজ দ্য প্রসেস… ওটার মাধ্যমে এই কাজটা আমরা করছি। সুতরাং ওই লিমিটেশনটা আমাদের বুঝতে হবে যে, এখানে কিন্তু সব জায়গায় ঐকমত্য হবে না… আমরা তো বাকশাল করছি না। আমরা সবাই আলোচনা করছি, আমরা ভিন্ন ভিন্ন দল করছি।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এ সদস্য বলেন, সুতরাং এই ঐকমত্য কমিশন যে সবকিছু ডিসাইড করে দিতে পারবে, এটা বোঝার কোনো কারণ নাই। যতটুকু ঐকমত্য হবে ততটুকু ক্লোজ করে বাকিটা নিয়ে আমরা জনগণের কাছে যাব ম্যান্ডেট নিতে। এটা ছাড়া তো হবে না।
‘পিআর পদ্ধতিতে জনগণের কোনো সুবিধা নেই’
পিআর পদ্ধতিতে দলীয় কিছু আসন বৃদ্ধি ছাড়া জনগণের জন্য কোনো সুবিধা নেই বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান।
তিনি বলেন, আমি কেন পিআর চাচ্ছি? একটু যদি আমরা খোলাখুলি বলি, পিআরটা চাচ্ছি এই কারণে যে, পার্লামেন্টে কিছু বেশি সিট (আসন) পাব, এর বাইরে কিছু নাই। এখন আমি পার্লামেন্টে অধিকতর ক্ষমতাবান হব, অধিক সিট পাব সেই কারণে মানুষের মৌলিক যে দাবি সেটাকে আমি অগ্রাহ্য করব… এটা তো গণতন্ত্রের ভাষা নয়। কাজেই সেদিক থেকে এটা সেলফ কন্ট্রাডিক্টরি।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এ সদস্য বলেন, আসুন, আমরা মানুষের কল্যাণে সবাই ঐক্যবদ্ধ থেকে কাজ করি, এখানে খোলা মনে কাজ করতে হবে।
আবদুল মঈন খান বলেন, দেখুন, পিআর করার অর্থটা কী? পিআর হচ্ছে আপনি ব্যক্তির যে অবস্থান সেটাকে দুর্বল করে দলের অবস্থানকে আরও শক্তিশালী করে দিচ্ছেন অর্থাৎ মানুষ ভোট দেবে দলকে এবং দল নির্ধারণ করে দেবে কে প্রার্থী হবেন।
কসমস গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এনায়েতউল্লাহ খানের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় অংশ নেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদ, এবি পার্টির মজিবুর রহমান মঞ্জু, গণসংহতি আন্দোলনের আবুল হাসান রুবেল, গণঅধিকারের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান, নির্বাচন কমিশনের সাবেক সচিব স ম জাকারিয়া প্রমুখ।