সুপ্রভাত ডেস্ক »
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, পিআর পদ্ধতির দাবিতে আন্দোলনের লক্ষ্যই হচ্ছে নির্বাচন বিলম্বিত করা, যা জনগণ গ্রহণ করবে না।
রোববার (১২ অক্টোবর) দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি কার্যালয়ের মিলনায়তনে এক আলোচনা সভায় এ কথা তিনি। ন্যাশনাল পিপলস পার্টির উদ্যোগে ডেমোক্র্যাটিক লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইফুদ্দিন আহমেদ মনির দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে এ আলোচনা সভা হয়।
তিনি বলেন, কয়েকটি রাজনৈতিক দল পিআর পদ্ধতি নিয়ে কথা বলছে এবং যেটার জন্য তারা আন্দোলন করছে। এর লক্ষ্য একটাই, সেটি হচ্ছে নির্বাচন বিলম্বিত করা, জনগণের ক্ষমতা জনগণের হাতে ফিরিয়ে দেওয়ার যে প্রক্রিয়া সেই প্রক্রিয়াকে বিলম্বিত করা।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, পিআর পদ্ধতি এই দেশের মানুষ গ্রহণ করবে না। আমাদের দলের পক্ষ থেকে তো আমরা স্পষ্ট করে বলেছি। এখন বলছি, জনগণই এই পদ্ধতি গ্রহণ করবে না, চাপিয়ে দেওয়া কোনো কিছু এদেশের মানুষ গ্রহণ করবে না।
তিনি বলেন, একটা কথা খুব স্পষ্ট করে বলতে চাই। আমরা খুব দ্রুত অর্থাৎ যে কমিটমেন্টটা আছে এই সরকারের অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস সাহেবের, ২৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যেই এই নির্বাচন হবে। আমরা সেটাই দেখতে চাই। জনগণ নির্বাচন দেখতে চায়। সেই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ফিরে যেতে চায় এবং গণতন্ত্রের মধ্য দিয়েই জনগণ তাদের আশা আকাঙ্ক্ষাগুলো পূরণ করতে চায়।
নির্বাচন নিয়ে আশাবাদ
মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা জানি যে নির্বাচন হবে। সেই নির্বাচনে যেকোন দল জয়ী হতে পারে জনগণের ইচ্ছার ওপর। কিন্তু সেই দলকেই জনগণ বেছে নেবে। যে দল পরীক্ষিত অতীতে যারা পরীক্ষা দিয়েছে অর্থাৎ সরকারে ছিল কাজ করেছে। যেই দল মানুষকে আশার আলো দেখিয়েছে, যেই দল অন্ধকার থেকে আলোতে টেনে নিয়ে এসেছে।
বিএনপির এই সিনিয়র নেতা বলেন, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানই এই দেশে প্রথম সংবিধানে বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম সংযোজন করেছিলেন, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান প্রথম এই দেশের সংবিধানে আল্লাহর ওপর অবিচল আস্থা ও বিশ্বাস এই কথাটি রেখেছিলেন। এখন কিছু দল সেগুলোকে বিকৃত করে বিভিন্নভাবে এই বিএনপিকে চিত্রায়িত করার চেষ্টা করছে।
তিনি বলেন, যারা বয়স কম তারা জানে না, যাদের বয়স একটু বেশি তারা দেখেছেন ১৯৭৫ সাল নভেম্বর কী অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে শহীদ প্রেসিডেন্ট জি রহমানের নেতৃত্বে এই দেশের মানুষ সেই ভারতীয় আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে বেরিয়ে এসে সম্পূর্ণভাবে নিজেদের পায়ে দাঁড়ানোর জন্য নতুন করে তখন স্বনির্ভর বাংলাদেশ তৈরি করার কাজে ঝাপিয়ে পড়েছিল।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ঠিক একইভাবে আজকে আবার আমরা সবাই এক হয়েছি। এক হয়েছি আমাদের নেতা তারেক রহমানের নেতৃত্বে, আমরা অবশ্যই বাংলাদেশকে আবার একটা স্বনির্ভর, আত্মমর্যাদা সম্পন্ন একটি বাংলাদেশ, যে বাংলাদেশ বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে, সেই বাংলাদেশ নির্মাণ করতে চাই।
