নিলা চাকমা »
মানুষের শরীরে ১০ স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্যে এন্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্সকে অন্যতম হিসাবে ঘোষণা করেছে ‘বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা’। সংস্থাটির ২০১৯ সালের দেয়া তথ্য মতে জানা যায় ৩২টি এন্টিবায়োটিক বাস্তবে প্রয়োগ করার আগে পরীক্ষা-নিরীক্ষার মধ্যে থাকবে। যেগুলোর মধ্যে মাত্র ৬টি সম্পূর্ণ নতুন উদ্ভাবিত। প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ মানুষ মারা যায় এন্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্সের কারণে। চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশন ছাড়া ওষুধ সেবন, ওষুধের কোর্স সম্পন্ন না করায় এই এন্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স হয়। আর এ বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টি করতে পাঠ্যপুস্তকে যোগ করা হচ্ছে ‘এন্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স’ বিষয়টি। এতে জটিল নানা রোগ প্রতিরোধ করা যাবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর চট্টগ্রামের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক এস এম সুলতানুল আরেফিন এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘এন্টিবায়োটিক ওষুধ ফুল কোর্স সম্পন্ন না করলে মানবদেহে মারাত্মক ক্ষতি হয়। তাই এন্টিবায়োটিক ওষুধ সেবন, ক্রয়-বিক্রয়ে সকলকে সচেতন করতে হবে। তবে এ নিয়ে একটি সুখবর আছে তা হলো- ‘এন্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স’ বিষয়টি পাঠ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে। এটির বাস্তবায়ন প্রায় শেষ। এখন বিষয়টি মন্ত্রিসভায় রয়েছে। আশা করি আগামী ২ বছরের মধ্যে তা পাঠ্যপুস্তকে আসবে। যার ফলে রেজিস্ট্যান্সের ভয়াবহতা সম্পর্কে জানা যাবে। এছাড়া আমরা এখন প্রতি মাসে ২-৩ বার বিভিন্ন উপজেলায় এন্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স সম্পর্কে সচেতনতামূলক কর্মশালার আয়োজন করি। সেখানে অত্র এলাকার ওষুধ ব্যবসায়ী ও মানুষের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টি করা হয়। আগে কোনো আইন ছিলো না। যার কারণে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যেত না। বর্তমানে ‘ওষুধ ও প্রসাধনী আইন, ২৩’ – হয়েছে। অনিয়ম পেলেই সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়া হবে’।
তিনি বলেন, ‘সকল ওষুধের গায়ে এখন লাল বর্ডার দিয়ে ‘এন্টিবায়োটিক’ লেখা থাকে। সকল ওষুধ কোম্পানিকে বিষয়টি বলা হয়েছে এটা। গত ১ বছর ধরে এ লেখাটি রাখা হচ্ছে। তবে এখনও কিছু ওষুধের গায়ে লেখা নাও থাকতে পারে। কারণ অনেকের কাছে পুরোনো ওষুধও থাকতে পারে। যেটা তারা ১২-১৩ মাস আগে তৈরি করেছিলেন। কিন্ত আইন হওয়ার পর সকল এন্টিবায়োটিক ওষুধে ‘এন্টিবায়োটিক’ লেখা থাকে। লাল বর্ডার দিয়ে ওষুধের গায়ে ‘এন্টিবায়োটিক’ লেখাটি যাতে দৃষ্টিগোচর হয় সেভাবে মার্ক করে দেয়া রয়েছে’।
এন্টিবায়োটিক কোর্স সম্পন্ন না করলে কি হয় এমন প্রশ্নে চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াছ বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এন্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্সকে মানব সভ্যতার ১০টি স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্যে অন্যতম হিসাবে ঘোষণা করেছে। বর্তমানে প্রতিবছর ১২ লক্ষ ৭০ হাজার লোক মারা যায় এন্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্সে।
এন্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স কেন হয়?
ওষুধ প্রশাসনের পরিচালক এস এম সুলতানুল আরেফিনসহ চিকিৎসার সাথে সংশ্লিষ্টদের বরাত দিয়ে জানা গেছে এটা হওয়ার অন্যতম কারণ হলো বিনা প্রয়োজনে এবং চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশন ছাড়া ওষুধ সেবন করা। একই সঙ্গে এন্টিবায়োটিকের কোর্স পুরোপুরি সম্পন্ন না করায় এমন রেজিস্ট্যান্স হয়। যার ফলে মানব শরীরে জীবাণুটি অর্ধমৃত থাকে। পরের বার একই অসুখে ওষুধ সেবন করলে তা আর কাজ করে না। সৃষ্টি হয় জটিল রোগ।
ড্রাগিস্ট সমিতি চট্টগ্রাম জেলার সহ-সভাপতি লায়ন আশীষ কুমার ভট্টাচার্য্য বলেছেন, ‘ওষুধ বিক্রির সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের ‘বাংলাদেশ সার্টিফিকেট রেজিস্ট্রেশন কোর্স’ ও ড্রাগ লাইসেন্স বাধ্যতামূলক। এ প্রক্রিয়ায় ভর্তি হতে একজন শিক্ষার্থীকে এসএসসি সমমান উত্তীর্ণ হতে হবে। এটি মূলত ৩ মাসের একটি কোর্স। এতে ভর্তি হতে সরকারিভাবে ২ হাজার ৩৫০ টাকা এবং পরীক্ষার ফি নেওয়া হয় ১ হাজার ৫০০ টাকা। চলতি বছর সারাদেশে এই কোর্সে ভতি হওয়ার জন্য সার্কুলার দেওয়া হয়েছে ২৫ মার্চ। ভর্তি শুরু হয় ১৬ এপ্রিল থেকে। এ কোর্সে এবার চট্টগ্রামে ১ হাজার ২০০ জন ভর্তি হয়েছে। উল্লেখ্য, এই কোর্স সম্পন্ন করতে পারলে বিদেশে গেলে ফার্মেসিতে দ্রুত চাকরি মিলবে। যার কারণে কোর্সটির চাহিদাও বেড়েছে’।