পানি ধারণের সক্ষমতা বৃদ্ধি করা দরকার

কাপ্তাই হ্রদ

গত কয়েক দশকের মধ্যে এবার কাপ্তাই হ্রদের পানি সর্বোচ্চ বিপৎসীমায় পৌঁছায় কাপ্তাই হ্রদ তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। পানি বেড়ে ডুবে গেছে সড়ক, সেতু ও রাস্তাঘাট। এতে দুর্ভোগে পড়েছেন হাজার হাজার মানুষ ও নিচু এলাকার বাসিন্দারা। সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে জানা গেছে, উজান থেকে আসা পাহাড়ি ঢলে খাগড়াছড়ির মহালছড়ি উপজেলার বিভিন্ন নিচু এলাকাও তলিয়ে গেছে। উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে কাপ্তাই হ্রদের পানি এখন সর্বোচ্চ বিপৎসীমায় রয়েছে। মঙ্গলবার দুপুরে কাপ্তাই হ্রদের পানি রেকর্ড করা হয় ১০৮ দশমিক ৮৮ এমএসএল (মিনস সি লেভেল)। হ্রদের সর্বোচ্চ পানি ধারণক্ষমতা ১০৯ এমএসএল।
কাপ্তাই হ্রদের পানি বিপৎসীমার সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছায় গত সোমবার দুপুর থেকে কাপ্তাই বাঁধের ১৬টি গেট ৬ ইঞ্চি করে খুলে দেওয়া হয়। এরপর গতকাল মঙ্গলবার সকাল ৭টায় গেট ৬ ইঞ্চি থেকে বাড়িয়ে এক ফুট উচ্চতায় খুলে রাখা হয়েছে। এতে প্রতি সেকেন্ডে ১৮ হাজার কিউসেক পানি নিষ্কাশন হচ্ছে। এ ছাড়া বিদ্যুৎকেন্দ্রের পাঁচটি ইউনিট চালু রেখে আরও ৩২ হাজার কিউসেক পানি নিষ্কাশন হচ্ছে নদীতে।
শহরের ঝুল্লিক্যাপাহাড়, ব্রাহ্মণটিলা, শান্তিনগর, বালুখালী, জীবতলীসহ অনেক এলাকা পানিতে ডুবে গেছে। রাঙ্গামাটির বাঘাইছড়ি, লংগদু, নানিয়ারচর, বরকল, জুরাছড়ি, কাপ্তাই ও বিলাইছড়ি উপজেলার নিচু এলাকাগুলো তলিয়ে গেছে। এতে অন্তত ৩০ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। বাঘাইছড়ি উপজেলার আটটি ইউনিয়নের মধ্যে পাঁচটি বঙ্গলতলী, মারিশ্যা, রূপকারী, খেদারমারা, বাঘাইছড়ি ও আমতলী ইউনিয়নের অনেক গ্রাম ও ফসলি জমি পানিতে তলিয়ে গেছে। লংগদু উপজেলার ঝরনাটিলা, ভাসাইন্যাদম ইউনিয়ন, বগাচতর ইউনিয়নের জালিয়াপাড়া, গুলশাখালী ইউনিয়নের সোনাগাঁওপাড়া, মাইনী ইউনিয়নের এফআইডিসি বড় কলোনি পানিতে তলিয়ে গেছে। বিলাইছড়ি উপজেলা সদর, ধূপ্পারচড়, বহলতলী, বাঙালকাটা এলাকাসহ নদী তীরবর্তী নিচু এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে। এ ছাড়া জেলার বরকল, জুরাছড়ি, নানিয়ারচর ও কাপ্তাই উপজেলার নিচু এলাকাও প্লাবিত হয়েছে।
দখলের ফলে সংকীর্ণ হওয়ার হুমকিতে কাপ্তাই হ্রদ। প্রতিদিন হ্রদে ফেলা হচ্ছে ময়লা, আবর্জনা ও বর্জ্য। হ্রদসংলগ্ন বসবাসকারীসহ নৌপরিবহণে যাতায়াতকারীরা এসব বর্জ্য নিক্ষেপ করছেন। ফলে দিনদিন দূষিত হচ্ছে এ হ্রদের পানি ও পরিবেশ। এছাড়া প্রতিনিয়ত জমছে পাহাড়ি ঢলে নামা পলি, লতাগুল্ম, বাঁশগাছের ঢালপালাসহ নানা আবর্জনার জট। এসব বর্জ্য ও পলি জমে ভরাট হয়ে যাচ্ছে হ্রদের তলদেশ। এতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে নৌ চলাচল ও মৎস্য উৎপাদন। পলি ও আবর্জনা জমে ভরাট হচ্ছে, যার ফলে নৌ চলাচল ব্যাহত হচ্ছে এবং মৎস্য উৎপাদন কমে যাচ্ছে। এটি হ্রদের সৌন্দর্য ও প্রাকৃতিক বাস্তুতন্ত্রের জন্য একটি বড় হুমকি। অন্যদিকে, মাইনী নদীর মতো নদ-নদীর বর্জ্য ও পলি নদী খননের মাধ্যমে কাপ্তাই হ্রদে ফেলা হচ্ছে, যা হ্রদ ভরাটের প্রক্রিয়াকে আরও বাড়িয়ে তুলছে।
কাপ্তাই হ্রদ ভরাট হওয়ার কারণ হ্রদের তলদেশে পলি ও বিভিন্ন প্রকার বর্জ্য জমা হওয়ার কারণে হ্রদের গভীরতা কমে যাচ্ছে এবং ভরাট হয়ে যাচ্ছে। এর ফলে হ্রদের পানি ধারণ ক্ষমতা কমে গেছে। অল্প কয়েকদিনের বৃষ্টিতেই হ্রদের পানি তলিয়ে দিচ্ছে নিম্নাঞ্চল। কাজেই এই পরিস্থিতি মোকাবেলায় হ্রদের ধারণ ক্ষমতা বাড়ানোর পরিকল্পনা নিতে হবে।