নিজস্ব প্রতিবেদক »
শুধু বিলাসী পণ্য নয়। নিত্যপ্রয়োজনীয় সব পণ্যের দাম বেড়েছে। আয়ের টাকা ব্যয় করে সাধারণ জীবন যাপনে হিমশিম খাচ্ছে মানুষ। একই সাথে বেড়েছে নতুন এবং ব্যবহৃত কাগজের দাম। ফলে পুরোনো কাগজ থেকে তৈরি টোঙার দামও বেড়েছে। এতে ঠোঙার ব্যবহার কমে গেছে। দোকানিরাও ক্রেতাদের পণ্য দিতে পলিথিনের ব্যবহার বাড়িয়েছে। আর পলিথিনের ব্যবহার বাড়ায় পরিবেশ ও স্বাস্থ্য ঝুঁকি বেড়েছে বলে মন্তব্য করছেন পরিবেশবিদ ও চিকিৎসকরা। তবে এ নিয়ে প্রশাসনের কাছে কোনো তথ্য না থাকায় পরিচালিত হয়নি কোনো অভিযান।
নগরীর বিভিন্ন জায়গায় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ভাঙারি দোকানে পুরানো বই, ব্যবহৃত খাতা ও পত্রিকা কেজিপ্রতি ৪০ টাকা ধরে বিক্রি করা হয়। যেটা দুই মাস আগে ২৫ টাকা ছিলো। বিভিন্ন জায়গা থেকে কেনা পুরানো কাগজ চাক্তাই, বউবাজার, রিয়াজউদ্দিন বাজার, বাকলিয়া, চৌমুহনী, দেওয়ান হাট ও নিউমার্কেটে ভাঙারির দোকানে যায়। প্রতি কেজিতে ৬০ থেকে ৬৫ টাকা দেয় পাইকাররা। পরে সেগুলো থেকে বানানো হয় বিভিন্ন আকারের ঠোঙা। ছোট সাইজেরগুলো প্রতি শতে বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা। যেটির পূর্ব মূল্য ছিলো ২৫ টাকা। মাঝারি সাইজেগুলো বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৭০ টাকা। পূর্ব মূল্য ছিলো ৩৫-৪০ টাকা। সবচেয়ে বড় সাইজেরগুলো ৮০-৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যার আগের মূল্য ছিলো ৫০-৬০ টাকা। কোথাও কোথাও আবার কেজি দরেও বিক্রি হয়।
দাম বাড়ার কারণ হিসেবে দেওয়ানহাটের ঠোঙা বিক্রেতা ওবায়দুল বলেন, ‘একটা সময় গলি ঘুরলেই ৩০-৩৫ কেজি পুরোনো কাগজ পাওয়া যেত। কিন্তু বর্তমানে সারাদিন বিভিন্ন গলি ঘুরে ১০-১৫ কেজির বেশি কাগজ পাওয়া যায় না। পুরোনো বই বিক্রিও কমে এসেছে। যার কারণে ঠোঙার উৎপাদন কমেছে। চাহিদা থাকা স্বত্বেও প্রায় সময় ঠোঙা দিতে পারি না।’
এদিকে দাম বাড়ার কারণে টোঙার ব্যবহার কমিয়েছেন দোকানিরা। সরেজমিনে চকবাজার, বহদ্দারহাট, দেওয়ানহাটে প্লাস্টিকের ব্যবহার বেড়েছে। সেখানে মুদির দোকান, কাঁচাবাজার, হোটেল ও দোকানে প্রতিটি পণ্যতে অবাধে প্লাস্টিকের পলিথিন ব্যবহার করছেন দোকানিরা। চাল , ডাল, পেঁয়াজ, মাছ মাংস সবই পলিথিনে করে দেওয়া হয়। শুধু তাই নয়, হোটেলে চা-ও পলিথিনে নিতে দেখা যায়। ক্রেতা বা বিক্রেতা উভয়ই কোনো অভিযোগ ছাড়া তা ব্যবহার করছেন। শুধু বাজারে নয়, বাসা বাড়িতেও পলিথিনের ব্যবহার বেড়েছে উল্লেখযোগ্য হারে। অধিকাংশ লোকজন সবজি ও মাছ-মাংস পলিথিনে ভরে ফ্রিজে সংরক্ষণ করছেন। পলিথিনের ব্যবহার বাড়ায় একদিকে স্বাস্থ্য, অন্যদিকে পরিবেশের ক্ষতি হচ্ছে।
