নিজস্ব প্রতিবেদক »
দুসপ্তাহ ধরে সরবরাহজনিত জটিলতা না থাকা সত্ত্বেও কৃত্রিম সংকট দেখিয়ে ডিমের বাজার অস্থির করে তোলার অভিযোগ উঠেছে ডিমব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে। বিষয়টি নিয়ে প্রশাসন অভিযান চালালে ‘হয়রানি’র স্বীকার হচ্ছেন, এমন দাবি তুলে ডিম বেচাকেনা বন্ধ রেখেছেন পাহাড়তলী বাজারের পাইকারি ডিমব্যবসায়ী ও আড়তদারেরা। শনিবার (২৬ আগস্ট) সকাল থেকে ডিম বেচাকেনা বন্ধের ঘোষণা দেন তাঁরা। এতে ডিম কিনতে না পেরে বিপাকে পড়েন খুচরা বিক্রেতা ও ভোক্তারা। ডিম বেচাকেনা বন্ধের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন চট্টগ্রাম ডিম ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. আব্দুল শুক্কুর।
গতকাল পাহাড়তলী বাজারে খুচরা বিক্রির উদ্দেশ্যে ডিম কিনতে আসা ক্রেতারা বলেন, পাইকারি বাজারগুলোতে ডিমের সংকট নেই। উত্তরবঙ্গের সাথে যোগাযোগ ভালো থাকাতে বাজারে নিয়মিতই ডিম আসছে। কিন্তু পাইকারি ব্যবসায়ীদের অসাধুচক্র তাদের ব্যক্তিগত স্বার্থে ও অধিকলাভের আশায় কারসাজি করে ডিমের দাম বাড়িয়েছেন। ফলে ভোগান্তিতে পড়ছেন খুচরা বিক্রেতা ও ভোক্তারা।
ডিম বেচাকেনা বন্ধ রাখার বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম ডিম ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. আব্দুল শুক্কুর বলেন, ‘আমরা দেশের বিভিন্ন স্থানের উৎপাদক থেকে ডিম এনে বিক্রি করি। যেদিন যেমন দামে কিনতে পারি, সেদিন কিছুটা লাভে বিক্রি করছি। কিন্তু ভোক্তা অধিকার ও জেলা প্রশাসন এসে আমাদের ডিমের দামে কারসাজি আছে দাবি করে জরিমানা করছেন। ব্যবসায়ীদের বারবার হয়রানি করা হচ্ছে। এতে কেনা দামের চেয়ে কমে বিক্রি করে লোকসান গুনতে হচ্ছে। আমরা তাই অনির্দিষ্টকালের জন্য ডিম বিক্রি বন্ধ রেখেছি।’
তিনি দাবি করেন, ‘প্রশাসনের পক্ষ থেকে একটি নীতিমালা দেওয়া হোক, আমরা কত দামে কিনবো আর কত মার্জিন রেটে বিক্রি করবো। যতদিন না প্রশাসন এটা দিচ্ছে, ততদিন আমরা ডিম কেনাবেচা বন্ধ রাখবো।’
করপোরেট প্রতিষ্ঠান ও উৎপাদকেরাই ডিমের দামে কারসাজি করছে বলে অভিযোগ এনে তিনি বলেন, ‘ডিমের বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে করপোরেট প্রতিষ্ঠান ও উৎপাদকেরা। প্রশাসন সেখানে না গিয়ে আমাদের ধরতে এলে তো হবে না। কিন্তু প্রশাসন করপোরেট কোম্পানির কাছ ঘেঁষছে না, অথচ আমাদের জরিমানা করছে। এরপর পত্রিকা দিয়ে লেখাবে আমরা বাজার অস্থির করে তুলছি। বিষযটিকে আমরা হয়রানি মনে করছি।’
অভিযানের নামে ব্যবসায়ীদের ‘হয়রানি’র অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর বিভাগীয় কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. ফয়েজ উল্যাহ বলেন, ‘গত দুসপ্তাহ আগে যে ডিম প্রতি শ’ ১ হাজার ২০ থেকে ৩০ টাকার মধ্যে পাওয়া যেত তা এখন কোনো কারণ ছাড়াই ব্যবসায়ীরা ১ হাজার ২৫০ টাকার বেশি দামে বিক্রি করছে। এভাবে বাজার অস্থির করে তোলার কোনো যুক্তি থাকতে পারে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘কৃত্রিম সংকট দেখিয়ে বা নানা সিন্ডিকেট বানিয়ে অসাধু ব্যবসায়ীরা বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে। একেকদিন তারা একেক পণ্যের দাম বাড়াচ্ছে। কখনো মসলা, কখনো চিনি, কখনো তেল, কখনো ডিম। এখন আমরা অভিযানে নামলে দেখি তাদের কাছে ক্রয়মূল্যের কোনো বিল-ভাউচার নেই। এমনকি তারা নিজেরাও স্বীকার করে, এ বিষয়ে তাদের কাছে কোনো তথ্য নেই। এসব কারণে ডিমবাজারে অস্থিরতা সৃষ্টি করার দায়ে জনস্বার্থে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আমরা অভিযানে নেমেছি। পাশাপাশি জেলা প্রশাসনও উদ্যোগ নিয়েছে। এরপর দাম একটু কমে আসলে আমরা ডিমবাজারে অভিযান বন্ধ রাখি। এখন যদি তারা বলে ডিম বেচাকেনা বন্ধ রাখবে, তাহলে তারা আইনের পথ বাধাগ্রস্ত করে জনগণকে হয়রানি করছে, বলা যায়।
মো. ফয়েজ উল্যাহ আরও বলেন, ‘আমরা কীভাবে বুঝবো যে তারা প্রকৃতপক্ষে কত দামে ডিম কিনেছেন ? তারা যেসব কাগজ দেখাচ্ছেন, সেখানেও দেখা যাচ্ছে যে, সেগুলো তাদের নিজেদের হাতের লেখা। অভিযানের কথা শুনলে তারা দোকানে তালা লাগান। তারা বাজার অস্থির করে তোলেন। জনগণের ভোগান্তি আনবে আর আমরা তদারকি করলে বলবে ‘হয়রানি’, এটি হয় না। ভোক্তাদের কথাও তাদের ভাবতে হবে।’
এ বিষয়ে জানতে জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা প্লাবন কুমার বিশ্বাসের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, ‘পাহাড়তলী বাজারে ডিম বিক্রি বন্ধের বিষয়টি জানি না। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানাবো।’
উল্লেখ্য, ১২ আগস্ট পাহাড়তলী বাজারে অভিযান পরিচালনা করে ভোক্তা অধিকার। অভিযানে জৈনপুর ট্রেডার্স নামে এক আড়তদারকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। পাশাপশি মূল্যতালিকা না থাকা ও ক্রয়-বিক্রয় রসিদে গরমিলের কারণে জান্নাত ট্রেডার্স নামের আরেক প্রতিষ্ঠানকেও ২০ হাজার টাকা জরিমানা করে সংস্থাটি। এরপর ১৪ আগস্ট খালি ভাউচারে ‘মনগড়া’ দাম বসিয়ে ডিম বিক্রি করার দায়ে এক আড়তদারকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করে ভোক্তা অধিকার। সর্বশেষ ২২ আগস্ট সেখানে অভিযান পরিচালনা করে জেলা প্রশাসন। এ সময় মূল্যতালিকা না মেনে অধিক দামে ডিম বিক্রির দায়ে তিন পাইকারি ব্যবসায়ীকে ৯০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।