বিশ্বব্যাংকের নতুন এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ উদ্বেগজনক দূষণ ও পরিবেশগত স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছে। এতে বেশি ক্ষতি হচ্ছে দরিদ্র জনগোষ্ঠী, পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশু, বয়স্কলোক ও নারীরা। মারাত্মক দূষণের কারণে বছরে অকালমৃত্যু ঘটছে ২ লাখ ৭২ হাজারের বেশি মানুষের। বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ কান্ট্রি এনভায়রনমেন্ট অ্যানালিসিস (সিইএ) নামের প্রতিবেদনে এ তথ্য উল্লেখ করেছে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় উন্নয়ন সহযোগী সংস্থাটি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বায়ুদূষণ, অনিরাপদ পানি, নিম্নমানের স্যানিটেশন ও হাইজিন এবং সিসাদূষণে বছরে এসব অকালমৃত্যু ঘটে। ফলে বছরে ৫২০ কোটি ‘অসুস্থতার দিন’ অতিবাহিত হয়।
সংস্থাটি তাদের প্রতিবেদনে বলেছে, পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতির কারণে ২০১৯ সালে বাংলাদেশের জিডিপির ১৭ দশমিক ৬ শতাংশ সমপরিমাণ ক্ষতি হয়েছে। ঘরের ও বাইরের বায়ুদূষণ স্বাস্থ্যের ওপর সবচেয়ে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলায় ৫৫ শতাংশ অকালমৃত্যু ঘটেছে। এই ক্ষতির পরিমাণ ২০১৯ সালের জিডিপির ৮ দশমিক ৩২ শতাংশের সমান। চলতি মাসে সুইজারল্যান্ডভিত্তিক প্রতিষ্ঠান আইকিউএয়ার ‘বৈশ্বিক বায়ুমান প্রতিবেদন ২০২৩’ প্রকাশ করে। সেই প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৩ সালে দেশ হিসেবে বায়ুদূষণে শীর্ষে ছিল বাংলাদেশ। আর নগর হিসেবে বিশ্বের দ্বিতীয় শীর্ষ নগর ছিল ঢাকা। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিশ্বে সবচেয়ে বেশি দূষিত বায়ুর শহরের তালিকায় ওপরের দিকে থাকছে ঢাকা। ঢাকার চারপাশসহ বিভিন্ন নদ-নদীর দূষণ উদ্বেগজনকভাবে বেড়েছে।
বিশ্বব্যাংক বলছে, পরিবেশদূষণ শিশুদের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলছে। সিসার বিষক্রিয়া শিশুদের মস্তিষ্কের বিকাশে অপরিবর্তনীয় ক্ষতি করছে। এর ফলে বছরে আইকিউ ক্ষতি হচ্ছে প্রায় ২০ মিলিয়ন পয়েন্ট। গৃহস্থালিতে কঠিন জ্বালানির মাধ্যমে রান্না বায়ুদূষণের অন্যতম কারণ। এটি নারী ও শিশুর বেশি ক্ষতি করছে। শিল্পের বর্জ্য, অনিয়ন্ত্রিত প্লাস্টিকসহ বিভিন্ন বর্জ্য এবং অন্যান্য উৎস থেকে আসা অপরিশোধিত পানিতে বাংলাদেশের নদীগুলোর মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে।
বাংলাদেশের নীতিনির্ধারকদের পরামর্শ দিয়ে সংস্থাটি বলেছে, বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে সময়মতো ও জরুরি হস্তক্ষেপ, উন্নত পানি, স্যানিটেশন ও হাইজিন (ওয়াশ) ও সিসাদূষণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিবছর ১ লাখ ৩৩ হাজারের বেশি অকালমৃত্যু ঠেকাতে পারে। পরিবেশসহায়ক বিদ্যুৎ উৎপাদনে বিনিয়োগ, রান্নায় পরিবেশসহায়ক জ্বালানির ব্যবহার এবং শিল্প-কারখানার দূষণ রোধে কঠোর নিয়ন্ত্রণব্যবস্থা বায়ুদূষণ কমাতে পারে।
আমরা সবাই জানি, এই বিপর্যয়ের জন্য বাংলাদেশের মতো দেশগুলো যতটা দায়ী তারচেয়ে বহুগুণ দায়ী শিল্পোন্নত দেশগুলো। তারপরও বলতে হবে, আমাদের সুরক্ষার দায় আমাদেরই নিতে হবে। প্রতিবেদনে যে সুপারিশগুলোকরা হয়েছে সেগুলোর দিকে যদি আমরা নজর দিই তাহলেও দেশকে কিছুটা বাসযোগ্য করা যাবে। অবশ্য তা সরকারের সদিচ্ছা ও জনগণের সচেতনতার ওপর নির্ভর করছে।