পাহাড়ধসের শঙ্কা বাড়ছে তদারকি বাড়ছে কি

পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটি সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রামের বিভিন্ন পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ বসতির সংখ্যা গত ১০ বছরে বেড়েছে ১০ গুণ। আর তিন পার্বত্য জেলায়ও পাহাড়ে বসতি গত সাত বছরে দ্বিগুণ হয়েছে। জেলা প্রশাসনের হিসাবে চট্টগ্রাম নগরের বিভিন্ন পাহাড়ে গত বছর অবৈধ বসতির সংখ্যা ৬ হাজার ৫৫৮। এ বছর নতুন করে আর জরিপ হয়নি। তবে বসতি আরও বেড়েছে বলে মনে করছে প্রশাসন। এখন মোট ঝুঁকিপূর্ণ বসতিসম্পন্ন পাহাড় রয়েছে ২৬টি। অথচ ২০১৪ সালে ১১টি পাহাড়ে ৬৬৬টি পরিবার বসবাস করত।
২০০৭ সালে চট্টগ্রামে ভয়াবহ পাহাড়ধসের ১২৭ জনের মৃত্যুর পর ৩৬ দফা সুপারিশ দিয়েছিল তদন্ত কমিটি। এর ১০ বছর পর ২০১৭ সালে পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়ধসে ১৬৮ জনের মৃত্যুর পর ৩৫ দফা সুপারিশের মধ্যেও একই ধরনের সুপারিশ ছিল। কিন্তু বৃষ্টি হলে কিছু লোকজনকে সাময়িক সরিয়ে নেওয়া ছাড়া কার্যত কোনো সুপারিশই বাস্তবায়ন করতে পারেনি প্রশাসন।
২০১৭ সালে পাহাড়ধসে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় রাঙামাটি। তখন এই জেলায় পাহাড়ধসে মারা যায় ১২০ জন। কিন্তু এ ঘটনার পর তদন্ত কমিটির যে সুপারিশ ছিল, তার কোনো বাস্তবায়ন নেই। এমনকি পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ বাসিন্দা নিয়ে কোনো জরিপও নেই। তখন ক্ষতিগ্রস্ত হয় রূপনগর, নতুনপাড়া, শিমুলতলী, পশ্চিম মুসলিমপাড়া ও ভেদভেদী। তিন বছর আগে এই পাঁচ এলাকার ৩১ স্থানকে অতিঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করে জেলা প্রশাসন সাইনবোর্ড দেয় জেলা প্রশাসন। পত্রিকায় প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, এসব এলাকায় ২০১৭ সালের চেয়ে অন্তত ৫০০ ঝুঁকিপূর্ণ বসতি বেড়েছে।
বান্দরবানে ২০১৭ সালে পাহাড়ধসে ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছিল। সবশেষ গত শনিবার জেলাটির নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলায় পাহাড়ধসে একজন মারা যায়। কিন্তু জেলাটিতে নতুন করে ঝুঁকিপূর্ণ বাসিন্দার কোনো তথ্য বা জরিপকাজ হয়নি।
খাগড়াছড়ি জেলাও পাহাড়ের ঝুঁকিপূর্ণ বাসিন্দার সংখ্যা নিয়ে কোনো জরিপ নেই। জেলা প্রশাসনের ধারণা অনুযায়ী ৯টি উপজেলায় এক হাজারের বেশি বসতি রয়েছে। ভারী বৃষ্টির সতর্কবার্তা দিলে তাদের সরিয়ে নেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
২০২২ সালের ১ নম্বর ঝিলে পাহাড়ধসে মারা গিয়েছিলেন একই পরিবারের দুজন। চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান গণমাধ্যমকে বলেন, রেলসহ বিভিন্ন সংস্থাকে বারবার চিঠি দিয়েও তাদের নিজেদের পাহাড় রক্ষায় তৎপর করা যায়নি। ফলে বসতি বাড়ছে। আর পাহাড় কাটা ও বসতি স্থাপনে কাদের ইন্ধন রয়েছে, তা তো সবার জানা।
পাহাড়ধসের পর গঠিত বিভিন্ন তদন্ত কমিটির সুপারিশে ছিল পাহাড় কাটায় জড়িত প্রভাবশালী ব্যক্তি, গোষ্ঠী ও সংস্থার দুর্বৃত্তায়ন কঠোর হাতে আইনানুগভাবে নিয়ন্ত্রণ করা। ন্যাড়া পাহাড় বনায়ন, পাহাড় কাটায় জড়িতদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের, পাহাড়ি এলাকায় শহর সম্প্রসারণ নিরুৎসাহিত করাও ছিল। কিন্তু এসব উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।
যেখানে জেলা প্রশাসক নিজেই বলেন, ‘পাহাড় কাটা ও বসতি স্থাপনে কাদের ইন্ধন রয়েছে, তা তো সবার জানা।’ তা সত্বেও কেন দোষীদের বিচার হয় না তা জনগণের অজানা।