রাজিব শর্মা »
তরমুজের পর এবার বাজারে চড়া দরে বিক্রি হচ্ছে লিচু। বাজারে আসা ক্রেতাদের অভিযোগ তরমুজের বাজারের মতো লিচুর বাজারও নিয়ন্ত্রণ করছে অসাধু ব্যবসায়ীরা।
বিআরটিসি ফলমন্ডির আড়তে লিচু কিনতে আসা খুচরা ব্যবসায়ী বাহার উদ্দিন বলেন, অন্যান্য বছর মানুষ যেভাবে লিচু কিনতেন এবছর সেভাবে লিচু কিনছেন না। আড়তে দাম বেশ চড়া। যে লিচু হাজারে দুই থেকে আড়াই হাজারে পাওয়া যেত এবছর তা দ্বিগুণ বেড়ে সাড়ে তিন হাজার থেকে চার হাজার টাকা দরে বিক্রি করছেন আড়তদাররা।
বহদ্দারহাটের আরেক ফল বিক্রেতা মো. আনিছ বলেন, আমরা ফলের আড়তদারদের থেকে ফল কিনে বিক্রি করি। কিন্তু এবার লিচুর বাজার চড়া। লিচু বের হয়েছে ঘূর্ণিঝড় রেমাল এর আগে। কিন্তু আড়তদাররা আমাদের বলছেন, ঘূর্ণিঝড়ে লিচু নষ্ট হওয়ায় দাম বেড়েছে। তারা লিচু কোল্ড স্টোরেজে সরিয়ে রেখে বাজারকে নিয়ন্ত্রণ করছে বলে অভিযোগ এ খুচরা ব্যবসায়ীর।
বাজার ঘুরে দেখা যায়, রাজশাহী, চুয়াডাঙ্গা, দিনাজপুর, যশোরসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা বিভিন্ন জাতের লিচুতে ভরে গেছে নগরীর ফলের বাজার। তবে লিচুর উৎপাদনে পর্যাপ্ত চাষ হওয়ার পরও, দামটা যে গত বছরের চেয়ে অনেক বেশি। বাজারে রাজশাহী, দিনাজপুর, চুয়াডাঙ্গা এলাকার লিচুসহ বোম্বাই লিচু, চায়না লিচু ও মোজাফফর জাতের লিচু পাওয়া যাচ্ছে। তবে স্বাদ ও মানভেদে দিনাজপুরের লিচু এবং বোম্বাই লিচুর চাহিদা সবচেয়ে বেশি। যা মানভেদে প্রতি ১০০ পিস লিচু কিনতে ক্রেতাদের গুনতে হচ্ছে ৪০০ থেকে ৭০০ টাকা পর্যন্ত। এমনকি অনেকে বিক্রি করছে ১ হাজার টাকা পর্যন্ত। আর নিম্নমানের লিচু বিক্রি হচ্ছে ২৮০ থেকে ৩০০ টাকার উপরে যা অন্যান্য বছর বিক্রি হতো ১২০ থেকে ১৩০ টাকা।
রেয়াজউদ্দিন বাজারে ফলের মার্কেটে লিচু কিনতে আসা মো. জাহাঙ্গীর আলম নামে এক ক্রেতা বলেন, বাজারে প্রত্যেকটা জিনিসের দাম বাড়তি। এখন ১০০ লিচু কিনলে পরিবারে জনপ্রতি ১০টাও পড়ে না। তার মধ্যে ব্যবসায়ীরা ৪০০ থেকে ৫০০ টাকার নিচে কোন লিচুই বিক্রি করছেন না।
এদিকে লিচুর দাম বাড়তিতে খুচরা বিক্রেতা ও ক্রেতাদের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ফলমন্ডির ব্যবসায়ী মো. আলতাব রহমান বলেন, রাজশাহী ও দিনাজপুরের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আমরা লিচু আনি। কিন্তু অন্যান্য বারের তুলনায় এবার কৃষিতে খরচ বেড়েছে। শ্রমিকদের বেতন বাড়তি। এ কারনেণ ওইসব অঞ্চলের ব্যবসায়ীরা লিচুর দাম বাড়াচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, লিচুতে পচন না ধরার জন্য আমরা কোল্ড স্টোরেজে রাখি, দাম বাড়ানোর জন্য নয়। আমরা সকল খরচ সমন্বয় করে পাইকারিতে বিক্রি করার চেষ্টা করি।
এবার বোম্বাই ও চায়না থ্রি লিচুর ফলন ভালো
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রমতে, অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার লিচুর ফলন ভালো হয়েছে। এবার দিনাজপুরেই ৫ হাজার ৪৮৯ হেক্টর জমিতে লিচু চাষ করা হয়েছে। এর মধ্যে ৩ হাজার ২৩৮ হেক্টরে বোম্বাই জাতের লিচু, ১ হাজার ৭৮ হেক্টরে মাদ্রাজি, ৭০৭ হেক্টরে চায়না থ্রি, ৩১০ হেক্টরে বেদানা, ১৩২ হেক্টরে চায়না টু এবং ২৪ হেক্টর জমিতে কাঁঠালি জাতের লিচু আবাদ হয়েছে। এবার লিচু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩২ হাজার ১১৭ মেট্রিক টন।
সংস্থাটির কর্মকর্তাদের মতে, এবার লিচু চাষে মুকুল আসা পর্যন্ত অনুকূল আবহাওয়া ছিল। কিন্তু পরে তাপমাত্রা কিছুটা বেড়ে যাওয়ায় মাদ্রাজি লিচুর কিছুটা ক্ষতি হলেও অনান্য জাতের লিচুর ক্ষেত্রে তেমন প্রভাব পড়েনি। তাছাড়া বোম্বাই ও চায়না থ্রিতেও ভালো ফলন হয়েছে। গত বছর তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে কিছু গাছের ফসল নষ্ট হয়েছিল। কিন্তু এবার ততটা ক্ষতি হয়নি।