পরিবেশের খাতিরেই হাতিদের রক্ষা করতে হবে

কক্সবাজারের রামু উপজেলার পানের ছড়া রেঞ্জের আওতাধীন দক্ষিণ মিঠাছড়ি পাহাড়ি এলাকায় এক বন্য হাতির রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে। গত রোববার মৃত্যুর খবর পেয়ে বনবিভাগের লোকজন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।

কী কারণে হাতিটির মৃত্যু হয়েছে তৎক্ষণাৎ তা বলা না গেলেও অনেকে সন্দেহ করছেন বৈদ্যুতিক শর্টের কারণে হাতিটির মৃত্যু হয়েছে। যদিও বনবিভাগের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, মৃত হাতিটির কাছাকাছি কোথাও বৈদ্যুতিক লাইনের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। তবে স্থানীয়দের মধ্যে কেউ কেউ সাংবাদিকদের জানিয়েছেন বনের মধ্যে দিয়ে অবৈধভাবে বিদ্যুৎ সংযোগ নেওয়া হয়েছে, তা থেকে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।

এর পাশাপাশি অনেকে অভিযোগ করেছেন, স্থানীয় কৃষকদের মধ্যে কেউ এমন ঘটনা ঘটিয়ে থাকতে পারে কারণ, প্রায় সময় হাতির দল সমতলে নেমে এসে কৃষকদের ক্ষেতের ফসল খেয়ে ফেলে। এর আগে চলতি বছরের জুন মাসে টেকনাফের হ্নীলায় বৈদ্যুতিক তারের সঙ্গে লেগে একটি হাতির মৃত্যু হয়েছিল। ওই ঘটনায় অবশ্য বনবিভাগ মামলা দায়ের করে। এ ছাড়া গত দুই বছরেই কক্সবাজারের বিভিন্ন পাহাড়ি এলাকায় অন্তত ১২টি হাতির মৃত্যু হয়েছে বলে তথ্য আছে। অনেকের ধারণা এই সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে।

কক্সবাজার ও বান্দরবান জেলার বিশাল পাহাড়ি এলাকা জুড়ে হাতিদের নিবাস। এই হাতিরা খাদ্যের খোঁজে সমগ্র বনাঞ্চল ঘুরে বেড়াত। এরকম অন্তত ২৬টি করিডোর ছিল যা দিয়ে রাতের বেলা হাতিরা চলাচল করত। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার সড়কের কয়েকটি পয়েন্ট দিয়ে হাতি চলাচল করত বলে আলাদাভাবে চিহ্নিত করে রাখা আছে। হাতি চলাচলের সময় যানবাহন চলাচল বন্ধ রাখা হয়।

তবে অনেক কিছু ক্ষতির সঙ্গে হাতিদের অভয়ারণ্য বা নির্বিঘেœ বেঁচে থাকার পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত হলো রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিতে ক্যাম্প স্থাপনের কারণে। রোহিঙ্গাদের জন্য আশ্রয়কেন্দ্র গড়ে তুলতে কমপক্ষে ১০ হাজার একব গভীর বনাঞ্চল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে বনের মধ্যে হাতিদের খাদ্যের উৎস কমে গেছে। তাদের নিরাপত্তা বিঘিœত হয়েছে এমনকি হাতিদের বসবাসের স্থান সংকুচিত হয়েছে। দিশাহীন, আশ্রয়হীন, খাদ্যহীন হাতিরা তাই খাদ্যের খোঁজে নেমে আসে লোকালয়ে। এবং উপায়ান্তরহীনভাবে নষ্ট করে কৃষকের ক্ষেতের ফসল।

হাতি আর মানুষের এই সংঘাতে হাতি যেমন মারা পড়ছে তেমনি হাতিদের আক্রমণের শিকার হয়ে প্রাণ হারাতে হচ্ছে মানুষকে। এ পর্যন্ত ১৩ জন রোহিঙ্গাসহ মোট  প্রাণ হারিয়েছে ২২ জন।

পরিবেশ রক্ষা করতে হলে আমাদের রক্ষা করতে হবে হাতিদের। অন্যদিকে বনাঞ্চল ধ্বংস করে রোহিঙ্গা বসতির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বন্যপ্রাণির নিরাপদ আবাসস্থল। এর প্রভাব পড়ছে আমাদের পরিবেশে। কাজেই পরিবেশ বাঁচাতে হলে একইসঙ্গে আমাদের বন্যপ্রাণি বাঁচানোর উদ্যোগও নিতে হবে।

বাংলাদেশের বুকে জেঁকে বসা রোহিঙ্গাদের ফেরত না পাঠালে কিংবা অন্যত্র পুনর্বাসিত না করলে এই বনাঞ্চল রক্ষা করা যাবে না। আমাদের পরিবেশও রক্ষা হবে না। কাজেই এখন সরকারের উচিত আন্তর্জাতিক মহলে রোহিঙ্গাদের কারণে পরিবেশ বিপর্যয়ের তথ্যটিও তুলে ধরা।