সিটি করপোরেশনের মেয়র এম. রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, চট্টগ্রামসহ বাংলাদেশে রয়েছে পর্যটন শিল্পের বিপুুল সম্ভাবনা। কিন্তু পাহাড় পর্বত, নদীবেষ্টিত প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বিদেশি পর্যটকদের আকৃষ্ট করার মতো কার্যকর ব্যবস্থা এখনো গড়ে উঠেনি। তাই পর্যটন শিল্পের বিকাশে গুরুত্ব দিয়ে পরিকল্পিত উদ্যোগ নিতে হবে।
গতকাল বৃহস্পতিবার নগরীর দি পেনিনসুলা চিটাগং হোটেলে আয়োজিত ১৪তম আন্তর্জাতিক পর্যটন মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
মেয়র আরও বলেন ‘চট্টগ্রামের পাহাড়গুলোকে রাতারাতি কেটে সমতল বানানো হচ্ছে। পাহাড় কেটে ইটপাথরের দালান করা হচ্ছে। আমরা পাহাড়গুলো যদি রক্ষা না করি, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে দায়ী থাকতে হবে। তাই চট্টগ্রামের প্রাকৃতিক সম্পদ ও পর্যটন শিল্প রক্ষায় ও বিকাশে শিল্প প্রতিষ্ঠানের মালিকদের এগিয়ে আসা দরকার।’
মেয়র বলেন, ‘চট্টগ্রাম একটি অনিন্দ্য সুন্দর এলাকা। দীর্ঘকাল ধরে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে এই কেউ শাসন করতে এসেছে, আর কেউ সৌন্দর্য উপভোগ করতে এসেছে। কিন্তু আজ এ নগরীতে বিমানবন্দর আছে, সি বিচ আছে, পাহাড় পবর্তসহ পর্যটনদের আকর্ষণ করার মতো অনেককিছু আছে কিন্তু পর্যটন শিল্পে আমরা অনেকটা পিছিয়ে আছি। একটি শহরকে সুন্দরভাবে গড়ে তোলার জন্য শুধু সরকারকে এগিয়ে আসলে হবে না, পাশাপাশি প্রাকৃতিকে সৌন্দর্য রক্ষার্থে প্রতিটা নাগরিকের এগিয়ে আসতে হবে। বিশ্ব পর্যটকদের আসার মতো আমাদের পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে।’
মেয়র বলেন, ‘বে টার্মিনালেন জন্য আমরা ৫০ একর জায়গা চেয়েছিলাম।
তৎকালীন জেলা প্রশাসন আমাদেরকে ৩৬ একর জায়গা দিয়েছে। বিদেশে পর্যটন শিল্পের বিকাশে ক্ষেত্রে বড় বড় শিল্প প্রতিষ্ঠান এগিয়ে আসে। আজ সিঙ্গাপুর, মালেয়েশিয়ার দিকে তাকালে আমরা তা দেখতে পায়। কিন্তু এদেশে সরকারের পক্ষ থেকে সহযোগিতার বলা থাকলেও বড় শিল্প প্রতিষ্ঠানের মালিকরা এগিয়ে আসেন না। ’
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে শ্রীলঙ্কা এয়ার লাইন্স এর কান্ট্রি ম্যানেজার সুজিব্রা রদ্রিগো বলেন, চট্টগ্রাম প্রকৃতির এক অনন্য সৌন্দর্যের শহর। আমরা আমাদের অবস্থান থেকে চট্টগ্রামের পাশে আছি।’
