পাখির জ্বর

নূরনাহার নিপা »

পাখির খুব জ্বর। জ্বরের তাপে বুকটা ধড়ফড় করছে।

পাখি একবার আকাশের দিকে তাকালো। তার কাছে সবকিছু ঝাপসা ঝাপসা লাগছে।  টিপটিপ বৃষ্টি ঝরছে। হাওয়ার সাথে দোলে পাখিটার বাসা। ভয়ে পাখি নড়েচড়ে বসে গাছের ডালে। হঠাৎ পাখির মনে প্রশ্ন জাগে।

আমি কেন এই পৃথিবীতে এসেছি? সে ভাবল,এই প্রশ্নের উত্তর পেতে হলে তো  তাকে অন্য প্রাণীদের সাথে মিশতে হবে। জানতে হবে সব।

সিংহ মামা বনের রাজা। একটু সুস্থ হলে প্রথমেই তার সাথে দেখা করতে হবে। বিশাল জলরাশিতে ছোট, বড়, মাঝারি মাছ। টলমল জলেতে সাঁতার কাটে। এদিক -ওদিক ছুটে  বেড়ায়। দেখে এবার ইচ্ছে হলো  মাছের মতো সাঁতার কাটতে। সবার কি আর ইচ্ছা পূরণ হয়? হতেও পারে। পাখি ভাবে।

রোজ একটা বাচ্চা মাছ পাখির সাথে গল্প করতে আসে। মাছ পাখিকে বলে, তোমাকে শুকনো লাগছে কেন পাখি?

পাখি বলল – আর বলো না, গত কয়দিন আমার অনেক জ্বর ছিল।

মাছ বলল,  তাহলে আমাকে বলোনি কেন?

বললে কী হতো?

আমি তোমাকে দেখতে আসতাম।

পাখি খুব খুশি হয়ে বলল – থ্যাংক ইউ।

মাছ আর পাখি গল্প করছিল। এমন সময় বনের রাজা সিংহ পাখিকে খুঁজতে আসে।

সিংহ বলে, কইরে পাখি তোর দেখা নাই ক্যান?

মাছ ভয় পেয়ে গেল। এত বড় প্রাণী পাখির বন্ধু হয় কী করে?

সিংহ এবার  বলল, আমাকে ভয় পেলে হবে না। আমিও তোমাদের আপন হতে চাই। বুঝলে মাছ? বড়দের সাথে মিশতে হবে। ঘুরে দেখতে হবে বিশাল এই আকাশ।

কিন্তু কীভাবে? আমি তো পাখি না। যদি পাখি হতাম তাহলে আকাশে উড়ে বেড়াতাম।

পাখি  হা হা করে হাসে। বলে, তুমি আমার মতো উড়তে চাও? তুমি বোধহয় পাগল হয়ে গেছো। কী বোকা তুমি।

এটা কি সম্ভব?  কোথায় আমি আর কোথায় তুমি!

সিংহ বলল, ছোকরা মাছ বলে কী?  তুমি তো মাছ। তোমার জীবন বাঁচবে জলে। যাদের যেখানে জায়গা।

বিশাল জলরাশিতে ছোট, বড়, মাঝারি মাছ। টলমল জলেতে সাঁতার কাটে। এদিক -ওদিক যায়।

এসব দেখে  এবার  সিংহের ইচ্ছে হলো  মাছের মতো সাঁতার কাটতে। সবার কি আর ইচ্ছা পূরণ হয়? হতেও পারে।

সিংহ এবার  বলল -আমাকে ভয় পেলে হবে না। আমিও তোমাদের আপন হতে চাই। বুঝলে মাছ? বড়দের সাথে মিশতে হবে। ঘুরে দেখতে হবে বিশাল এই আকাশ। কিন্তু কীভাবে। আমি তো পাখি না।

তারপর মাছটির চিন্তার ছেদ পড়েছে।

সিংহ বলল, পাখি, মাছ কি তোমার নতুন বন্ধু?

মাছ বলল, হ্যাঁ  সিংহ দাদু।

মাছ সিংহকে বলল, সিংহ দাদু, তুমি কেমন আছো?

সিংহ বলল, আমি ভালো আছি। তুমি কেমন আছো মাছ?

মাছ বলল- আমিও ভালো আছি

সিংহ বলে, আজ থেকে তুমিও আমার বন্ধু।

মাছ বলল, শুনে অনেক ভালো লাগছে। ভীযণ ভালো লাগছে।

সিংহ বলল, আমার চিড়িয়াখানায় থাকতে মন চায় না।তাই পালিয়ে এসেছি এই জঙ্গলে। আমরা সবাই মুক্ত মনে চলবো। একটু পর হরিণও ওদের সাথী হয়ে গেল। আগে সিংহকে দেখলে যেরকম ভয় পেত আজ তার কিছুই পাচ্ছে  না। ওরা সবাই নির্ভয়ে চলতে লাগল।এই প্রথম খোলা আকাশে নিঃশ্বাস নেয়ার পর হরিণের  মনে হলো পৃথিবীটা অনেক সুন্দর।

মাছ বলল,  ইশ! যদি পাখি হতাম। তাহলে আকাশে উড়ে যেতাম। পাখি হা হা করে হেসে বলল,  তুমি আমার মতো উড়তে চাও? তুমি বোধহয় পাগল হয়ে গেছো। কী বোকা তুমি।

এটাও কি সম্ভব?  কোথায় আমি আর কোথায় তুমি!

সিংহ বলল, কী বলছো এসব? তুমি তো মাছ। তোমার জীবন বাঁচবে জলে। যার যেখানে জায়গা তাকে তো সেখানে মানাবে।

মাছ বলল, সিংহ দাদু  আমি কেন যে মাছ হলাম! যেকোনো সময় জেলেরা আমাদের ধরে ফেলে। তারপর রান্না করে তাদের পেট ভরায়। আমাদের কোন চাওয়া-পাওয়া, সম্মান কিছু নেই। সব সময় আমরা জলে চিন্তিত থাকি। ধুকে ধুকে মরার জন্যই বোধহয় আমাদের জন্ম হয়েছে।এই বিরাট জলাশয়ে নানা রকম পাথর এবং ছোট ছোট গাছপালা, কিছু পোকামাকড় এসব নিয়েই তো আমাদের বসবাস।

সিংহ বলল,  তাহলে দাদু তুমি কী করবে?

মাছ বলল,  দাদু, তুমি তো বনের রাজা। তুমি তোমার বুদ্ধি দিয়েই একটু সাহায্য করতে পারো।

সিংহ শুনে কিছুক্ষণের জন্য চিন্তায় পড়ে গেল। পাখির দিকে তাকিয়ে সে বলল, তুমি তোমার পাকনাতে ভর করে মাছকে নিয়েই আকাশটা ঘুরে দেখাও, তাহলে তো হয়ে যায়।

মাছ উল্লাসে বলল, কী  মজা—  কী মজা—!

এইভাবে প্রত্যেক দিন কাজ শেষে পাখি মাছকে নিয়ে সন্ধ্যায় ঘুরে বেড়ায়। মাছ  মহানন্দে আকাশে ভাসতে ভাসতে তার ইচ্ছে পূরণ করে।