কয়েক দিনের টানা বর্ষণে পাহাড়ি শহর বান্দরবান তলিয়ে মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত পানিবন্দি অবস্থায় ছিল লাখো মানুষ। পাহাড়ি ঢলে মানুষসহ গবাদিপশু ভেসে যাওয়া ও পাহাড় ধসে মাটিচাপার মতো ঘটনাও ঘটেছে বেশ কয়েকটি। এতে কয়েক দিন বিচ্ছিন্ন অবস্থায় ছিল যোগাযোগ ব্যবস্থা। রোববার রাত থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অচল হয়ে পড়ে মোবাইল নেটওয়ার্ক ও ইন্টারনেট।
বান্দরবানে রোববার ২৬৮ মিলি মিটার, সোমবার ২৮৬ মিলি মিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
শহরের গুরুত্বপূর্ণ সরকারি দপ্তর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, সদর উপজেলা কার্যালয়, ফায়ার সার্ভিস, আদালত, নির্বাচন কমিশন কার্যালয়, পাসপোর্ট ও বিআরটিএ কার্যালয় হাঁটু পানিতে তলিয়ে যায়।
সদর উপজেলা চেয়ারম্যান সংবাদপত্রকে বলেন, ১৯৯৭ সালের পর এবারই বান্দরবান সবচেয়ে বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সেবার ছয়-সাত ঘণ্টা পানি স্থায়ী হয়েছিল। এর আগে ১৯৭৭ সালে ক্ষণস্থায়ীভাবে বানের জলে ডুবেছিল শহর। কিন্তু এবার তিন দিন ধরে পানি আটকে আছে।
ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের অন্যান্য শহরগুলো অধিকাংশই সমতলে বলে অধিক বৃষ্টি হলে ডুবে যাওয়ার একটি যুক্তি থাকতে পারে। কিন্তু বান্দরবান শহর তো অনেকটা পাহাড়ের ওপর সে শহর কেন ডুববে? এই প্রশ্নের উত্তরে স্থানীয়রা বলেছেন, তিন দশক আগে বান্দরবান শহর অংশে সাঙ্গু নদীতে অনেক বড় বড় পাথর ছিল, নদীর দুই পাড় ছিল উঁচু। পাথর তুলে তুলে বিক্রি করা হয়েছে। নদীতে পাথর না থাকায় ঢলে নেমে আসা মাটিতে নদীর তলদেশ ভরাট হয়ে গেছে। এতে নদীর পানিধারণ ক্ষমতা কমে গেছে। তারা বলেছেন, বান্দরবান শহর ঘিরে অপরিকল্পিত বসতি তৈরি হয়েছে। ম্লূ শহরে জমির দাম বেশি হওয়ায় আশেপাশের পাহাড় টিলায় জমি কেনা-বেচা চলে, এরপর জমি টিলা-পাহাড় কেটে স্থাপনা করেছে। বর্ষায় পাহাড় কাটা মাটি নামে পানির সঙ্গে মিশে, তারপর গিয়ে পড়ে সাঙ্গুতে।
বুয়েটের পানি ও বন্যা ব্যবস্থাপনা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক এ কে এম সাইফুল ইসলামের মতে, এবার বৃষ্টিপাত মাত্রা ছাড়ানো, তার মধ্যে পূর্ণিমার জোয়ারের কারণে দক্ষিণাঞ্চল দিয়ে পানি নামাতেও হচ্ছে দেরি। আর পাহাড় কাটা, বন উজারসহ ভূমির ব্যবস্থাপনার পরিবর্তন হচ্ছে। পানি ধরে রাখার আধার নষ্ট হচ্ছে। পানি যেগুলোতে বহন হয়, খাল-বিল এগুলোর ধারণক্ষমতা কমে যাচ্ছে। মাটির নিচে সারফেসকে আমরা আরবান করছি। এ তিনটিই আমাদের প্রধান সমস্যা।
বাংলাদেশের অন্যান্য শহরের মতো বান্দরবানও গড়ে উঠেছে অপরিকল্পিতভাবে সেখানেও ড্রেনেজের পথ বন্ধ হয়েছে, ময়লা পরিষ্কার হয় না, সব বর্জ্য তোলা হয় না, আগে যতটুকু পানি আসত এখন অনেক বেশি পানি আসছে। যেখানে-সেখানে রাস্তাঘাট, বাড়িঘর গড়ে তোলা হয়েছে। লেক, পুকুর আগে যেখানে পানি জমতো সবগুলো ভরাট করে ফেলা হয়েছে। তার খেশারত দিতে হচ্ছে এখন।
আমরা যে নিজেরাই নিজেদের ভূমিকে বসবাসের অযোগ্য করে তুলেছি তা আর বিস্তারিত বলার প্রয়োজন পড়ে না।
এ মুহূর্তের সংবাদ