জোবায়ের রাজু »
আগামীকাল ঈদ। সন্ধ্যার পর পাড়ার ছেলে বুড়ো সবাই ঈদের চাঁদ দেখার উল্লাসে মেতেছে। কিছুক্ষণ পরপর শোরগোল ভেসে আসছে এ পাড়া ও পাড়া থেকে। কিন্তু এসবে মাথাব্যথা নেই আদিলার। অন্যান্যবার চাঁদ দেখতে বেশ ব্যাকুল হলেও এবার চাঁদের ব্যাপারে কোনো আগ্রহ নেই তার। কারণ এবার ঈদে সে অন্যরকম সুন্দর একটা জামা পেয়েছে। বাবা মিজানুর রহমান আদিলার জন্য জামাটা কিনেছেন গত সপ্তাহে। জামাটা দেখতে এতই সুন্দর যে আদিলা সেটা ঈদের দিন ছাড়া কাউকে দেখাতে নারাজ। ঈদের দিন গায়ে দিয়ে সারা পাড়া ঘুরে বেড়াবে। সবাই তার সুন্দর জামাটার দিকে তাকিয়ে থাকবে। দাম জানতে চাইবে। কোথা থেকে কিনেছ, এসব জানতে কৌতুহলি হয়ে উঠবে। এসব ভেবে ভেবে আদিলা ঠিক করেছে সে জামাটা নিজের হেফাজতে লুকিয়ে রাখবে।
মেয়ের মনের বাসনার কথা জেনে মা ফারিয়া বেগম ধমকে সুরে বললেন, ‘বাড়াবাড়ি করবে না মেয়ে। জামাটা আমার কাছে দাও। আলমারিতে তুলে রাখি। ঈদের দিন সকালে গোসল করে পড়বে। দাও বলছি।’
কিন্তু আদিলা মায়ের কথা শোনে না। তার ধারণা মা আলমারি খুললে যে কেউ তার ঈদের জামাটা দেখে ফেলবে। কিন্তু কাউকে সে সুযোগ দিতে রাজি নয় আদিলা। জামাটা সে নিজের রুমে লুকিয়ে রাখবে। কিন্তু আদিলার রুমে তো আলমারি নেই। তাতে কী! তার পড়ার টেবিল তো আছে। পড়ার টেবিলের নিচের শেষ ড্রয়ারে জামাটা যত্নে লুকিয়ে রাখবে।
কিন্তু ঈদের আগের দিন চাঁদ রাতে জামাটা ড্রয়ার থেকে বের করে আকাশ থেকে পড়ল আদিলা। একি! নিজের চোখকে যেন বিশ্বাস করা যাচ্ছে না। ড্রয়ারে যতনে তুলে রাখা আদিলার স্বাধের জামাটার নিচের অংশ ইঁদুর কেটে ফেলেছে। সে দৃশ্য দেখে চোখে পানি চলে এল আদিলার। এখন কী হবে তবে! এত বড় সর্বনাশ! কাল ঈদ। এই ঘটনা মাকে জানানো যাবে না। মা যে পিটিয়ে পিঠের চামড়া তুলে ফেলবে। মা এত করে বলেছে জামাটা তার কাছে দিয়ে দিতে। কথা শোনেনি আদিলা। মায়ের কথা না শোনার শাস্তি যেন এখন পাচ্ছে সে।
ইঁদুরে কাটা এ জামাটা এখন কীভাবে মাকে দেখাবে! না, এ জামা মাকে দেখানো যাবে না। ছেঁড়া জামাটি আবারও তুলে রাখে ড্রয়ারে। হারামি ইঁদুর বাকিটা কাটে কাটুক। প্রচণ্ড মন খারাপ নিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে আদিলা। ঈদের পুরো আনন্দটাই যেন মাটি হয়ে গেল।
২. ভোরে ঘুম থেকে উঠে অবিশ্বাস্য একটা ঘটনার সাক্ষী হয় আদিলা। তার বালিশের পাশে একটা শপিং ব্যাগ। ব্যাগে অবিকল সেই জামাটি, যে জামাটি ড্রয়ারে ইঁদুর কেটে ফেলেছে। কিন্তু অবিকল সেই জামাটি নতুন করে কে এনে রেখেছে এখানে! বাবা নয়তো! কিন্তু বাবা তো জানে না ঈদের জামাটি ইঁদুরে কেটে ফেলার ঘটনা। কিছুই বুঝতে পারছে না আদিলা। হঠাৎ সে আবিষ্কার করে জামাটির ভেতরে একখানা চিঠি। সেখানে লেখা-
‘আদিলা, আমি ফুলপরী। তোমার বোন আয়েশা বারান্দায় যে ফুলের বাগান করেছে, আমি সেখানে নিয়মিত যাতায়াত করি। আজ রাতে এখানে এসে জানালা দিয়ে তোমার ঈদের জামার অঘটনটি দেখলাম। মন খারাপ হওয়া তোমার যখন চোখ ভিজে এল জলে, তখন আমার খারাপ লাগলো। তাই তোমার জন্য আমি অবিকল সে জামাটি নিয়ে এলাম। এটা আমি তোমাকে গিফট করেছি। এবার নিশ্চয়ই মন ভালো হয়েছে!’
চিঠি পড়ে আদিলা অবাক হয়ে গেল। বারান্দার ফুলবাগানে পরি আসে! সেই পরি আবার জানালা দিয়ে সব দেখে ঈদের জামাও দিয়ে যায়! ব্যাপারটা অবিশ্বাসের মতো লাগছে। পরির দেওয়া জামাটি এবং চিঠিটার দিকে তাকিয়ে আদিলার ভয় লাগতে শুরু করল।