পাহাড়ে কারফিউ চান ফখরুল

সুপ্রভাত ডেস্ক »

পার্বত্য চট্টগ্রামে সংঘাতময় পরিস্থিতিতে কারফিউ দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বিষয়টি নিয়ে তিনি ‘যাদেরকে চেনেন’ তাদের সঙ্গে কথাও বলেছেন। প্রশাসন সেই ‘পরামর্শ’ না মেনে ১৪৪ ধারা দেওয়ায় তিনি হতাশ হয়েছেন। বলেছেন, ‘দেরিতে ক্ষতি হচ্ছে।’

শনিবার ঢাকার গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।

খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটিতে ‘পাহাড়ি ও বাঙালি’ সংঘাতের মধ্যে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর-আইএসপিআরের বিজ্ঞপ্তিতে ‘ভয়াবহ দাঙ্গার’ আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে।

বিএনপি নেতা বলেন, “আমাকে আমাদের দলে যিনি প্রেসিডেন্ট ছিলেন (রাঙামাটি বিএনপির শাখা) দীপেন দেওয়ান, উনি আগে এমপি প্রার্থী ছিলেন, তিনি আমাকে ফোন করে বললেন যে, ‘স্যার ইমিডিয়েটলি কারফিউ দিতে বলেন, কারফিউ ছাড়া একে নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না।’

“তখন আমি জানার পরে যাদেরকে চিনি তাদেরকে জানানোর পরে কারফিউ হয়নি। ১৪৪ ধারা দিয়ে চেষ্টা করা হয়েছে। ঠিক ইফেকটিভলি কন্ট্রোল তারা করতে পারেনি… এর মধ্যে এটা (সংঘাত) বিস্তার লাভ করেছে। এই যে দেরি হচ্ছে, এই দেরিটা কিন্তু ক্ষতির ব্যাপার হচ্ছে।” খবর বিডিনিউজের।

পার্বত্য চট্টগ্রামের ঘটনাটিকে আঞ্চলিক ভূ-রাজনীতির অংশ হিসেবেও দেখছেন ফখরুল। তিনি বলেন, “একে আমি কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনাটা মনে করি না। এর সঙ্গে অনেক কিছু জড়িত আছে। একদিকে শূন্যতার সুযোগ নেওয়া, অন্যদিকে জিও পলিটিক্সে যে পরিবর্তন ঘটছে মিয়ানমারকে কেন্দ্র করে আশপাশের অঞ্চলে, ওইদিকে ভারতবর্ষের মনিপুরের যে বিদ্রোহ, এসব যদি আপনি আনেন, জিও পলিটিক্সের এই ঘটনাগুলো ভেরি সিগনিফিকেন্ট বলে আমি মনে করি।”

বুধবার খাগড়াছড়িতে পাহাড়ি-বাঙালিদের মধ্যে সংঘাত শুরু হয়। পরের দুই দিনে তা আরও বিস্তৃত হয়।

অন্তর্বর্তী সরকারকে দোষারোপও করতে চান না বিএনপি নেতা। তিনি বলেন, “যারা দায়িত্বে আছেন, ব্যুরোক্র্যাটস মেইনলি, তাদের দায়িত্ব হচ্ছে সরকারকে সঠিকভাবে পরামর্শ দেওয়া, এটা করা উচিত। আমার কাছে মনে হয়েছে যে, এক্ষেত্রে অনেকটা গ্যাপ আছে। সমস্যাটা ওই জায়গায়।”

‘সরকারকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা’

এখন প্রতিক্রিয়া দেওয়া ঠিক হবে না মন্তব্য করেও বিএনপি নেতা বলেন, “এটা নিঃসন্দেহে বর্তমান সরকারকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টার অংশ… তাদেরকে ডিসটার্ব করা, বাংলাদেশের রাজনীতিকে অস্থিতিশীল করা।

“আপনার এটাকে (সরকার পতনের আন্দোলন) যারা বিপ্লব বলছেন, একটা প্রতিবিপ্লব ঘটনা ঘটানো, যে সুফল আমরা অর্জন করেছি সেই সুফলটাকে নষ্ট করা। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে যে, একটা বিরাজনীতিকরণের প্রক্রিয়াকে শুরু করার চেষ্টা করা।”

মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা নেওয়ার পর সচিবালয়ে আনসার বাহিনীর ঘেরাও, বিভিন্ন সংগঠনের নানা দাবি-দাওয়া, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়-জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পিটিয়ে হত্যা, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করার বিভিন্ন ঘটনার পেছনেও চক্রান্ত দেখছেন ফখরুল। বলেন, “সরকারকে অস্থিতিশীল করতেই এসব করা হয়েছে।”

ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কথিত যে কয়েকটি ফোনালাপ সামাজিক মাধ্যমে ফাঁস হয়েছে, সেটি নিয়েও প্রতিক্রিয়া জানান বিএনপি নেতা। বলেন, “শেখ হাসিনা পার্শ্ববর্তী দেশে থেকে যে সমস্ত কথা বলছেন, সেগুলো কতটুকু সত্য-মিথ্যা আমি জানি না, তবে সেই কথাগুলো এখানে বড় ইম্প্যাক্ট তৈরি করছে।

“সব মিলিয়ে বিষয়গুলো খুব কমফোর্টেবল না, বেশ আন-কমফোর্টেবল… বলা যায় যে, উদ্বিগ্ন হওয়ার কারণ আছে।”

দলের আলোচনার পরামর্শ

পার্বত্য চট্টগ্রামে উদ্ভূত অবস্থার প্রেক্ষিতে বিএনপির পরামর্শ কী- এই প্রশ্নে ফখরুল বলেন, ‘‘আমাদের পরামর্শ হচ্ছে, নিয়মিত রাজনৈতিক দলের সঙ্গে, বিশেষ করে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কথা বলতে হবে।”

পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে সরকারের সঙ্গে আশির দশকে অস্ত্র তুলে নেওয়া জনসংহতি সমিতির চুক্তির কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “এত দিন কোনো সমস্যা হয়নি। এখানে শুধু পার্বত্য চট্টগ্রামের সমস্যা তা নয়, সামাজিক সমস্যা আছে। এই সমস্যাগুলো দীর্ঘকাল ধরে আমরা সমাধান করিনি।

“আওয়ামী লীগ সরকার এত কথা বলেছে, চুক্তি করেছে, কিন্তু সমস্যার সমাধান করেনি। এটা তো একদিনে হবে না, ওদের সঙ্গে বসতে হবে, কথা বলতে হবে, বিষয়গুলোকে আলাপ-আলোচনা করে একটা জায়গায় নিয়ে আসতে হবে।”

মতবিনিময়ে অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কারের উদ্যোগ, সংবিধান সংশোধনের চিন্তা ও দেশের রাজনীতি নিয়েও বিএনপির অবস্থান তুলে ধরেন ফখরুল।