দি চিটাগং চেম্বার অব কর্মাস অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির পরিচালক অঞ্জন শেখর দাশ বলেন, চট্টগ্রাম পর্যটন শিল্পে যেভাবে এগুনোর কথা সেভাবে আমরা এগুতে পারেনি। শ্রীলঙ্কার এয়ার লাইন্সকে অনুরোধ করবো যেন শ্রীলঙ্কান এয়ারলাইন্স চট্টগ্রামে ল্যান্ড করার সুযোগ করা হয়। এতে চট্টগ্রামে শ্রীলঙ্কান পর্যটকদের পাশাপাশি অন্যান্য দেশের পর্যটকদের চট্টগ্রামমুখী হওয়ার সুযোগ হবে। আর বিশ্বের সঙ্গে যেসব কোম্পানি পর্যটকদের নিয়ে কাজে করে সেসব প্রতিষ্ঠানগুলো যেন আরো আগ্রহী হয়।’
এবার দেশ বিদেশের ২৬টি প্রতিষ্ঠান তাদের পণ্য ও সেবা প্রদর্শন করছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে এয়ারলাইন, ট্যুর অপারেটর, হোটেল ও রিসোর্ট, অনলাইন ট্রাভেল অ্যাজেন্সি। দর্শনার্থীদের জন্য আকর্ষণীয় ডিসকাউন্ট অফার করেছে। আয়োজিত চিটাগং ট্রাভেল মার্ট ১ জুন পর্যন্ত সর্বসাধারনের জন্য উন্মুক্ত থাকবে বলে জানান আয়োজনকারীরা।
মেলায় অংশগ্রহণ করা এমি অনলাইন ট্রাভেলস এজেন্সীর দায়িত্বরত মো. সোয়েব আক্তার বলেন, আমরা এমি ট্রাভেলস অ্যাজেন্সি অ্যাপস দ্বারা বিশ্বব্যাপী এয়ার টিকেটিং, ভিসা প্রসেসিং, ভ্রমণ গাইডলাইন সুবিধাসহ নানা সুবিধা রেখেছি। যে কোন নাগরিক এ সুবিধা ভোগ করতে পারে।
বিশ্বের অনেক দেশে গিয়ে পর্যটকদের নানা ঝামেলা পোহাতে হয়, বিষয়টি আমরা মাথায় রেখেছি এবং আমাদের থেকে যারা সুবিধা নিয়ে থাকেন, আমরা চেষ্টা করি সকল কিছু যাচাই-বাছাই করে পর্যটকদের উত্তম সেবা দিতে।
পর্যটন মেলায় উচ্চশিক্ষা লাভে শিক্ষার্থীদের জন্য কাজ করছে বি ফ্রেশ অ্যাডুকেশন অ্যান্ড জবস। প্রতিষ্ঠানটি কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, মালয়েশিয়া থাইল্যান্ড, চায়নাসহ বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতে ভর্তি সংক্রান্ত বিষয়ে কাজ করে।
অন্যদিকে ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া, সিঙ্গাপুর, শ্রীলঙ্কা, লাউস, উজবেকিস্তনের বিভিন্ন স্থানের ভ্রমণ গাইডলাইনসহ পর্যটকদের নানা সুবিধা নিয়ে কাজ করছেন ভিক্টোরিয়া ট্যুর কোম্পানি লিমিটেড।
প্রতিষ্ঠানটির কান্ট্রি ম্যানেজার মো. সামিউল হাসান বলেন, ২০১২ সাল থেকে আমরা ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়াসহ নানা দেশে পর্যটন সুবিধা দিয়ে এসেছি। প্রতিবছর প্রায় ৫ লাখ পর্যটক ভিয়েতনামের হন্ডি, হেলং বে, নিন বিন, ড্যান্যাং, ন্যাগাক সন টেম্পল, লাউসের কং সি ফলস, ভিয়েনটাইন, ল্যাং প্রবংসহ বিভিন্নস্থানে পর্যটকদের আমরা সেবা দিচ্ছি।
তিনদিনব্যাপী এ মেলার আয়োজন করে ভ্রমণ ও পর্যটন বিষয়ক প্রকাশনা দি বাংলাদেশ মনিটর। মেলার অন্যতম স্পন্সর শীর্ষস্থানীয় অনলাইন ট্রাভেল এজেন্সি বাই টিকেটস ডটকম এবং এয়ারলাইন পার্টনার ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স।
বিজনেস