ভূঁইয়া নজরুল :
মঙ্গলবার একদিনে চট্টগ্রামে ৮৫ জন করোনা শনাক্ত হয়ে মোট সংখ্যা ৪১৯ জনে গিয়ে ঠেকেছে। এক সপ্তাহ আগে গত বুধবার (৬ মে) চট্টগ্রামে করোনা রোগীর সংখ্যা ছিল ১৪০ জন। অর্থাৎ, এক সপ্তাহে করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়েছে তিনগুণ। হঠাৎ করে এতো বেড়ে গেল কেন করোনা রোগীর সংখ্যা?
চট্টগ্রামে গত ৩ এপ্রিল প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হওয়ার পর শতক পূর্ণ হয়েছিল একমাস পরে। ৪মে তারিখে চট্টগ্রামে আক্রান্তের সংখ্যা ১০৭ জন হয়। পরবর্তী ১০০ জন হতে সময় নিয়েছিল মাত্র চারদিন, অর্থাৎ ৮মে তারিখে চট্টগ্রামে সংক্রমিত রোগীর সংখ্যা দাঁড়ায় ২০৮ জনে। আর ৮মে তারিখে যেখানে ২০৮ জন ছিল চারদিন পর ১২মে তারিখে রোগীর সংখ্যা হয় ৪১৯ জন। চারদিনে দ্বিগুণ হয়ে গেল। কেন এই বিস্তার?
এই প্রশ্নের উত্তর জানতে একাধিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের সাথে কথা বলে জানা যায় মূলত পাঁচ কারণে বাড়ছে রোগীর সংখ্যা। প্রথমত- পরীক্ষার সংখ্যা বেড়েছে, যথারীতি রোগী শনাক্তের হারও বেড়েছে। দ্বিতীয়ত- লকডাউন মেনে না চলায় দ্রুত বাড়ছে সংক্রমণ। তৃতীয়ত- গার্মেন্টস ও শিল্প কারখানায় বেড়ে গেছে শ্রমিক কর্মচারীদের উপস্থিতি। চতুর্থত- রাস্তাঘাটে চলাফেরায় মানুষ সামাজিক দূরত্ব মানছে না। পঞ্চমত- ব্যাংকগুলোতে মানুষ নিজেরাই নিজেদের সুরক্ষা মেনে চলছে না।
চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বী বলেন, মে মাসজুড়েই বাড়তে থাকবে সংক্রমণের হার। গার্মেন্টসহ বিভিন্ন শিল্প কারখানা খুলে দেয়ায় এবং লকডাউন শিথিল হওয়ায় করোনা সংক্রমণ যে বাড়বে তা আমাদের অনুমেয় ছিল। ফলে সেই হারে বাড়ছে। সামাজিক সংক্রমণ এখন খুব দ্রুত হচ্ছে। আর এই প্রবৃদ্ধি তাই নির্দেশ করছে।
সামাজিক সংক্রমণের উদাহরণ দিতে গিয়ে বাংলাদেশ মেডিক্যাল এসোসিয়েশন চট্টগ্রামের সাধারণ সম্পাদক ডা. ফয়সল ইকবাল চৌধুরী বলেন, আমাদের সাবেক মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর ছোট ছেলে করোনায় সংক্রমিত হওয়ার পর উনার স্ত্রী হাসিনা মহিউদ্দিনসহ ওই বাসার আরো দুই জন সংক্রমিত হয়েছেন। ঈদগাহ এলাকায় এক বাসায় সাতজন করোনায় সংক্রমিত হয়েছেন। এভাবে একটি পরিবারে অনেকে আক্রান্ত হচ্ছে এবং এতে দ্রুত আক্রান্ত বাড়ছে।
রাস্তাঘাটে সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্য সুরক্ষা বিষয়গুলো মানা হচ্ছে না জানিয়ে তিনি বলেন, গার্মেন্টসের শ্রমিকদের বাসে করে কারখানায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। সেই বাস আবার অফ টাইমে শহরের ভেতরে যাত্রী আনা নেয়া করছে। তাহলে এই শহরে করোনা বাড়বে এটাই স্বাভাবিক। আমরা কেউ সুরক্ষা মানছি না।
এই সুরক্ষা না মানার বিষয়ে জেলা প্রশাসনের নির্বাহি ম্যাজিস্ট্রেট ও কাট্টলী সার্কেলের সহকারী কমিশনার (ভূমি) তৌহিদুল ইসলাম বলেন, এখন মানুষের মধ্যে নিজের সুরক্ষার বোধটুকু নেই। ব্যাংকগুলোতে নিরাপদ দূরত্ব মেনে থাকার পরামর্শ দেয়া হলেও গ্রাহকরা মানছে না। এখন মানুষ জীবনের চেয়ে জীবিকাকে বেশি প্রাধান্য দিচ্ছে। আর তাতেই বাড়ছে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা।
তবে পরীক্ষা যেহেতু বাড়ছে রোগী স্বাভাবিকভাবেই বাড়বে উল্লেখ করে ফৌজদারহাট বিআইটিআইডি ল্যাব প্রধান ডা. শাকিল আহমেদ বলেন, ‘চট্টগ্রামে এখন পরীক্ষা বেড়েছে তাই স্বাভাবিকভাবেই করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়বে। তবে এখন সামাজিক সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় তা দ্রুত বাড়তে থাকবে। লকডাউনেও চলছে শিথিলতা, ফলে বাড়ছে রোগীর সংখ্যা।’
উল্লেখ্য, চট্টগ্রামে দ্রুত হারে বাড়ছে করোনা রোগীর সংখ্যা। গত ১২ মে মঙ্গলবার আক্রান্ত হয়েছিল ৮৫ জন, ১১মে ৬৫ জন, ১০মে ৪৮ জন, ৯মে ১৩ জন, ৮মে ১১ জন ও ৭মে ৫৭ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছিল। গত ১২ মে পর্যন্ত চট্টগ্রামে করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৪১৯ জন। এদের মধ্যে মারা গিয়েছে ২৬ জন ও সুস্থ হয়ে বাড়ি গেছে ৮৭ জন।
টপ নিউজ