
পাকিস্তানি বাহিনীর বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করার বিষয়টি অবান্তর বলে মন্তব্য করেছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) সহ-উপাচার্য (একাডেমিক) অধ্যাপক মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খান।
আজ রোববার (১৪ ডিসেম্বর) শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসের আলোচনা সভায় তিনি বলেছেন, ‘যে সময় আমি (পাকিস্তানি বাহিনী) দেশ থেকে পালানোর জন্য চেষ্টা করছি, আমি জীবিত থাকব না মৃত থাকব, সে বিষয়ে কোনো ফয়সালা হয়নি, সে সময় পাকিস্তানি যোদ্ধারা বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করবে, এটি আমি মনে করি রীতিমতো অবান্তর।’
বেলা ১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য দপ্তরে ‘মুক্তচিন্তা, মুক্তিযুদ্ধ এবং একাত্তরের বুদ্ধিজীবী হত্যা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে অধ্যাপক মো. শামীম উদ্দিন খান এ কথা বলেন।
মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খান বলেন, ‘আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে এ দেশকে আরেকটা দেশের করতরাজ্যে পরিণত করার জন্য বুদ্ধিজীবীদের ষড়যন্ত্রমূলক হত্যা করা হয়েছে। আমরা আজ পর্যন্ত জহির রায়হানকে খুঁজে পাইনি। যদি জহির রায়হানকে খুঁজে পাওয়া যেত, সত্যিকার ইতিহাস আমরা পেতাম।’
মুক্তিযুদ্ধে শহীদের সংখ্যা নিয়েও সংশয় প্রকাশ করেন সহ-উপাচার্য। তিনি বলেন, ‘গতকাল রাতে টিভি টক শোতে দেখলাম, আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আখতারুজ্জামান সাহেব (জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতিতে যোগ দেওয়া সাবেক সংসদ সদস্য মেজর (অব.) আখতারুজ্জামান) বক্তব্য রাখছেন। তাঁকে যখন প্রশ্ন করা হলো যে “আপনি তো বলতেন, ১৯৭১ সালে লাখ লাখ লোক শাহাদাত বরণ করেছেন। এখন আপনি এর বিপরীতে রাজনীতিতে যুক্ত হলেন, এটি কেন?” তিনি বললেন, ‘‘এগুলো হচ্ছে রেটরিক (আলংকারিক) বক্তব্য। এগুলো তো সত্য নয়।”’
শামীম উদ্দিন খান বলেন, ‘রেটরিক বক্তব্য আমরা জাতির সামনে শুনতে চাই না। আমরা রিয়েলিটি চাই। আমরা সত্যিকারভাবে বাংলাদেশে কী ঘটেছিল ১৯৭১ সালে, সেই ঘটনায় কারা কারা শহীদ হয়েছেন, সেই তথ্য আমরা জানতে চাই। কারা কারা হত্যা করেছে, সেই তথ্য এখন পর্যন্ত আমাদের জানা হয়নি।’
১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর কী হয়েছিল, তা জানতে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে স্বাধীন নিরপেক্ষ কমিশন গঠন করার অনুরোধ করেন শামীম উদ্দিন খান। তিনি বলেন, ‘আজ পর্যন্ত শহীদের তালিকা তৈরি হয়নি। আজ পর্যন্ত রাজাকারের তালিকা তৈরি হয়নি। শুধু আমরা বক্তব্য দিয়ে জাতিকে একের পর এক বিভ্রান্ত করেছি। আর জাতিকে বিভক্ত করেছি। অনুরোধ করব, সবাইকে এই অপপ্রচার থেকে জাতিকে নিষ্কৃতি দেন। জাতিকে একটা সঠিক দিশা দেন।’
অধ্যাপক শামীম উদ্দিন খান বলেন, ‘বাংলাদেশে আজ পর্যন্ত যতগুলো হত্যাকাণ্ড ঘটেছে, প্রাথমিকভাবে আমরা সবাই জানি যে কোনো একটা গোষ্ঠীর ওপর দায়ে চাপানো হয়। কোনো ব্যক্তির ওপর দায় চাপানো হয়। পরে ১৫ বছর, ২০ বছর পর দেখি যে আসলে প্রকৃত আসামি আরেকজন। এই বিষয়গুলো কেন হচ্ছে? একের পর এক ন্যারেটিভ (বয়ান) তৈরি করা হচ্ছে। একটা জাতিকে পদাবনত করার জন্য আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র চলছে।’
মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খান বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাইন্যান্স বিভাগের অধ্যাপক। গত বছর ২৩ সেপ্টেম্বর তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য পদে দায়িত্ব নেন। তিনি এর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএনপি ও জামায়াতপন্থী শিক্ষকদের রাজনৈতিক সংগঠন ‘সাদা দলের’ আহ্বায়ক ছিলেন। তবে বিএনপিপন্থী শিক্ষকদের ‘জাতীয়বাদী শিক্ষক ফোরাম’ নামে আলাদা একটি সংগঠন আছে। ওই সংগঠনের নেতা-কর্মীদের দাবি, সাদা দল শুধু জামায়াতপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক হোসেন শহীদ সরওয়ার্দী এই সভার সঞ্চালনা করেন। সহ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক মো. কামাল উদ্দিনের সভাপতিত্বে এতে প্রধান অতিথি ছিলেন উপাচার্য অধ্যাপক মুহাম্মদ ইয়াহইয়া আখতার। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম, ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক মো. আনোয়ার হোসেন, অতীশ দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞান হলের প্রাধ্যক্ষ ও রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক এ জি এম নিয়াজ উদ্দিন, সিন্ডিকেট সদস্য অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ, চাকসুর সহসভাপতি (ভিপি) মো. ইব্রাহীম, সাধারণ সম্পাদক সাঈদ বিন হাবিব, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আইয়ুবুর রহমান প্রমুখ।
সহ–উপাচার্যের বক্তব্যের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মুহাম্মদ ইয়াহ্ইয়া আখতার বলেন, অনলাইনে মিটিং থাকায় তিনি সভা থেকে কয়েকবার উঠে গিয়েছিলেন। ফলে সহ–উপাচার্যের বক্তব্য তিনি শোনেননি। মনোসংযোগ করতে পারেননি। তাই এ বিষয়ে তিনি কিছু বলতে চান না।

















































