পানির সংকট : সতর্ক না হওয়ার খেসারত

ভূগর্ভস্থ পানি নিয়ে সতর্ক না হওয়ার খেসারত দিতে হচ্ছে এখন। চট্টগ্রাম, রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও নওগাঁ জেলার ১৫৩ ইউনিয়ন ও ৭২ মৌজাকে পানি সংকটাপন্ন এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করেছে সরকার। গত ২৮ অক্টোবর গেজেট প্রজ্ঞাপন জারি করে এসব এলাকাকে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য ‘পানি সংকটাপন্ন এলাকা’- হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

এতে বলা হয়েছে, দেশের উত্তর পশ্চিম হাইড্রোলজিক্যাল অঞ্চলের রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও নওগাঁ জেলার ২৫টি উপজেলার ৪৭টি ইউনিয়ন অতি উচ্চ পানি সংকটাপন্ন, ৪০টি ইউনিয়ন উচ্চ পানি সংকটাপন্ন এবং ৬৬টি ইউনিয়ন মধ্যম মাত্রার পানি সংকটাপন্ন এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

গত অন্তত দু দশক ধরে পটিয়ায় পানি দুষ্প্রাপ্যতা নিয়ে সংবাদ পরিবেশিত হলেও খুব কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি।

বিজ্ঞাপ্তিতে চট্টগ্রাম জেলার পটিয়া উপজেলার পটিয়া পৌরসভার ৫টি মৌজা অতি উচ্চ পানি সংকটাপন্ন এবং ৩টি মৌজা উচ্চ পানি সংকটাপন্ন এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

ওই উপজেলার ৩টি ইউনিয়নের ৭টি মৌজা অতি উচ্চ পানি সংকটাপন্ন, ৯টি ইউনিয়নের ২৭টি মৌজা উচ্চ পানি সংকটাপন্ন এলাকা এবং ৮টি ইউনিয়নের ৩০টি মৌজা মধ্যম পানি সংকটাপন্ন এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

বাংলাদেশ পানি আইন, ২০২৩- এর ধারা ১৭ অনুযায়ী পানি সংকটাপন্ন এলাকার সুষ্ঠু পানি ব্যবস্থাপনার উদ্দেশ্যে জলাধার বা পানি ধারক স্তরের সুরক্ষার জন্য যথাযথ অনুসন্ধান, পরীক্ষা, নিরীক্ষা বা জরিপের ফলাফলের ভিত্তিতে এ ঘোষণা করেছে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়।

পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় এসব এলাকার জনগণের জন্য কিছু নির্দেশনাও জারি করেছে।

এতে বলা হয়েছে, খাবার পানি ছাড়া অন্য কোনো কারণে নতুন করে নলকূপ স্থাপন ও ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলন বন্ধ থাকবে। এছাড়া খাবার পানি সরবরাহ ছাড়া অন্য কোনো কারণে বিদ্যমান নলকূপের মাধ্যমে ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলন বন্ধ থাকবে। ভূগর্ভস্থ পানি নির্ভর শিল্প বা প্রতিষ্ঠান স্থাপন করা যাবে না। খাল, বিল, পুকুর, নদী তথা কোন জলাধারের শ্রেণি পরিবর্তন করা যাবে না এবং জলাশয়গুলো জনগণের ব্যবহারের জন্য উন্মুক্ত রাখতে হবে।

বলা হয়েছে, জনগণের ব্যবহারযোগ্য খাস জলাশয় ও জলমহাল ইজারা দেওয়া নিরুৎসাহিত করতে হবে। জলস্রোতের স্বাভাবিক প্রবাহ বিঘ্নিত করা যাবে না। কোন জলাধারের সমগ্র পানি আহরণ করে নিঃশেষ করা যাবে না। ভূমি এবং পানির প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য নষ্ট/পরিবর্তন করতে পারে এমন কাজ করা যাবে না।

এমন নিয়ম একেবারে নতুন নয়। এর কাছাকাছি বিধিনিষেধ আগেও ছিল। ভূগর্ভস্থ পানি দিয়ে ইরি ও বোরো চাষ, কলকারখানা ও দৈনন্দিন ব্যবহারের বিপদ নিয়ে বহু আগে থেকে বিশেষজ্ঞরা বলে এলেও সরকার এবং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান তাতে কর্ণপাত করেনি। এখন তার খেসারত দিতে হবে অনেক দামে। এই সংকটের সমাধান খুব সহজে হবে বলে মনে করার কিছু নেই। আমরা মনে করি এ বিষয়ে উচ্চতর পর্যায়ে বিশেষজ্ঞদের নিয়ে কমিটি করা দরকার এবং সে এলাকাগুলোতে ব্যাপক প্রচারণা চালানো জররি কাজ।