এই নগরে কোনো বৈধ জায়গায় বৈধ দালান ওঠাতে গিয়ে শুধু প্লান পাশ করতে গিয়ে কী পরিমাণ ঝক্কিঝামেলা পোহাতে হয় তা একমাত্র ভুক্তভোগীরাই ভালো জানেন। অথচ এই নগরেই পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে অবৈধভাবে গড়ে তোলা হয়েছে বহুতলা দালান ও সেমিপাকা ঘর তা দেখার কেউ নেই। এই ভবনের অনুমতি কারা দিল, কীভাবে দিল তা জানে না কেউ। দেখার পরে, জানার পরে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ারও কেউ নেই, কোনো কর্তৃপক্ষ নেই।
একটি দৈনিকে বলা হয়েছে, চট্টগ্রামে পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাস থামছেই না, বরং দিন দিন বেড়েই চলছে। যে সব পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকি নিয়ে বছরের পর বছর অবৈধ ভাবে হাজার হাজার মানুষ বসবাস করছে তার বেশির ভাগই সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের। তবে বেশ কিছু পাহাড় আছে সরকারি খাস।
চট্টগ্রামে মতিঝর্ণা এবং ফয়’স লেকের বিভিন্ন ঝিলের পাহাড়ের পাদদেশে সেমি পাকা কিংবা টিন শেড-বেড়ার কাঁচা ঘর নয়; রীতিমত পাকা দালানে বছরের পর বছর আলিশান ভাবে বসবাস করছে অনেক পরিবার। মতিঝর্ণা এলাকায় চারদিকে গাছপালা ঘেরা সবুজ পাহাড়ের পাদদেশে ছয় তলা ফাউন্ডেশন দেয়া বিল্ডিংয়ের চার তলায় বসবাসের পাশাপাশি ভাড়াও দিয়েছেন অনেক পরিবারকে। শুধু এ রকম একটি বিল্ডিং নয়, এমন অনেক এক তলা-দ্বিতীয় তলা এবং তৃতীয় তলা বিল্ডিংয়ে বছরের পর বছর রয়েছেন অবৈধ বসবাসকারীরা। নিজে পরিবার পরিজন নিয়ে থাকার পাশপাশি ভাড়াও দিয়েছেন অনেকে। এসব পাকা দালানের পাশাপাশি রয়েছে অসংখ্য সেমি পাকা এবং বেড়ার ও টিনশেড ঘর। বেড়ার ও টিনশেড ঘরগুলোতে শ্রমজীবী ভাসমান মানুষ ভাড়ায় থাকেন।
বেশিরভাগ সেমিপাকা, বেড়ার ও টিনশেড ঘর স্থানীয় জনপ্রতিনিধি এবং রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী এবং প্রভাবশালীরা নির্মাণ করে ভাড়া দিয়েছেন। আবার অনেক এলাকায় অবৈধ দখলদাররা জায়গা দখল করে দিয়েছেন। ভাড়াটিয়ারা ঘর তৈরি করে থাকেন। তাদেরকেও মাস শেষে ভাড়া দিতে হয়।
চট্টগ্রামে প্রতিবছর কোনো না কোনো জায়গায় পাহাড় ধসের ঘটনায় ঘটে প্রাণহানি। গত ১৩ বছরে পাহাড় ধসে দুই শতাধিক মানুষের মৃত্যু হলেও থেমে নেই ঝুঁকিপূর্ণ বসবাস। পত্রিকায় বলা হয়েছে, নগরীতে ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ে বসবাস করছে ২০ হাজারেরও বেশি মানুষ।
চট্টগ্রামে পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাস ঠেকাতে এবং পাহাড় ধসে ক্ষয়ক্ষতি রোধে পাহাড়ে সব অবৈধ পানি, বিদ্যুৎ ও গ্যাসের সংযোগ আগামী ১৫ দিনের মধ্যে বিচ্ছিন্ন করার নির্দেশ দিয়েছেন চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার মো. তোফায়েল ইসলাম। ২০ জুন চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে অনুষ্ঠিত পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটির ২৮ তম সভায় তিনি
পাহাড়ে কোনো অবৈধ গ্যাস আছে কিনা সেটি জানানোর জন্য কর্ণফুলী গ্যাস ডিসট্রিবিউশন লিমিটেডকে নির্দেশ দেন । এ ব্যাপারে ১৫ দিন পর পর তথ্য দেওয়ার জন্য নির্দেশনাও দেন তিনি।
এমন নির্দেশনা নতুন নয়। অতীতে অনেকবার বিশেষ করে বর্ষা এলে প্রশাসনের পক্ষ থেকে এমন নির্দেশনা জারি করা হয়। কিন্তু তা পুরোপুরি কার্যকর হয় না। পরিস্থিতি যে তিমির সে তিমিরেই থাকে। কারা দালান তুলতে দেয়, কারা পানি ও বিদ্যুৎ সংযোগ দেয় সেটা প্রশাসনের না জানার কথা নয়। এখন কথা হলো, সব জেনেশুনে অযথা কেন হম্বিতম্বি করা হবে। আর পাহাড় ধসে মানুষ মারা যেতে থাকবে।
এ মুহূর্তের সংবাদ