আজহার মাহমুদ :
ট্রেন স্টেশনের প্লাটফর্ম ছুঁয়ে দাঁড়াতেই শুরু হয়ে গেল হুড়োহুড়ি। যাত্রী নামার আগেই আরেক দল ট্রেনে ওঠার জন্য ব্যস্ত। এতো ভিড় ঠেলে নামাটাই ঝক্কি। কিন্তু উপায় নেই। নামতেই হবে। শক্ত হাতে ট্রলি ব্যাগটা ধরে রেখে কোনো রকমে নেমে এলো নীরা।
নীরা খুব বুদ্ধিমতি সেটার প্রমাণ দিয়ে ছোট ছোট পায়ে আমার দিকেই এগিয়ে আসছে। অবশ্য তার ম্যাসেঞ্জারেও আমার ছবি পাঠিয়েছে জয়া। জয়া আমার ছোট বোন। নীরার বান্ধবী।
নীরা আসামাত্রই আমি তার দিকে এক বোতল পানি বাড়িয়ে দিলাম। শ্রান্ত নীরা পানি হাতে নিতে নিতে জিজ্ঞেস করলো, আমাকে আপনিও চিনে ফেলেছেন?
আমি কিছুটা হস্যোজ্জ্বল ভাবে উত্তর দিলাম, আপনিওতো আমাকে চিনে ফেলেছেন।
নীরা আরও কিছু বলতে চেয়েও বলতে পারেনি। তার আগেই আমি বললাম, চলুন যেতে হবে।
প্রথমবার চট্টগ্রাম এসেছে নীরা। দেখে মনে হচ্ছে ভালো লাগছে তার। আমি একটা সিএনজি ভাড়া করলাম। সোজা বাড়িতে চলে এলাম। ওহ, আসল কথাটাই বলা হয়নি। নীরা এসেছে তার বান্ধবী জয়ার বিয়েতে।
যাইহোক আমাদের বাড়িতে নীরার কোনো সমস্যা নেই। সে জয়ার সাথেই থাকছে। বাড়িতে বাবা-মা আর জয়া ছাড়া কেউ নেই। বিয়ে উপলক্ষে নীরা এসেছে এবং আমার খালা-খালু, নানা-ননী এসেছে। বাকিরা কাছাকাছিই থাকে তাই গায়ে হলুদের দিন আসবে। পরশু জয়ার গায়ে হলুদ।
নীরাকে প্রথম দেখাতেই আমার ভালো লেগেছে সেটা জয়াকে বলতে পারিনি। জয়া আমার ছোট বোন হলেও আমার বন্ধুর মতো। তাকে সবকিছু সহজেই বলতে পারি। এটা কেন যে বলতে পারিনি জানি না।
জয়ার গায়ে হলুদে নীরাকে দেখতে বেশ লাগছে। হালকা বাদামি শাড়ি পরেছে। কড়া করে লিপিস্টিক দিয়েছে। চুলগুলো খোলা। মাথায় ফুল।
এই দুইদিনে হঠাৎ আমি এমন হয়ে গেলাম কীভাবে বুঝতেই পারছি না। সমস্ত কাজ আমার বাবা সামলাচ্ছে । আমি সবকিছুতেই যেন কল্পনার জগতে হারিয়ে যাচ্ছি। দূর থেকে শুধু নীরাকেই দেখছি।
কলেজ, ইউনিভার্সিটি, পাড়া মহল্লায় এতো মেয়ে দেখেছি কখনওতো এমন হয়নি। আজ কেন এমন হচ্ছে! এভাবে অল্প সময়ে একটি অজানা অপরিচিত মেয়ের মাঝে হারিয়ে যাচ্ছি!
হলুদের অনুষ্ঠানে নাটাই ব্যান্ড এসেছিলো। সবাই বেশ উপভোগ করেছে অনুষ্ঠান। ভালোভাবেই গায়ে হলুদ শেষ হলো। পরেরদিন জয়ার বিয়ে। বিয়েতে কালো রঙের শাড়িতে নীরাকে পরির মতো লাগছে। দু-চোখ ভরে দেখছিলাম। তবে বলতে পারছি না, তোমাকে আজ খুব সুন্দর লাগছে। বিয়ের পুরো সময়টা নীরা আমার সাথেই ছিলো। অনেক আলাপ হলো। অনেক কিছুই জানলাম তার সম্পর্কে।
জয়াকে বিদায় দেওয়ার সময়টা আমার কাছে বেশ কষ্টের ছিলো। নীরার চোখেও পানি ছিলো। জয়াকে বিদায় দিয়ে বাবা-মা এবং নীরাকে নিয়ে বাসায় ফিরলাম। নীরা রাতেই ঢাকায় ফিরে যেতে চেয়েছিলো। বাবা-মা জোর করায় থেকে যাচ্ছে রাতটুকু।
সকাল সকাল নাস্তা করে নীরাকে নিয়ে স্টেশনে গেলাম। টিকেট কেটে ট্রেনে উঠিয়ে দিয়ে চলে এলাম। এই পুরোটা সময় চুপ ছিলাম। শুধু খারাপ লাগছে আবার কবে দেখা হবে এটা ভেবে। আসার সময় শুধু বলেছিলাম, আবার দেখা হবে। ভালো থেকো। আল্লাহ হাফেজ। নীরাও হাসিমুখে বলে, আল্লাহ হাফেজ।
এরপর মাঝখানে তিনমাস পার হয়ে গেলো। নীরার কথা ভেবে আমার দিন/রাত পার হয়ে যাচ্ছে। তার নম্বরে ফোন দেওয়া যেত, তবে লজ্জায় দিতে পারিনি। ফোন দিয়ে কি বলবো সেটাও বুঝে উঠতে পারিনি।
তিনমাস পর জয়া বেড়াতে আসল বাড়িতে। সেদিনই জয়াকে সব খুলে বললাম। জয়া সবশুনে হতভম্ব হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
আমি বললাম, কি হলো এভাবে তাকিয়ে আছিস কেন? কিছু তো বল।
জয়া কাঁপা গলায় বলল, পরশু নীরার বিয়ে। তোমাদের নিয়ে ওর বিয়েতে যাব বলেই আমি এখানে এসেছি।