পাহাড় কাটা চলছে মহা উৎসবে

দেশের চলমান অস্থিরতা ও রাজনৈতিক পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে কিছু সন্ত্রাসী গ্রুপ পাহাড় কাটায় নেমেছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে তেমন কোনো ব্যবস্থা না নেয়ায় এ সুযোগকে কাজে লাগাচ্ছেন তারা। সবচাইতে বেশি পাহাড় কাটার খবর পাওয়া গেছে নগরের আকবরশাহ এলাকায়। এছাড়াও খুলশীর জালালাবাদ ও বায়েজিদ থানা এলাকায় পাহাড় কাটার খবর পাওয়া গেছে।

এই দুর্বৃত্তরা এতই বেপরোয়া যে, সাংবাদিকেরা কথা বলতে চাইলে তাদের একজন খুলশীর জালালাবাদ আবাসিকের মিন্টু সাহেবের পাহাড়ের অন্যতম মালিক মো. আলাউদ্দিন বলেন, ‘আমি পাহাড় কাটছি তো, আপনি পারলে লিখে দেন’। এসময় তিনি আরও বলেন, ‘পাহাড় কাটা অপরাধ সেটা আমি জানি। আমি সিডিএ’তে ভবন নির্মাণের প্ল্যানের জন্য আবেদন করেছি। ওখান থেকে আমি এখনও প্ল্যান পাইনি। তবে শুক্কুর একটা দোকান নির্মাণের জন্য জায়গা চাইছিলো। তাকে আমি অনুমতি না পাওয়ার কথা জানাই। কিন্তু সে বেশি জোড়াজুড়ি করায় আমি তাকে বলেছি- কাটতে। এখন আপনি যদি পারেন, সেটা লিখে দেন’।
কী নির্বিকার ও ঔদ্ধত্যপূর্ণ কথা! আসলে এই লোকদের জানাই আছে শেষ পর্যন্ত তাদের কিছুই হবে না। পরিবেশ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে সাংবাদিকদের বলা হয়েছে, আমাদের টিম মাঠে কাজ করছে, অভিযোগ পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। সংস্থাটির চট্টগ্রাম মহানগর কার্যালয়ের পরিচালক বেগম সোনিয়া সুলতানা বলেন, পাহাড় কাটার খবর পেয়ে আমাদের দুইটি টিম বের হয়েছে। অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
ব্যবস্থা নেওয়া হবে- এ ধরনের আশ্বাস বা সতর্কবার্তা অন্তত হাজারবার দেওয়া হয়েছে অতীতে; তাতে কোনো লাভ হয়নি, পাহাড় কাটা থামেনি। এভাবে দেশের মানচিত্র থেকে হারিয়ে গেছে শত শত পাহাড়। সবার চোখের সামনে কীভাবে এত এত পাহাড় নিশ্চিহ্ন হয়ে যাচ্ছে– সেই প্রশ্নের উত্তর কি সত্যি জানা নেই? মামলা হয়, অভিযান চলে, বিপন্ন পাহাড় বাঁচাতে আদালতের নির্দেশনাও আসে, তবু পাহাড়কাটা থামে না। প্রভাবশালী ব্যক্তি, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান, এমনকি পারিবারিক স্থাপনাও গড়ে উঠছে পাহাড় কেটে। এই ধ্বংসযজ্ঞে পিছিয়ে নেই সরকারি প্রতিষ্ঠানও।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেন, পাহাড় কাটছে প্রভাবশালীরা। জনবল সংকটে তাদের বিরুদ্ধে সব সময় অভিযান চালানো সম্ভব হয় না, জীবনের ঝুঁকিও আছে। পরিবেশ অধিদপ্তরের ভূমিকা নিয়েও রয়েছে অনেক অভিযোগ। এমন বাস্তবতায় নিশ্চিহ্ন হয়ে যাচ্ছে ইতিহাস-ঐতিহ্যের সাক্ষী হয়ে থাকা একেকটি পাহাড়। ফলে হারিয়ে যাচ্ছে জীববৈচিত্র্য। বিপন্ন হয়ে পড়ছে প্রাণ-প্রকৃতি। বর্তমানে সরকারি দপ্তরে স্থবিরতা বিরাজ করছে। এই সুযোগের সদ্ব্যবহার করছে কতিপয় দুর্বৃত্ত। এদের থামাতে হবে।