অনেক ষড়যন্ত্র
মির্জা ফখরুল বলেন, অনেক ষড়যন্ত্র আছে, চক্রান্ত আছে। সমস্ত ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত পরাজিত করার শক্তি বাংলাদেশের মানুষের আছে।
তিনি আরও বলেন, এই সামনের যে পরীক্ষা সেই পরীক্ষা কঠিন পরীক্ষা। প্রতিদিন আপনাদের এই ইউটিউব, টেলিভিশন, সোশ্যাল মিডিয়ায় বিভিন্ন রকম সত্য-মিথ্যা অপপ্রচার চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
একাত্তর মুছে ফেলা যাবে না
মির্জা ফখরুল বলেন, কিছুসংখ্যক মানুষ চেষ্টা করে আমাদের ১৯৭১ সালের ইতিহাসকে ভুলিয়ে দিতে। এটাও সবসময় মাথায় রাখতে হবে যে, একাত্তরে যুদ্ধ হয়েছিল বলেই আমরা স্বাধীন হয়েছিলাম, স্বাধীন হয়েছিলাম বলেই আজকে আমরা নতুন রাষ্ট্রের নতুন চিন্তা করতে পারছি, স্বাধীন হয়েছিলাম বলেই কিন্তু আমরা আজকে এই বাংলাদেশকে বাংলাদেশের মানুষের অবস্থার পরিবর্তন করার যে সংগ্রাম সেই সংগ্রামে অংশ নিতে পারছি।
তিনি বলেন, আমরা লড়াই করেছি, যুদ্ধ করেছি। আমাদের মধ্যে এখানে অনেকে আছেন যারা সেই যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন, আমাদের মধ্যে অনেকে আছেন যারা পরবর্তীকালে গণতান্ত্রিক আন্দোলনগুলোতে অংশ নিয়েছেন, এই চব্বিশে অংশ নিয়েছেন। আমরা সবাই এই যুদ্ধগুলোতে অংশ নিয়েছি। শুধু একটামাত্র লক্ষ্য যে, আমরা বাংলাদেশকে সত্যিকার অর্থেই একটি গণতান্ত্রিক সমৃদ্ধ একটা বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। সেই কথাটি মাথায় রেখে আমরা যেন সামনের দিকে এগিয়ে যাই।
আলাউদ্দিনের চেরাগ নয়
মির্জা ফখরুল বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বয়স এক বছর ৪ মাস হয়েছে। এই ১৪ মাসে রাতারাতি আলাউদ্দিনের চেরাগের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশকে একটা খুব সুন্দর বানিয়ে ফেলবে এই আশা জনগণ করে না এই সরকারের কাছ থেকে। কিন্তু প্রক্রিয়াটা শুরুটা চায়… চায় যে সেই প্রক্রিয়া শুরু হোক যে প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে আমরা একটা নতুন বাংলাদেশ দেখতে পাবো।
তিনি বলেন, আপনারা ইতোমধ্যে দেখেছেন, যে আমাদের নেতা তারেক রহমান সাহেব তিনি তার একটা ইন্টারভিউ একটা সাক্ষাৎকার বিবিসিতে। সেখানে তিনি এই প্রশ্নগুলো তুলে ধরেছেন এবং কীভাবে তিনি দেশের সমস্যার সমাধান করতে চান সেই সমস্যাগুলো তিনি তুলে ধরেছে… সেই কথাগুলো তিনি বলেছেন, ফিন্যাশনাল টাইমসেও তিনি একইভাবে কথাগুলো বলেছেন।
বেকার সমস্যাসহ বিভিন্ন ইস্যুতে বিদ্যমান সমস্যা সমাধানে বিএনপি ইতোমধ্যে কমিটি গঠন করে কাজ শুরু করেছে এবং ‘অনেক কাজ সম্পন্ন’ করে রাখা হয়েছে বলেও জানান বিএনপি মহাসচিব।
ন্যাশনাল পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান ফরিদুজ্জামান ফরহাদের সভাপতিত্বে ও মহাসচিব মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তফার সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় জাগপার খন্দকার লুফুর রহমান, গণদলের এটিএম গোলাম মাওলা চৌধুরী, সাম্যবাদী সৈয়দ নুরুল ইসলাম, বাংলাদেশ ন্যাপের এমএন শাওন সাদিকী প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।