পাকিস্তানকে টেস্টে হারিয়ে বাংলাদেশের ইতিহাস

ম্যাচ জিতে উল্লাস বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের। ছবি: সংগৃহীত

সুপ্রভাত স্পোর্টস ডেস্ক »

২০০৩ সাল। মুলতান টেস্টে জয়ের খুব কাছে গিয়েও হেরেছিল বাংলাদেশ। টেস্টে তখন বাংলাদেশ ‘হাঁটি হাঁটি পা পা’। সুযোগ পেয়েও মোহাম্মদ রফিক মানকাডিং না করায় পাকিস্তানকে রক্ষা করেন ইনজামাম উল হক। মানকাড আউট হলো একজন বোলারের বল ডেলিভারি দেওয়ার আগ মুহূর্তে নন স্ট্রাইক প্রান্তে থাকা ব্যাটসম্যান কিছুটা সামনে এগিয়ে গেলে বোলার যদি স্টাম্প ভেঙে দেন তাহলে তিনি আউট হিসেবে ঘোষিত হবেন। সেবার ১ উইকেটে হেরেছিলেন হাবিবুল বাশার-খালেদ মাহমুদরা। ২১ বছর পর এবার ক্রিকেটে প্রথমবার পাকিস্তান জয় করলেন মুশফিকুর রহিম-সাকিব আল হাসান-মেহেদী মিরাজরা।

পাকিস্তানের বিপক্ষে টেস্টে জয়ের নজির নেই বাংলাদেশের। ২০০৩ সালে পাকিস্তানের মাটিতে মুলতানে সেই মুহূর্ত তৈরি হলেও দীর্ঘশ্বাস নিয়েই লাল-সবুজরা মাঠ ছেড়েছে! ২০২৪ সালে এসে হলো অসাধ্য সাধন। রাওয়ালপিন্ডিতে পাকিস্তানকে ১০ উইকেটের বড় ব্যবধানে হারিয়ে প্রথম কোনও টেস্ট জয়ের ইতিহাস গড়লো শান্তর দল।

বিদেশের মাটিতে এমনিতেও জয়ের খুব বেশি নজির বাংলাদেশের নেই। পাকিস্তানের বিপক্ষে এর আগে ১৩ টেস্টের মধ্যে ১২ বারই হেরেছিল বাংলাদেশ। সেরা সাফল্য ছিল ড্র। পাকিস্তানের বিপক্ষে অধরা সেই জয় অবশেষে ধরা দিয়েছে। সেটাও আবার প্রতিপক্ষের ঘরের মাঠে, ১০ উইকেটের বিশাল ব্যবধানে। দেশের বাইরে বাংলাদেশের এটি মাত্র সপ্তম জয়, সব মিলিয়ে ২০তম।

চতুর্থ দিন পর্যন্ত মনে হচ্ছিল এই টেস্ট এগুচ্ছে নিষ্প্রাণ ড্রয়ের দিকে। শেষ দিনে পেস-স্পিনের মিশেলে দুর্দান্ত বোলিংয়ে চিত্রপট বদলে দেন বাংলাদেশের বোলাররা। দলকে পাইয়ে দেন রোমাঞ্চকর এক জয়।

পাকিস্তানের দ্বিতীয় ইনিংস মাত্র ১৪৬ রানে গুটিয়ে আনেন স্রেফ ৩০ রানের লক্ষ্য। সেটা পেরুতে ৬.৩ ওভারের বেশি খেলা লাগেনি। দেশের বাইরে টেস্টে এটি বাংলাদেশের সপ্তম জয়। মাউন্ট মাঙ্গানুইতে নিউজিল্যান্ডকে হারানোর পর এই জয়কেই নিজেদের টেস্ট ইতিহাসে বড় করতে রাখতে হয়।

বাংলাদেশের জেতার ভিত তৈরিতে বড় ভূমিকা অবশ্য ব্যাটারদের। স্বাগতিকদের ৪৪৮ রানের জবাবে ৫৬৫ রান তুলে ১১৭ রানের লিড নিয়ে চমকে দেয় শান্তর দল। অভিজ্ঞ মুশফিকুর রহিম খেলেন ১৯১ রানের ইনিংস। ওপেনার সাদমান ইসলামের ব্যাট থেকে আসে ৯৩ রান। মেহেদী হাসান মিরাজ ব্যাটিংয়ে ৭৭ রানের পর বোলিংয়েও ৪ উইকেট নিয়ে রাখেন বড় ভূমিকা। উইকেটের পেছনে ৬টি ডিসমিসালের পাশাপাশি ব্যাটিংয়ে ফিফটি করেন লিটন দাস, ফিফটি আসে মুমিনুল হকের ব্যাট থেকেও।

