রক্তক্ষয়ী একটি আন্দোলনের পর দেশে সরকার পরিবর্তন হয়েছে। ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পদত্যাগের পরও বিভিন্ন স্থানে সহিংস ঘটনায় আরও বহু লোক মারা গেছে। এমতাবস্থায় আর নতুন করে সহিংস ঘটনার অনুমানও করেনি জাতি। কিন্তু দুঃখজনক হলেও পার্বত্য চট্টগ্রামে একটি তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ভয়াবহ ও রক্তক্ষয়ী ঘটনা ঘটে গেল।
গত বুধবার খাগড়াছড়ি সদরে মোটরসাইকেল চুরিকে কেন্দ্রে করে গণপিটুনিতে মো. মামুন (৩০) নামের এক বাঙালি যুবকের মৃত্যুর পর সংঘর্ষ শুরু হয়। ওই দিন সেখানকার পাহাড়ি ও বাঙালির মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।
পত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা যায়,পরদিন বৃহস্পতিবার বিকেলে হত্যার প্রতিবাদে দীঘিনালায় বাঙালিরা বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। বাঙালিদের অভিযোগ, মিছিলটি বোয়ালখালী বাজার অতিক্রম করার সময় পাহাড়িরা বাধা দিলে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। স্থানীয় সূত্রগুলো জানায়, সংঘর্ষের একপর্যায়ে দীঘিনালার লারমা স্কয়ারে বিভিন্ন দোকান ও বাড়িঘরে আগুন দেওয়া হয়।
দীঘিনালা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মামুনুর রশীদ বলেন, আগুনে দীঘিনালা বাসস্টেশন ও লারমা স্কয়ার এলাকায় ১০২টি দোকান আগুনে পুড়ে গেছে। এর মধ্যে পাহাড়িদের ৭৮টি ও বাঙালির সম্প্রদায়ের ২৪টি দোকান রয়েছে।
দীঘিনালা উপজেলায় সংঘর্ষের জেরে খাগড়াছড়ি জেলা সদর, পানছড়ি ও আশপাশের এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। বৃহস্পতিবার রাতে খাগড়াছড়ি জেলা সদরে গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষ ও গুলির ঘটনায় ৩ জন নিহত হন। আহত হন অন্তত ২০ জন। নিহত ব্যক্তিরা হলেন জুনান চাকমা (২০), ধনঞ্জয় চাকমা (৫০) ও রুবেল চাকমা (৩০)।
খাগড়াছড়িতে তিন পাহাড়ির মৃত্যু ও অগ্নিসংযোগের ঘটনার প্রতিবাদে শুক্রবার সকালে রাঙামাটি জেলা সদরে ‘সংঘাত ও বৈষম্যবিরোধী পাহাড়ি ছাত্র আন্দোলন’–এর ব্যানারে প্রতিবাদ মিছিল বের করেন পাহাড়িরা। মিছিলে ঢিল ছোড়াকে কেন্দ্র করে পাহাড়ি ও বাঙালিদের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। এ সময় আঞ্চলিক পরিষদ কার্যালয়সহ ৩০ থেকে ৪০টি বাড়িঘর, দোকানপাটে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। অন্তত ৩০টি যানবাহন পুড়িয়ে দেওয়া হয়। সংঘর্ষে ১ জন নিহত এবং আহত হয়েছেন দুই পক্ষের অন্তত ৬০ জন। নিহত ব্যক্তির নাম অনীক কুমার চাকমা। তিনি কর্ণফুলী ডিগ্রি কলেজের স্নাতকের শিক্ষার্থী। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে শুক্রবার দুপুরে দুই জেলা সদরে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়।
এ ধরনের ঘটনা অত্যন্ত দুঃখজনক। পাহাড়ে বসবাসরত সবাই এ দেশেরই সন্তান। কাজেই এ ধরনের ভ্রাতৃঘাতি ঘটনা কারা ঘটিয়েছে, এমন সহিংসতায় কারা জড়িত তা তদন্ত করে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে সরকারকে। মনে রাখতে হবে পাহাড় অশান্ত হলে আমরা সমতলের মানুষও শান্তিতে থাকতে পারবে না।
পাহাড়ে সংঘাতের ঘটনায় জড়িতদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শান্তি দেওয়ার কথা বলেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। খাগড়াছড়ি- রাঙামাটিতে ঘটে যাওয়া সহিংতা তদন্তে শিগগির একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি করা হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি। শনিবার রাঙামাটির পর খাগড়াছড়িতে মতবিনিময় সভায় উপদেষ্টা বলেন, যারা এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত তাদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হবে, যা আগামীর জন্য উদাহরণ হয়ে থাকবে। আমরা তাঁর বক্তব্যের প্রতিফলন দেখতে চাই।