পাহাড় কাটা বন্ধে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানে সংষ্কার প্রয়োজন

স্থপতি জেরিনা হোসেন

নগর পরিকল্পনাবিদ

সুপ্রভাত : পরিবেশ সুরক্ষা এবং নান্দনিকতা বজায় রাখা সব মিলিয়ে পাহাড় কাটার ব্যাপারে সোচ্চার নগরপরিকল্পনাবিদ, পরিবেশবাদী, সচেতনমহল ও গণমাধ্যম। আলোচনা, সামাজিক আন্দোলন-মানবন্ধন সবই হয়েছে ইতিমধ্যে। কিন্তু এরপরেও বন্ধ হচ্ছে না এ অপতৎপরতা। কেনো?

জেরিনা হোসেন : চট্টগ্রামের সৌন্দর্য বিধানের কথা বিবেচনা করলেও এই পাহাড়গুলো রক্ষা করা প্রয়োজন। কিন্তু এখানেও তো নগর ব্যবস্থাপাসহ সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রগুলোতে দুর্নীতি বিরাজ করছে। আবার জমিকেনার বেলায় কিছু নিয়মকানুন অনুসরণ করতে হয়। ধরুন, পাহাড়ি এলাকায় দুই কাঠা, তিন কাঠা, চার কাঠা করে কেউ যদি যে যার মতো জমি কেনে অথবা প্লট নির্মাণ করে বাড়িঘর নির্মাণ করে সেটা তো হয় না। পাহাড়ের জমিরও একটা বিন্যাস রয়েছে, একটা গঠন রয়েছে। সেই হিসেবে পাহাড় সুরক্ষার বিষয়টি বজায় রেখে নির্দিষ্ট নিয়মে ভবন তৈরি হতে পারে।  এর একটা নির্দেশনা রয়েছে। আবার পাহাড় আছে বলেই আমি ডেভেলাপ (উন্নয়ন) করবো না তা-ও হতে পারে না। নির্দিষ্ট নিয়মে জমির বন্টন হতে হবে, কোথাও তিন কাঠা, কোথাও পাঁচ কাঠা করে এলোমেলোভাবে প্লট তৈরি হলে তো চলবে না। কিন্তু আমাদের এখানে কোন্ এলাকায় জমি  কেনাবেচা, বন্টনে কীভাবে কতটুকু বিভাজন,  খ–বিখ-  হতে  পারবে কি পারবে না এর কোনো নিষেধাজ্ঞা, বিধিবিধান সংক্রান্ত কোনো আইন নাই। এ ধরনের কোনো কন্ট্রোল (নিয়ন্ত্রণ) না থাকায় কৃষি জমি বলেন, আর পাহাড়ি জমি বলেন এসব সুরক্ষায় প্রতিবন্ধকতা তৈরি হচ্ছে।

সুপ্রভাত : এছাড়া আর কোন কোন দিকে সমস্যা রয়েছে বলে মনে করেন

জেরিনা হোসেন: নগরায়নের ক্ষেত্রে আমাদের প্রাতিষ্ঠানিক, আইনি  বিধান, পরিকল্পনা এ সবকিছুর  তদারকি বিষয়ে কে কোথাও কীভাবে দায়িত্ব পালন করবে, না করবে সেটা কে দেখছে, আরবান গভর্নেন্স (নগর শাসন) কোথায় ? এগুলো দেখছে কারা?

সুপ্রভাত : আমাদের নগর উন্নয়ন তদারকি প্রতিষ্ঠানগুলো (সিডিএ, সিটি কর্পোরেশন, পরিবেশ অধিদপ্তর, সিএমপি প্রভৃতি প্রতিষ্ঠান) কি এক্ষেত্রে সঠিকভাবে, সমন্বিতভাবে দায়িত্ব পালন করছে না ?

জেরিনা হোসেন: তারা  যে যার  মতো করে সীমিতভাবে তাদের কাজ করে, জনবল সংকটের দোহাই দেয়। এ অজুহাত গ্রহণযোগ্য নয়, এখানে করাপশান (দুর্নীতি) জড়িত, অনেক কিছু জড়িত। একজনের ওপর আরেকজন দায় চাপাচ্ছে। এখানে কে কাকে আটকাবে সে অবস্থায়ই চলছে। সবকিছুৃই তো সিস্টেমে (সুনির্দিষ্ট ব্যবস্থাপনা) চলতে হবে। কিন্তু এখানে কোনো নিয়ন্ত্রণ নাই। ধরুন, একজন সচেতন নাগরিক পাহাড় কাটার ঘটনাটি কাকে জানালে প্রতিকার মিলবে?

প্রত্যেক এলাকার জন্যে কর্পোরেশনের একজন ওয়ার্ড কাউন্সিলর থাকেন। তারা সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করলেও তো এসব ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটার কথা নয়।

সুপ্রভাত : তাহলে পাহাড় কাটা বন্ধে কীভাবে কার্যকর প্রতিকার মিলতে পারে?

স্থপতি জেরিন : এখন এসব সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানে সংষ্কার দরকার, জবাবদিহিতার সংস্কৃতি গড়ে তোলা দরকার। প্রতিটি প্রতিষ্ঠান চলছে  যে যার মতো করে, জবাবদিহি ছাড়া।  বিগত সময়ে দেখা গেছে, নগর উন্নয়নে নিজের মতো করা কোনো সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা হলো কোনো ধরনের জনসংস্পৃক্ততা, জনমত, বিশেষজ্ঞ মতামত বিবেচনা ছাড়া। এখানে পেশাদারিত্ব কোথায়?