টানা কয়েকদিন বৃষ্টি হলেই পাহাড়ি এলাকায় আতঙ্ক নেমে আসে পাহাড় ধসের আশঙ্কায়। চট্টগ্রাম নগর থেকে শুরু করে তিন পার্বত্য জেলা ও কক্সবাজার জেলায় পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসকারীরা এক নিদারুণ আতঙ্ক নিয়ে সময় কাটান।
কয়েকদিন ধরে বৃষ্টির হচ্ছে। এরইমধ্যে পাহাড় ধসের সংবাদ পাওয়া যাচ্ছে। তাতে মৃত্যুর ঘটনাও ঘটছে। কক্সবাজারের পেকুয়ায় পাহাড় ধসে এক শিশুসহ ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। রোববার (১৮ আগস্ট) ভোর রাত ৪টার দিকে পেকুয়া উপজেলার শিলখালী ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের জারুল বুনিয়া সেগুনবাগিচা এলাকায় পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটে। পেকুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো: সাইফুল ইসলাম জয় জানিয়েছেন, শনিবার রাতভর ভারী বৃষ্টি হয়েছে। এ কারণে রোববার ভোর রাত ৪টার দিকে শিলখালী ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের জারুল বুনিয়া সেগুনবাগিচা এলাকায় পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটে। পাহাড় ধসে একটি ঘর মাটির নীচে চাপা পড়ে একই পরিবারের ১ নারী ও ২ শিশু কন্যার মৃত্যু হয়।
সোমবার (১৯ আগস্ট) সকালেও উপজেলার কালারমার ছড়া ইউনিয়নের ঝাপুয়া এলাকায় পাহাড় ধসে মারা গেছেন একজন।
আব্দুস শুক্কুর (৬০) নামে মৃতের মেয়ে মোস্তফা খানম (২০) এসময় গুরুতর আহত হয়েছেন। মহেশখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার বরাতে জানা গেছে, প্রবল বর্ষণের সময় পাহাড় ভেঙে মাটি এসে বাড়ির ভেতর চাপা পড়ে বাবা ও মেয়ে। এতে ঘটনাস্থলে বাবা আব্দুস শুক্কুর নিহত হন।
আমরা জানি না আগামীতে এমন ঘটনা আরও কত ঘটতে পারে। কারণ, পাহাড় ধসে মৃত্যুর ঘটনা বাড়লেও কিছুতেই থামছে না পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাস। কক্সবাজারে বেড়েছে ভূমিধসের ঘটনা। সুউচ্চ পাহাড়গুলো বৃক্ষশূন্য করে পাহাড় কেটে তৈরি করা হয়েছে অবৈধ ঘর। সেখানে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছে মানুষ। পরিবেশবাদীরা অভিযোগ করছেন, প্রভাবশালীরা পাহাড়গুলো অবৈধ দখল করে এর পাদদেশে ও চূড়ায় অবৈধভাবে ঝুঁকিপূর্ণ বসতি গড়ে তুলেছেন। ভাড়া ও দখলস্বত্ব কেনাবেচার মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছেন তারা। তাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে কক্সবাজারের বিভিন্ন পাহাড়ে ঝুঁকিতে বসবাস করছে প্রায় ৩ লাখ মানুষ।
বিশেষজ্ঞ ও ভূতত্ববিদেরা জানান, এই বেল্টের পাহাড়ের ভূপ্রকৃতি ও গঠন হলো বালি আর কাদামাটির মিশ্রণ। পাহাড়ের উপরিভাগে মোটা দানার বালির বিশাল স্তর, তার নিম্নভাগে রয়েছে কাদামাটির স্তর। এভাবে একের পর এক কাদামাটি ও বালির স্তরের ওপর দাঁড়িয়ে থাকা পাহাড়গুলোতে ভূমিক্ষয়ের মাধ্যমে ফাটল সৃষ্টি হয়। ভারী বৃষ্টিতে মাটি-বালির স্তর নরম হয়ে পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটে। এছাড়া পাহাড় ধসের অন্যতম কারণের মধ্যে রয়েছে নির্বিচারে বৃক্ষনিধন।
এসব বারবার বলা হলেও কোথাও থেমে নেই পাহাড়কাটা। ফলে থামছে না পাহাড় ধসের ঘটনা। এ বিপর্যয় থেকে রক্ষা পেতে হলে ফলপ্রসূ উদ্যোগ নিতে হবে প্রশাসনকে।