পানির আধার হচ্ছে নদী আর নদীর উৎস হচ্ছে পাহাড়। সে পাহাড়ের অস্তিত্বই যখন হুমকির মুখে তখন নদ-নদীগুলো বেঁচে থাকবে কীভাবে? বাংলাদেশ আজ তেমন এক বিপন্নের মুখে দাঁড়িয়ে। পাহাড়ে পানি না থাকার অর্থ হচ্ছে আমরা এক ভয়াবহ পরিণতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছি।
পত্রিকান্তরে জানা গেছে, রাঙামাটির জুরাছড়ি উপজেলার দুর্গম পাহাড়ি গ্রামগুলোতে সুপেয় ও ব্যবহার্য পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। গ্রীষ্মের আগেই শুকিয়ে গেছে উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকার পাহাড়ি ছড়া, ঝিরি–ঝর্না ও নালা। যে কারণে সেখানকার পাহাড়ে বসবাসরত মানুষের কষ্ট বহুগুণ বেড়েছে। দীর্ঘদিন ধরে চলতে থাকা এই সংকট নিরসনে উদ্যোগ নেওয়ার দাবি জানিয়েছে স্থানীয় বাসিন্দারা। সম্প্রতি জুরাছড়ির বিভিন্ন এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার জুরাছড়ি ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের দুর্গম এলাকায় অবস্থিত কুকিছড়া, ত্রিপুরাপাড়া, জনতাপাড়া, বারুদগলা, সোহেলপাড়া গ্রামে ২৪৭ পরিবারের বাস। তাদের পেশা কৃষিকাজ (জুম চাষ)। প্রত্যন্ত এসব এলাকায় নেই বিদ্যুৎ। চিকিৎসা সেবার জন্য নেই কমিউনিটি ক্লিনিক। এ ওয়ার্ডের ৬টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থাকলেও নেই কোনো নিরাপদ পানির জন্য নলকূপ। এসব গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে পানছড়ি ছড়া। ছড়ার ছোট–ছোট রয়েছে। কিন্তু বর্তমানে গ্রামের ছড়াগুলো শুকিয়ে মরা ছড়ায় পরিণত হয়েছে। গ্রীষ্মকাল বা শুষ্ক মৌসুমে গ্রামের লোকজনের একমাত্র ভরসা কুয়ার পানি। কিন্তু পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় কুয়ার পানিও মিলছে না।
স্থানীয়রা বলছেন, পাড়াগুলো পাহাড়ের চূড়ায় হওয়ায় পাড়া থেকে প্রায় ৫–৮শ ফুট নিচে নামার পর ছোট ঝিরি বা ঝর্নার দেখা মেলে। ঝিরিগুলোতে এই সময়ে পানি নেই বললেই চলে। তবুও এরপরই ভরসা করতে হচ্ছে গ্রামের মানুষের। আগের মতো বড় ও পানি ধারণ সক্ষমতা পূর্ণ বৃক্ষ না থাকায় শুষ্ক মৌসুমে ছোট ঝিরি–ঝর্নাগুলো শুকিয়ে যাচ্ছে। স্থানীয় ইউপি সদস্য অরুন চাকমা বলেন, প্রচণ্ড গরমে পাহাড়ে মানুষের জীবনযাপনে অত্যন্ত কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। এরমধ্যে পানি সংকট পরিস্থিতি আরও খারাপ করেছে।
এসব গ্রামগুলোতে জলবায়ু পরিবর্তনে কারণে নিরাপদ পানির সংকটের পাশাপাশি কৃষি খাদ্য ওপর ব্যাপকভাবে প্রভাব ফেলছে। তীব্র গরম ও পানির সংকটে গবাদিপশুর মৃত্যুও বাড়ছে। ঝিরি–ছড়াগুলো রক্ষায় সরকারের সহযোগিতার পাশাপাশি সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। এসব ছড়া ঝিরির চার পাশে সবুজ পাহাড়ি বনায়নের উদ্যোগ গ্রহণ এখন সময়ের দাবি।
সে সঙ্গে পাহাড়ের গাছকাটা বন্ধ করাসহ পাহাড় রক্ষায় কঠোর না হলে ভবিষ্যতে পানির প্রবাহ বলে কিছু থাকবে না।
এ মুহূর্তের সংবাদ