নতুন বলে শরিফুল ইসলাম, হাসান মাহমুদরা দুই ইনিংসেই রাখেন ঝাঁজালো ভূমিকা। অর্থাৎ সম্মিলিত পারফরম্যান্সেই ডানা মেলে ধরে বাংলাদেশ।

এই টেস্টের প্রথমদিনের বেশিরভাগটা ভেসে গিয়েছিল বাজে আবহাওয়ায়। এরপর ব্যাট করতে নেমে শুরুর বিপর্যয় কাটিয়েও বড় রানের দিকে ছুটছিল পাকিস্তান। দ্বিতীয় দিন বিকালে ৬ উইকেটে ৪৪৮ রান তুলে ইনিংস ছেড়ে দেয় তারা। বাংলাদেশও দিতে থাকে জোরালো জবাব। নিবেদন, চেষ্টা, চোয়ালবদ্ধ দৃঢ়তায় ইনিংস টেনে নিতে থাকেন ব্যাটাররা। পাকিস্তানের পুঁজি ছাপিয়ে অনেক দূর চলে যায় বাংলাদেশ।

চতুর্থ দিন বিকেলে এসে বড় লিড নেওয়ার পরই পরিষ্কার হয়ে যায় আর যাইহোক এই টেস্টে হারছে না বাংলাদেশ। তবে জেতার আশা তখনো ছিলো বাড়াবাড়ি। চতুর্থ দিন শেষে ১ উইকেটে ২৩ তুলেছিল পাকিস্তান। তখনো ড্রই ছিলো সম্ভাব্য ফলাফল।

তবে পঞ্চম দিনে হিসেব বদলে দিতে থাকে বাংলাদেশ। সকালেই দারণ বল করে হাসান মাহমুদ কাবু করেন শান মাসুদকে। বাবর আজম শূন্য রানে জীবন পেলেও ইনিংস বড় করতে পারেননি।

নাহিদ রানা বাবর আজমকে থামান গুরুত্বপূর্ণ সময়ে। এরপরই স্পিন ভেল্কি শুরু সাকিব-মিরাজের। রাজনৈতিক পালাবদলের পর দেশে সাকিবের বিরুদ্ধে হয়েছে হত্যা মামলা, তাকে জাতীয় দল থেকে বাদ দেওয়ার উকিল নোটিসও দেওয়া হয়েছে বিসিবিকে। এসব চাপ একদম নিজের উপর পড়তে দেননি বাংলাদেশের সফলতম ক্রিকেটার।

সাউদ শাকিল, আব্দুল্লাহ শফিকের মহা গুরুত্বপূর্ণ দুই উইকেট নিয়ে দলের সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেন তিনি। পরে নাসিম শাহকে আউট করে ধরেন তৃতীয় শিকার।

মিরাজ ব্যাট হাতে ঝলক দেখানোর পর নিজের আসল কাজেও ছিলেন পটু। শেষ দিনের উইকেট ভেঙে যাওয়ায় তা থেকে মিলে টার্ন, বাউন্স। কিছু বল নিচুও হচ্ছিলো। সব মিলিয়ে মিরাজ হয়েছে উঠেন দুর্ধর্ষ। ৪ উইকেট তুলেন তিনি।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

পাকিস্তান : ৪৪৮/৬ ডি. ও ১৪৬ (রিজওয়ান ৫১, শফিক ৩৭, বাবর ২২, মাসুদ ১৪; মিরাজ ৪/২১, সাকিব ৩/৪৪)।

বাংলাদেশ: ৫৬৫ ও ৩০/০ (জাকির ১৫*, সাদমান ৯*)।

ফল: বাংলাদেশ ১০ উইকেটে জয়ী।

ম্যান অব দ্য ম্যাচ: মুশফিকুর রহিম।

সিরিজ: দুই ম্যাচ সিরিজে বাংলাদেশ ১–০ ব্যবধানে এগিয়ে।