সুপ্রভাত ডেস্ক :
পশ্চিমবঙ্গের কয়েকটি এলাকায় গোষ্ঠী বা কমিউনিটি সংক্রমণ শুরু হওয়ায় সে রাজ্যের সরকার সপ্তাহে দুদিন করে লকডাউন কার্যকর করার ঘোষণা দিয়েছে।
এই সপ্তাহে বৃহস্পতিবার আর শনিবার, এবং পরের সপ্তাহে বুধবার রাজ্যে সম্পূর্ণ লকডাউন থাকবে।
লকডাউনের বাকি দিনগুলি পরে ঘোষণা করা হবে বলে জানিয়েছে সরকার।
করোনাভাইরাসের গোষ্ঠী সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জীর নেতৃত্বে সোমবার এক উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক হয়। তারপরে স্বরাষ্ট্র সচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করেছিলেন যে সপ্তাহে দুদিন করে লকডাউন চালু করা হবে।
কিন্তু সপ্তাহে দুদিন করে লকডাউন করে কমিউনিটি সংক্রমণ আদৌ রোখা সম্ভব কী-না, তা নিয়ে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের সন্দেহ আছে।
ইন্ডিয়ান পাবলিক হেল্থ অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব ড. সঙ্ঘমিত্রা ঘোষ বলছিলেন, গোষ্ঠী সংক্রমণ যে শুরু হয়েছে, তা সরকারগুলোকে ২৫শে মে’তেই জানানো হয়েছিল। কিন্তু তখন কেউই সেটা মানতে চাননি।
“গোষ্ঠী সংক্রমণ ভারতের অনেক জায়গাতেই যে হচ্ছে, সেটা ২৫শে মে আমরা যে বিবৃতি দিয়েছিলাম, সেখানেই উল্লেখ করেছিলাম। তবে গোষ্ঠী সংক্রমণ না হলে তো হার্ড ইমিউনিটি বা গোষ্ঠীবদ্ধ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হবে না!” বলছিলেন ড. সঙ্ঘমিত্রা ঘোষ।
তিনি এও বলছিলেন যে গোষ্ঠীবদ্ধ প্রতিরোধ ক্ষমতা চাইব, কিন্তু গোষ্ঠী সংক্রমণ হতে দেব না, এটা তো হয় না।
রাজ্য জুড়ে সপ্তাহে যে দুদিন লকডাউন চালানো হবে, সেই দুদিন পরিবহন থেকে শুরু করে সরকারি-বেসরকারি দপ্তর, দোকান, বাজার সব কিছুই বন্ধ থাকবে বলে রাজ্য সরকার জানিয়েছে।
কিন্তু এভাবে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোখা যাবে না বলেই মনে করেন ডা. সঙ্ঘমিত্রা ঘোষ।
তার কথায়, “পৃথিবীর মধ্যে ভারতেই সবথেকে বেশি কঠোর লকডাউন হয়েছে, তখনও কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে একটা শিথিলতা দেখেছি।”
“মানুষের রোজ বাজারে যেতে হয়েছে, মিষ্টির দোকানে যেতে হয়েছে, মাস্ক বেশিরভাগেরই থুতনিতে থেকেছে। লকডাউন করা উচিত প্রথম বা দ্বিতীয় ধাপে। এখন লকডাউন করে কী হবে?”
সপ্তাহে দুদিন করে লকডাউন করে গোষ্ঠী সংক্রমণ আদৌ রোখা সম্ভব কী না, তা নিয়ে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের সন্দেহ আছে।
ভারতের সব থেকে সেরা বিজ্ঞান গবেষণা কেন্দ্র বলে পরিচিত ব্যাঙ্গালোরের ইন্ডিয়ান ইন্সটিটিউট অফ সায়েন্স বা আই আই এস সি কিছুদিন আগে একটি গাণিতিক মডেল প্রকাশ করেছে, যেখানে তারা বলেছিল যে হারে সংক্রমণ বাড়ছে, সেই হারই বজায় থাকলে পয়লা সেপ্টেম্বর ভারতে মোট সংক্রমিত হবে প্রায় ২৫ লক্ষ।
আর যদি সপ্তাহে এক বা দু’দিন কঠোর লকডাউন করা যায়, তাহলে তাদের গাণিতিক মডেল অনুযায়ী সংক্রমণ রোধ করা সম্ভব।
আই আই এস সি’র যে কম্পিউটেশনাল ম্যাথমেটিক্স বিভাগ ওই গাণিতিক মডেল তৈরি করেছে, সেটির বিভাগীয় প্রধান ড. শশী কুমার গণেশন বলছিলেন, পশ্চিমবঙ্গের উদ্যোগটা ভাল, কিন্তু তা সফল হওয়ার জন্য কয়েকটি কঠিন শর্ত মানতে হবে মানুষকে।
“আমাদের মডেলে লকডাউন বলতে যা বোঝানো হয়েছে তা শুধুই অফিস-স্কুল-কলেজ-বিমানবন্দর বন্ধ করে দেওয়া নয়। আক্ষরিক অর্থে লকডাউন সেটাই, যেখানে সবধরনের সরকারী বিধিনিয়ম মানুষ মেনে চলবেন, সামান্য কাশি হলে বাড়িতেও মাস্ক পরে থাকবেন, সামাজিক মেলামেশার নিষেধ পালন করবেন।”
“ওইভাবে লকডাউন পালন করা গেলে আমাদের মডেল অনুযায়ী সপ্তাহে এক বা দুদিন সারা দেশে লকডাউন রাখা হলে সংক্রমিতের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য ভাবে কমবে,” বলছিলেন ড. গণেশন।
তাদের হিসাব অনুযায়ী – সপ্তাহে দুদিন লকডাউন যদি পালন করা হত, তাহলে পয়লা সেপ্টেম্বরে মোট সংক্রমিতের সংখ্যাটা দশ লাখের কাছাকাছি থাকত। কিন্তু ভারতে সেভাবে লকডাউন মানা হয়নি।
ড. শশী কুমার গণেশনের কথায়, “সেটা যদি হত, তাহলে এতদিনে পিক সময়টা পেরিয়ে যেত, রেখাচিত্রটাও সমান হয়ে আসত।” খবর বিবিসি বাংলার।