পাহাড় কাটা বন্ধ হবে কবে

গতকাল ছিল বিশ্ব পরিবেশ দিবস। এবারের প্রতিপাদ্য বিষয় ছিল, ‘করব ভূমি পুনরুদ্ধার, রুখব মরুময়তা, অর্জন করতে হবে মোদের খরা সহনশীলতা’। প্রতিপাদ্য যাই থাক বাস্তবে তার প্রতিফলন ঘটে খুব কম। পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার অন্যতম কারণ হলো পাহাড় কাটা অথচ প্রতিবছর যে হারে পাহাড় নিধন চলছে তাতে চট্টগ্রাম শহরে পাহাড় কাটা এলাকা বেড়ে এখন দুই হাজার হেক্টর হয়েছে বলে মনে করেন গবেষণা-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। তবে ২০১২ সালের পর আর গবেষণা হয়নি বলে পাহাড় কাটা এলাকার প্রকৃত তথ্য জানা যায়নি। ২০০০ সালে চট্টগ্রামে পাহাড় কাটা এলাকার পরিমাণ ছিল ৬৭৯ হেক্টর। আর ২০১২ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ১ হাজার ২৯৫ হেক্টরে। পাহাড় কাটা নিয়ে ‘হিল কাটিং ইন অ্যারাউন্ড চিটাগং সিটি’ নামের একটি গবেষণায় গুগল আর্থের ছবি বিশ্লেষণ করে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
আবাসন ও অবকাঠামোগত উন্নয়নের পেটে ঢুকছে চট্টগ্রামের পাহাড়। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, ৪৫ বছরে শহরের সবচেয়ে বেশি পাহাড় নিধন হয়েছে বায়েজিদ থানা ও পাহাড়তলী বা আকবরশাহ এলাকায়। এখনো আকবরশাহ ও বায়েজিদ এলাকায় পাহাড় কাটা চলছে। আকবরশাহ এলাকায় এখন পাহাড় কাটার মূল হোতা আওয়ামী লীগের নেতা ও ওয়ার্ড কাউন্সিলর জহুরুল হক ওরফে জসিম। পাহাড় কাটার অভিযোগে তাঁর বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে। এ ছাড়া বায়েজিদ থানা এলাকার রউফাবাদ, অক্সিজেন, ষোলশহর, আরেফিন নগর, নাসিরাবাদ, পলিটেকনিক, কূলগাঁও, জালালাবাদ এলাকায় পাহাড় কাটা চলছে। অথচ ২০০৭ সালে চট্টগ্রামে ভয়াবহ পাহাড়ধসের পর থেকে প্রশাসন বারবার বলে আসছে, বেদখল হওয়া পাহাড় উদ্ধার করা হবে। বাস্তবে দিন দিন পাহাড় কাটা ও দখলের পরিমাণ বেড়েই চলেছে। গত এক বছরে পাহাড় কাটার অভিযোগে পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রামে মামলা করেছে ১২টি। তার আগের বছর মামলা হয় ২২টি। ২০ বছরে মামলা হয়েছে শতাধিক। আবার অধিদপ্তরের অগোচরে রয়ে যায় অনেক পাহাড় কাটার ঘটনা। বায়েজিদ ও আকবরশাহ এলাকায় বেশি পাহাড় কাটার ঘটনা ঘটছে। প্রায় ৮০ শতাংশ মামলা হয়েছে এ দুটি এলাকায়।
আজ পরিবেশ নানাভাবে বিপর্যস্ত। বন ধ্বংস, অবৈধভাবে বন্যপ্রাণি শিকার, অপরিকল্পিত নগরায়ণ, শিল্পকারখানার দূষণ ইত্যাদিকে দায়ী করা হচ্ছে পরিবেশ বিপর্যয়ের প্রধান কারণ হিসেবে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব।