সুপ্রভাত ডেস্ক »
ভর্তুকির ভার কমাতে পাইকারিতে বিদ্যুতের দাম ১৯ দশমিক ৯২ শতাংশ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত দিয়েছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। এর ফলে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ বিতরণ সংস্থাগুলোর কাছে বিক্রি করবে ৬ টাকা ২০ পয়সা, যা আগে ৫ টাকা ১৭ পয়সা ছিল। খুচরা গ্রাহক পর্যায়ে আপাতত এর কোনো প্রভাব পড়বে না। খবর বিডিনিউজের।
বিইআরসি চেয়ারম্যান মো. আবদুল জলিল সোমবার এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘১৭ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকির কথা’ বিবেচনা করে বিদুতের বাল্ক মূল্য হার পুনঃনির্ধারণের এই সিদ্ধান্ত তারা দিচ্ছেন। ডিসেম্বর মাসের বিল থেকে এই নতুন মূল্যহার কার্যকর হবে।
কমিশন হিসাব করে দেখেছে, নতুন মূল্য কার্যকর হওয়ার ফলে পিডিবির আয় বছরে আট হাজার কোটি টাকা বাড়বে। ইউনিট প্রতি দাম বাড়িয়ে ৮ টাকা ২৮ পয়সা করলে পিডিবি পুরো ১৭ হাজার কোটি টাকার ভর্তুকি থেকে পিডিবি মুক্ত হতে পারত।
নতুন পাইকারি মূল্যহার অনুযায়ী শহরাঞ্চলে বিদ্যুৎ বিতরণে নিয়োজিত ডেসকোর ৩৩ কেভি লাইনে প্রতি কিলোওয়াট ঘণ্টা বিদ্যুতের দাম ধরা হয়েছে সর্বোচ্চ ৭ টাকা ৭৪ পয়সা।
আর ডিপিডিসির ৩৩ কেভি লাভনের বিদ্যুতের দাম ধরা হয়েছে প্রতি কিলোওয়াট ঘণ্টা ৭ টাকা ৭২ পয়সা।
বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের সমিতিগুলোর ৩৩ কেভি লাইনের জন্য প্রতি কিলোওয়াট ঘণ্টা বিদ্যুতের দাম ধরা হয়েছে ৫ টাকা ৩৯ পয়সা যা,
পাইকারি বিদ্যুতের সর্বনি¤œ দর।
এছাড়া মোট ছয় কোম্পানির ২৩০ কেভি, ১৩২ কেভি ও ৩৩ কেভি লাইনের জন্য পৃথক ট্যারিফ ঠিক করা হয়েছে।
সর্বশেষ ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে বিদ্যুতের পাইকারি দর ইউনিট প্রতি (প্রতি কিলোওয়াট ঘণ্টা) ৫ টাকা ১৭ পয়সা নির্ধারণ করে দিয়েছিল বিইআরসি।
চলতি বছরের ১২ জানুয়ারি নিজেদের ৩০ হাজার কোটি টাকার বিশাল ঘাটতির তথ্য তুলে ধরে বিদ্যুতের পাইকারি দাম ৬৬ শতাংশ বাড়িয়ে ৮ টাকা ৫৮ পয়সা করার প্রস্তাব নিয়ে আসে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড-পিডিবি। তবে সেই আবেদনে বেশ কিছু অসঙ্গতি ও তথ্যের ঘাটতি তুলে ধরে তা ফেরত পাঠায় নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিইআরসি।
দ্বিতীয় দফায় আবারও আবেদন করে পিডিবি। সেই আবেদনের ওপর গত ১৮ মে গণশুনানি হয়। আরও কিছু তথ্য ও লিখিত মতামতের জন্য ৩১ মে পর্যন্ত পিডিবিকে সময় দেয় বিইআরসি। কারিগরি কমিটি পিডিবির ১৭ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকির হিসাব দাঁড় করিয়ে তা পোষাতে বিদ্যুতের দাম ৫৮ শতাংশ দাম বাড়ানোর পরামর্শ দেয়।
তবে ১৩ অক্টোবর সংবাদ সম্মেলন করে শুনানির আদেশ ঘোষণার দিন সবাইকে অবাক করে পাইকারি বিদ্যুতের দাম অপরিবর্তিত রাখার কথা জানিয়েছিলেন বিইআরসির চেয়ারম্যান।
এর ৪০ দিনের মাথায় আবার কেন দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হল? এর ব্যাখ্যায় বিইআরসির চেয়ারম্যান সোমবার বলেন, শুনানি ও পরবর্তী মতামত বিশ্লেষণ করে দাম বাড়ানো হলে এর অনিবার্য প্রভাব নিরসনের বিষয়ে পিডিবির ভূমিকা কী হবে সেই বক্তব্য আগে পাওয়া যায়নি। বিদ্যুতের ক্রয়- সংক্রান্ত কিছু তথ্যেরও ঘাটতি ছিল তখন। এছাড়া বৃহৎ ক্রেতা হিসাবে পিডিবি ছাড়াও অন্যান্য সংস্থা বিভিন্ন বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে সরাসরি বিদ্যুৎ কিনছে জানতে পেরে সে বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য চাওয়া হয়েছিল।
‘এসব সমস্যার সমাধান করে ১৩ নভেম্বর পিডিবি আদেশ পুনর্বিবেচনার আবেদন দাখিল করে। সেই আবেদন বিবেচনায় নিয়ে, বিস্তারিত পর্যালোচনা ও পরীক্ষা শেষে আজকের আদেশটি দেওয়া হল।’
নতুন আদেশের ফলে বিদ্যুতের খুচরা গ্রাহকদের দামে কোনো পরিবর্তন আসবে না জানিয়ে বিইআরসির সদস্য মোহাম্মদ বজলুর রহমান বলেন, ‘খুচরা বিদ্যুতের দাম বাড়াতে হলে কমিশনে আবেদন করতে হবে। সেই আবেদনের ওপর গণশুনানি হবে। এর আগে ভুতাপেক্ষ বিবেচনায় কোনো দাম বাড়ানো যাবে– আদেশে সেটা বলে দেওয়া হয়েছে।’
মূল্য বৃদ্ধির বাড়তি চাপ কোম্পানিগুলো কীভাবে পূরণ করবে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, “কতটা বাড়তি চাপ হবে সেটা আমরা এখনও জানি না। এর ফলে তাদের লোকসান হবে নাকি লাভের অংক কমে যাবে সেটা হিসাব করলে বলা যাবে।’
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছ থেকে ৪৫০ কোটি ডলার ঋণ পাওয়ার বিষয়ে সম্প্রতি সমঝোতায় পৌঁছেছে বাংলাদেশ সরকার। ওই ঋণের জন্য বিভিন্ন শর্তের কথা তখন আলোচনায় আসে। আইএমএফ প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ সফরের সময় বিইআরসির সঙ্গেও বৈঠক করে। আইএমএফের চাপেই বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হচ্ছে কিনা, সেই প্রশ্ন রাখা হয়েছিল বিইআরসি চেয়ারম্যানের কাছে।
উত্তরে তিনি বলেন, ‘আমরা কোন পদ্ধতিতে বিদ্যুতের মূল্যহার ঠিক করি তারা সেটা বুঝতে চেয়েছে। আমরা তাদের বোঝানোর পর এ নিয়ে তারা আর কিছুই বলেনি। বিদ্যুতের মূল্যহার বাড়ানোর বিষয়ে আইএমএফের কোনো বক্তব্য ছিল না। তাদের চাপে পড়ে এই মূল্যবৃদ্ধি ঘটেনি।’