কয়েকটি কেন্দ্রে বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষের ঘটনা ছাড়া চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন মোটামুটি শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয়েছে। বিপুল ভোটের ব্যবধানে মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী রেজাউল করিম চৌধুরী। নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে নির্বাচনে ভোট পড়েছে ২২.৫২ শতাংশ। নির্বাচনে প্রতিপক্ষের সংঘর্ষের ঘটনায় ২জন তরুণ নিহত হয়েছেন। এটি খুবই দুঃখজনক ঘটনা। নির্বাচনে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মেয়র পদপ্রার্থী তাঁর এজেন্টদের বের করার প্রতিবাদে নির্বাচন বর্জন করেছেন। দুটি কেন্দ্রের নির্বাচন স্থগিত রাখা হয়েছে।
বিএনপির পক্ষ থেকে অনিয়ম ও তাদের এজেন্ট বের করে দেওয়ার অভিযোগ করা হয়েছে। নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগ লিখিতভাবে প্রমাণসহ নির্বাচন কমিশনে পেশ করা বাঞ্ছনীয়। নির্বাচন কমিশনের উচিত দ্রুত অনিয়মের অভিযোগ সম্পর্কে বিহিত ব্যবস্থা নেয়া। ইভিএম এ ভোট হওয়ায় জাল ভোটের সুযোগ ছিলনা তবে কিছু ভোটার আঙুলের ছাপ না মেলায় বিপত্তিতে পড়েছেন। অফিস আদালত খোলা থাকায় ভোটার উপস্থিতি কম হয়েছে বলে পর্যবেক্ষকদের ধারণা। অফিস করবেন না ভোট দেবেন, এই দ্বন্দ্ব ছিলো অনেকের মনে, যারা নানা কাজে নগরের বাইরে গিয়েছেন, যানবাহন বন্ধ থাকায় নগরে ফিরে আসতে পারেননি। সামনের নির্বাচন অনুষ্ঠানে এই বিষয়গুলি বিবেচনায় নেওয়া প্রয়োজন।
নগরের মেয়র ও কাউন্সিলর পদে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের আমরা অভিনন্দন জানাই। নবনির্বাচিত মেয়র তাঁর নির্বাচনী ইশতেহারে যে সকল বিষয়ে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন সে সবের বাস্তবায়নে তিনি সচেষ্ট হবেন- নগরবাসী তাই আশা করে। বিশেষত নগরের জলাবদ্ধতা, যানজট, ফুটপাত দখল, রাস্তাঘাট সংস্কার, মশক নিধন, পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা-এসব জরুরি বিষয়গুলিতে মেয়র মনোনিবেশ করবেন বলে নগরবাসীর প্রত্যাশা।
সেই সাথে মাদক, সন্ত্রাস, ছিনতাই ও অন্যান্য অপরাধের প্রতিকারে মেয়র ও কাউন্সিলরগণ কঠোর ভূমিকা নেবেন। শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা সহজ ও সুলভ করতে পরিকল্পনা নিতে হবে। কিশোর তরুণদের জন্য খেলার মাঠ নির্মাণ, নাগরিকদের জন্য বিনোদন কেন্দ্র স্থাপন, এলাকায় ক্লাবগুলিকে পৃষ্ঠপোষকতা প্রদান প্রয়োজন। চসিক এর গণ-গ্রন্থাগার অবিলম্বে চালু করা প্রয়োজন।
নগরীর প্রকৃতি ও পরিবেশ সুরক্ষায় মেয়রকে উদ্যোগী হতে হবে। বিশেষ করে পাহাড় কর্তন কর্ণফুলী ও হালদার দখল দূষণের বিরুদ্ধে মেয়রের বলিষ্ঠ ভূমিকা থাকা চাই। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন ও পরিবেশবান্ধব নগর দেশি-বিদেশি বিনিয়োগের স্বার্থে অপরিহার্য।
বিশ্বের ক্রমবর্ধমান নগরীর একটি চট্টগ্রাম। আগামী দিনে উন্নয়ন, বিনিয়োগ ও অর্থনীতির অগ্রগতিতে চট্টগ্রামের ভূমিকা হবে প্রধান। কর্ণফুলী টানেলের মাধ্যমে চট্টগ্রাম নগর সম্প্রসারিত হবে। এখন থেকেই তাই পরিকল্পিত নগরায়ণের কথা চিন্তা করে সকল সরকারি সংস্থাকে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে। বিশেষজ্ঞরা সিটি কর্পোরেশনের ক্ষমতা বাড়ানো, আধুনিক নগর ব্যবস্থাপনার উপযোগী প্রশাসনিক কাঠামো প্রণয়ন ও দক্ষ জনবল নিয়োগ অপরিহার্য বলে মত প্রকাশ করেছেন।
মতামত সম্পাদকীয়