শুধু সুপারশপে পলিথিন ব্যাগ ব্যবহার নিষিদ্ধ করা নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে। সর্বনাশা পলিথিন ও প্লাস্টিকপণ্য নিষিদ্ধের দাবি দীর্ঘদিনের হলেও এ ব্যাপারে সরকারের দোদুল্যমনতা সমস্যাটিকে জিইয়ে রেখেছে। সম্প্রতি অন্তর্বর্তী সরকারের পরিবেশ উপদেষ্টা সুপারশপে পলিথিন ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন। অথচ দেশের সর্বত্র রয়েছে পলিথিনের ছড়াছড়ি।
চট্টগ্রামে প্রতি মাসে গড়ে বিশ কোটি পলিথিন ব্যাগ বিক্রি হচ্ছে বলে একটি পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে । বিভিন্ন সময়ে পলিথিনবিরোধী অভিযান চালানো হলেও পলিথিনের অবাধ বেচাকেনা বন্ধ করা যাচ্ছে না। এর মাঝে প্রতিদিন লাখ লাখ পলিথিন ব্যাগের ব্যবহার পরিবেশ, প্রতিবেশ এবং জনস্বাস্থ্যের ওপর মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও চট্টগ্রামের সংঘবদ্ধ চক্র দীর্ঘদিন ধরে পলিথিন ব্যাগের উৎপাদন এবং বাজারজাত করছে। তাই শুধু সুপারশপে পলিথিন ব্যবহার নিষিদ্ধ করে সুফল আসবে না বলে মন্তব্য করে দেশে পলিথিনের উৎপাদন বন্ধের দাবি জানিয়েছেন পরিবেশবিদরা। তাদের মতে, কারখানা চালু বা উৎপাদন অব্যাহত রেখে ব্যবহার বন্ধ করা কোনোদিন সম্ভব হবে না।
ঢাকা, চট্টগ্রাম, নায়ারণগঞ্জ, গাজীপুরসহ বিভিন্ন স্থানে তিন হাজারের বেশি প্লাস্টিক–পলিথিন কারখানা রয়েছে। এসব কারখানায় দৈনিক প্রায় ২ কোটি পলিথিন ব্যাগ তৈরি করে; যা অবাধে সারা দেশে বাজারজাত করা হচ্ছে। চট্টগ্রামের পাশাপাশি ঢাকা থেকেও প্রতিদিন বিপুল পরিমাণ পলিথিন ব্যাগ চট্টগ্রামে আনা হয়। ঢাকা থেকে আসা প্রতিটি ট্রাকে ১৩০ থেকে ১৪০ বস্তা পলিথিন ব্যাগ থাকে। এক বস্তায় বড় আকারের পলিথিন ব্যাগ থাকে ২০ হাজার। প্রতি বস্তায় ছোট পলিথিন ব্যাগ থাকে আড়াই লাখ। বড় এবং ছোট মিলে চাক্তাই এবং সন্নিহিত অঞ্চল থেকে প্রতি মাসে গড়ে বিশ কোটি পলিথিন ব্যাগ বাজারে সরবরাহ দেওয়া হয়। সারা দেশে প্রতিদিন কমপক্ষে দুই কোটি পলিথিন ব্যাগ বাজারে দেওয়া হচ্ছে।
এ বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরের রিসার্চ অফিসার মোহাম্মদ আশরাফ উদ্দিন গণমাধ্যমকে বলেন, দেশে পলিথিন উৎপাদন, বিপণন, সংরক্ষণ এবং পরিবহন নিষিদ্ধ। তবে সব পলিথিন নয়। গার্মেন্টস এক্সেসরিজ হিসেবেও কারখানাগুলো পলিথিন বানায়। সেগুলো নিষিদ্ধ নয়। ৫৫ মাইক্রোনের নিচে এবং ওপরে প্রিন্ট নেই এমন পলিথিন নিষিদ্ধ। আমরা বিভিন্ন সময় অভিযান পরিচালনা করে পলিথিন আটক করে থাকি। কারখানাগুলোতেও অভিযান পরিচালনা করি। তবে তাদের যেহেতু গার্মেন্টস এক্সেসরিজ হিসেবে পলিথিন বানানোর অনুমোদন রয়েছে তাই কোনো ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হয় না।
অপর একটি সূত্র থেকে পত্রিকা বলছে, গার্মেন্টস এক্সসরিজ হিসেবে মোটা পলিথিন বানানোর অনুমোদন নেওয়া অনেক কারখানা অধিক লাভের জন্য ৫৫ মাইক্রোনের নিচের পলিথিন বানিয়ে বাজারে ছাড়ে। এগুলো নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন। পরিবেশ অধিদপ্তরের রিসার্চ অফিসার মোহাম্মদ আশরাফ উদ্দিন বলেন, ভুট্টা থেকে দেশে পলিথিন উৎপাদনের দুয়েকটি কারখানা রয়েছে। এসব পলিথিন পচনশীল। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এই ধরনের পলিথিনের ব্যবহার রয়েছে বলে জানান তিনি।
এসব সম্ভাবনাও খতিয়ে দেখতে হবে সরকারকে। তবে পলিথিনের ব্যবহার একদম বন্ধ করার সিদ্ধান্ত কঠোরভাবেই নিতে হবে তাতে কোনো দ্বিমত নেই।