নগরীর বায়েজিদ বোস্তামী থেকে ফৌজদারহাট পর্যন্ত ৬ কিলোমিটার দীর্ঘ লিংক রোড বানানোর সময় চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) ১৬টি পাহাড় কেটেছিল। নগরীর যান চলাচলে গতি আনা, অনুন্নত এলাকায় উন্নয়নের ছোঁয়া লাগানো, আবাসন এবং শিল্পায়নসহ নানা ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে নগরের বায়েজিদ বোস্তামীর শেরশাহ বাংলাবাজার থেকে ঢাকা–চট্টগ্রাম মহাসড়কের ফৌজদারহাট পর্যন্ত ৬ কিলোমিটার ফৌজদারহাট–বায়েজিদ লিংক রোড নির্মাণ করা হয়। কয়েক দফা প্রকল্প সংশোধনের পর প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় হয় প্রায় সাড়ে তিনশ কোটি টাকা। ২০২০ সালের মাঝামাঝি সময়ে সড়কটি দিয়ে যান চলাচল শুরু হয়।
এটি গুরুত্বপূর্ণ একটি সড়ক হিসেবে গণ্য হলেও তখনই পাহাড় কাটা নিয়ে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়ে সিডিএ। ৯০ ডিগ্রি খাড়া করে কাটা পাহাড়গুলো বড় ধরনের ঝুঁকি তৈরি করে । নির্মাণের সময় কোনো বাছবিচার না করে ১৬টি পাহাড় কাটা হয়। একেবারে খাড়া করে কাটা পাহাড়গুলোর সুরক্ষায় তখন কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এতে পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটছে। বিশেষ করে বর্ষা মৌসুমে একাধিকবার পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটেছে। এখন পাহাড়গুলোকে ঝুঁকিমুক্ত করতে আবার কয়েকটি পাহাড় কাটা, রিটেইনিং ওয়াল নির্মাণ এবং জিও ব্যাগ স্থাপনের প্রক্রিয়া চলছে। সিডিএর পক্ষ থেকে ডিজাইন এবং ড্রয়িং করে তা চুয়েট থেকে অনুমোদনও করিয়ে নেওয়া হয়েছে। এখন পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমোদন পেলে সিডিএ প্রায় ৮ কোটি টাকা খরচ করে পাহাড়গুলোকে ঝুঁকিমুক্ত করবে। এখন অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে সিডিএ।
অথচ পাহাড়গুলোকে এভাবে না কেটে রাস্তাটি নির্মাণ করা সম্ভব ছিল বলে পরিবেশ অধিদপ্তরসহ পরিবেশবাদীরা মন্তব্য করেছেন। বাংলাদেশ ছাড়া অন্যকোনো দেশে এভাবে পাহাড় কেটে সড়ক নির্মাণের চিন্তাই করতো না কেউ। নির্মাণ তো দূরের কথা। যে প্রতিষ্ঠান পাহাড় কেটেছে সে প্রতিষ্ঠানেরই দায়িত্ব হচ্ছে সুষ্ঠু নগর পরিকল্পনার, যেখানে পাহাড়কাটা, নদীদখল, জলাশয় ভরাটের মতো পরিবেশবিধ্বংসী কাজগুলো বন্ধ করা অন্যতম। কিন্তু সে প্রতিষ্ঠানই জনমত, পরিবেশবাদীদের অনুরোধ, উপরোধ ও আপত্তি উপেক্ষা করে পাহাড় কেটে সড়ক নির্মাণ করেছে।
এখন আবার সরকারি অর্থ খরচ করে ঝুঁকিপূর্ণ করে তোলা সে পাহাড় আবার কাটা হবে। এই কাটাকাটির ফলে পরিবেশের যে ক্ষতি হলো তার দায় কে নেবে? এর জন্য জবাবদিহি কে করবে? আর কতদিন এভাবে জবাবদিহির ঊর্ধ্বে থেকে যাবেন তারা?