চবি প্রতিনিধি »
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নেতৃত্বে পাল্টাপাল্টি মানববন্ধন পালিত হয়েছে। প্রশাসনের দুর্নীতি, সিন্ডিকেটে নির্বাচন না দেওয়া, চারুকলায় অচল অবস্থা ইত্যাদি কারণ দেখিয়ে একপক্ষে মানববন্ধনের ডাক দেন সভাপতি (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক আব্দুল হক। কিন্তু এই মানববন্ধনকে অবৈধ বলে পাল্টা মানববন্ধনের ডাক দেন সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. সজীব কুমার ঘোষ। উভয় কর্মসূচি একই সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুটি জায়গায় পালিত হয়।
গতকাল সোমবার বেলা ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি কার্যনির্বাহী পরিষদের ব্যানারে মানববন্ধন করেছেন ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এবং বুদ্ধিজীবী চত্বর এলাকায় সাধারণ শিক্ষকবৃন্দের ব্যানারে পাল্টা মানববন্ধন করেছেন শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক।
সভাপতি আবদুল হকের মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন কার্যনির্বাহী পরিষদের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন, সদস্য ড. ফণী ভূষণ বিশ্বাস, শোয়াইব উদ্দিন হায়দার, সৈয়দা করিমুন্নেছা ও হোসাইন মুহাম্মদ ইউনুস সিরাজী। এছাড়া বিভিন্ন বিভাগের কয়েকজন শিক্ষকও এতে অংশ নেন।
এ সময় সমিতির সভাপতি (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক আব্দুল হক বলেন, শিক্ষক সমিতির দীর্ঘদিনের দাবি সিন্ডিকেট নির্বাচন। কিন্তু তা না করে প্রশাসন একটি ভারসাম্যহীন সিন্ডিকেটের মাধ্যমে প্রশাসনিক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। এক বছরের অধিক সময় ধরে পদোন্নতির জন্য আবেদনকৃত বেশ কিছু শিক্ষকের পদোন্নতি বোর্ড সভা সম্পন্ন না করে বারবার সিন্ডিকেট সভা অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তাঁদের ব্যাপক হয়রানি ও জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন করে যাচ্ছে। তাছাড়া শিক্ষক নিয়োগসহ বিভিন্ন প্রশাসনিক অনিয়ম ও অসঙ্গতির ব্যাপারে প্রকাশিত সংবাদ বা অভিযোগকে আমলে নিতে প্রশাসন ব্যর্থ হয়েছে। তথাকথিত নিয়োগ বাণিজ্য চক্র বা নিয়োগ কেলেঙ্কারির সাথে যুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধেও আইনগত ব্যবস্থা নিতে গড়িমসি দেখা যাচ্ছে। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম একটি সৃষ্টিশীল জ্ঞানচর্চা কেন্দ্র চারুকলা ইনস্টিটিউটে প্রায় ২.৫ (আড়াই) মাস যাবৎ অচলাবস্থা চলমান। কিন্তু প্রশাসন এই সমস্যা নিরসনের ব্যাপারে কোন কার্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছে না।
তিনি আরও বলেন, বিষয়গুলো বারবার জানানোর পরেও প্রশাসন এ নিয়ে সুষ্ঠু পদক্ষেপ নেয়নি। এ কারণেই আমাদের বাধ্য হয়ে মানবন্ধনে আসতে হয়েছে। উল্লিখিত বিষয়ে আগামী ৭ কর্মদিবসের মধ্যে যদি সন্তোষজনক সমাধান না আসে তাহলে আমরা পরবর্তীতে আরও বড় কর্মসূচি ঘোষণা করব।
অন্যদিকে এই মানববন্ধনকে অবৈধ বলে সাধারণ সম্পাদকের ডাকা পাল্টা মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষক সমিতি কার্যনির্বাহী পরিষদের যুগ্ম সম্পাদক এসএম জিয়াউল ইসলাম, সদস্য অধ্যাপক ড. নাজনীন নাহার ইসলাম ও ড. শারমিন মুস্তারি। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডি ও বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষকরা উপস্থিত ছিলেন।
সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. সজীব কুমার ঘোষ বলেন, শিক্ষক সমিতির দীর্ঘ ঐতিহ্য রয়েছে। আলোচনা এবং আন্দোলনের মাধ্যমে চবি শিক্ষক সমিতি জাতির যে কোনো ক্রান্তিলগ্নে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করেছে। আমরা আলোচনাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেই। তারপরে আমরা আন্দোলনে যাই। আমি প্রশাসনের সাথে আলোচনা করে শিক্ষকদের দাবি-দাওয়াগুলো আদায়ের চেষ্টা করেছি। শিক্ষক সমিতির কার্যনির্বাহী সভায় এগুলো আলোচনা করে প্রশাসনের নিকট যাওয়ার চেষ্টা করেছি। কিন্তু আমাদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতির নেতৃত্বে কয়েকজন সদস্য কোনোভাবেই দাবিগুলো নিয়ে প্রশাসনের নিকট যেতে আগ্রহ প্রকাশ করেননি। সাধারণ সম্পাদক হিসেবে আমি বারবার বলেছি যে সাধারণ সভার যে সিদ্ধান্ত তা প্রশাসনকে জানাতে হবে। এরপরেও যদি প্রশাসন ব্যবস্থা না নেয় তাহলে আমরা আন্দোলনে যাব। কিন্তু কোন কারণ ছাড়াই বর্তমান সভাপতি আলোচনাকে এড়িয়ে যান। এমনকি উপাচার্য উনার সাথে আলোচনা করতে চাইলেও উনি অগ্রাহ্য করেন।