সম্প্রতি চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরকৌশলের এক গবেষণা থেকে জানা যায়, চট্টগ্রাম নগরীতে বর্তমানে দিনে ২৪৯ মেট্রিক টন প্লাস্টিক ও পলিথিন বর্জ্য জমা হচ্ছে। সেখান থেকে ১০৯ টন সংগৃহীত করা হয়। ৮৮.৬৬ টন রিসাইক্লিং করে চীন, ভিয়েতনাম, ইউরোপে রপ্তানি করা হতো। অসংগৃহীত থেকে যায় প্রায় ১৪০ টন। যার প্রায় বিরাট একটি অংশ কর্ণফুলীতে গিয়ে পড়ছে। এতে মারাত্মক ঝুঁকির মুখে পড়ছে কর্ণফুলী। এই গবেষণায় প্লাস্টিক বর্জ্য দিয়ে রাস্তা নির্মাণেরও পরামর্শ দেওয়া হয়। এতে কম খরচে টেকসই রাস্তা তৈরি করা সম্ভব, যা সম্পূর্ণভাবে পরিবেশ বান্ধব উল্লেখ করা হয়।
পলিথিন ও প্লাস্টিকের ব্যবহারে পরিবেশের ক্ষতি নিয়ে কথা হয় পরিবেশবিদ অধ্যাপক ড. দানেশ মিয়ার সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘পলিথিনের অতিরিক্ত ব্যবহার স্থল এবং পানিতে বিরাট ক্ষতি করছে। পানি প্রবাহিত হতে বড় বাঁধা সৃষ্টি করছে। সমুদ্রে যাওয়ার ফলে সেগুলো মাছের পেটে পড়ছে। তা ফিরে মানুষের দেহে আসছে। শুধু তাই নয়, লবণের মধ্যে প্লাস্টিকের কণা পাওয়ার তথ্য আমাদের আছে। পরিস্থিতি দিন দিন খারাপ দিকে যাচ্ছে। পলিথিন বন্ধ করার জন্য আমরা সবসময় বলে আসছি।’
প্লাস্টিক রাস্তা নিমার্ণের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘ আমরা পাট পণ্য ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ করার কথা বলি। কিন্তু কোনো সুফল আসছে না। আইনের কঠোর ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। প্রসাশনকে এগিয়ে আসতে হবে। তা না হলে পরিবেশ রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়বে।’
স্বাস্থ্য ঝুঁকি নিয়ে কথা হয় চট্টগ্রাম জেলা জনস্বাস্থ্য অধিকার রক্ষা কমিটির সদস্য সচিব ডা. সুশান্ত বড়–য়ার সাথে। তিনি বলেন, ‘পলিথিন মানব দেহের জন্য ক্ষতি। ওয়ান টাইম পলিথিন বহুদিন ব্যবহার করলে ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়। অনেকে পলিথিনের পাশাপাশি পানির বোতলও বহুদিন ব্যবহার করে। এ বোতলগুলো কিন্তু একবার ব্যবহারের উপযোগী করে তৈরি করা হয়েছে। এগুলোর একাধিক ব্যবহার ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়।’
চট্টগ্রামের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মু. মাহমুদ উল্লাহ মারুফ বলেন, ‘পলিথিন পরিবেশ ও স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ক্ষতি। আইনে এটির ব্যবহার বিধি ও নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। আমাদের নিয়মিত অভিযান পরিচালিত হয়।’