আজ যদি বাংলাদেশের আকাশে শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখা না যায় তাহলে সোমবার বাংলাদেশে ঈদ উদযাপিত হবে। ঈদ-উল-ফিতর মুসলিমদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব। মহামিলনের এই অনুপম দিনে সকল মুসলিম ঈদের নামাজের জামাতের মত এক কাতারে এসে মিলিত হয় যেখানে ধনী-গরিব, ছোট-বড় কোনো ভেদাভেদ থাকে না। সকল বৈরিতা, সকল শত্রুতা ভুলে সবাই পরস্পরকে আলিঙ্গন করে, শুভেচ্ছা বিনিময় করে। পরিবার থেকে পরিবারে আপ্যায়নের ব্যবস্থা হয়ে থাকে।
মাহে রমজানের ৩০ দিন রোজা রেখে সিয়াম সাধনার মাধ্যমে তাকওয়া অর্জনের পর শাওয়াল মাসের প্রথম দিন আনন্দের দিন বা ঈদের দিন হিসেবে উপস্থিত হয়। রমজান মাসে পবিত্র কোরআন নাজিল হয়েছিল বলে অন্যান্য মাসের চেয়ে এই মাসের গুরুত্ব অনেক বেশি। ভালো কাজ অর্থাৎ নেক কাজের ফজিলতও অনেক বেশি। তাই সামর্থ্যবান মুসলিমগণ এই রমজান মাসেই দান-খয়রাত করে থাকেন বেশি বেশি। ইসলামের অন্যতম স্তম্ভ যাকাত তা-ও পরিশোধ করা হয় এই মাসে। যদিও বছরের যে কোন সময় যাকাত আদায় করা যায়।
তবে এ বছর এই মহানন্দের দিনটি পালিত হবে অত্যন্ত সাদামাটা ও আতঙ্কগ্রস্ত পরিবেশে। বছরের শুরু থেকে বিশ্ব আক্রান্ত হয়েছে কভিড-১৯ নামক এক মারাত্মক মহামারীতে। শনিবার সকাল পর্যন্ত এই রোগে আক্রান্তের সংখ্যা ৫১ লাখ ৬৯ হাজার ৯০৭ জন। মৃত্যুবরণ করেছেন তিন লাখ ৩৫ হাজার ৯৯৩ জন। বাংলাদেশ আক্রান্তের সংখ্যা ৩০,২০৫ এবং মৃত্যু সংখ্যা ৪৩২জন। প্রতিদিন আক্রান্তের সঙ্গে সঙ্গে মৃত্যুর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। আক্রান্তের আওতাও বৃদ্ধি পাচ্ছে।
সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার এই সময়ে সরকার যারা যেখানে বাস করেছেন সেখানেই ঈদ উদযাপনের অনুরোধ করেছে কিন্তু বাস্তব চিত্র ভিন্ন। গত কয়েকদিন ধরে সাধারণ মানুষরা যে যেমন করেই পারছে রাজধানীসহ বড় বড় নগরগুলো থেকে গ্রামে যাওয়ার চেষ্টা করছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর লোকজনকে ফাঁকি দিয়ে নানাভাবে তারা শহর ছাড়ছে। অন্যদিকে ব্যক্তিগত গাড়ি চলাচলের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছে সরকার। অর্থাৎ যাদের ব্যক্তিগত গাড়ি আছে তারা শহরের বাইরে যেতে পারবেন। আর গণপরিবহন যেহেতু বন্ধ সেহেতু সাধারণ মানুষ বিভিন্ন উপায়ে গ্রামে যাওয়ার চেষ্টা করছে।
এবারের ঈদের মতো এমন নিরানন্দ, শঙ্কাভরা ঈদ স্মরণকালে আর আসেনি কখনও। এত বিপদ, রোগ-শোক, মৃত্যুভয় উপেক্ষা করে পরিজনের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে গ্রামে ছুটছেন সবাই। কিন্তু এমন আচরণে এই রোগ সংক্রমণের ঝুঁকিও প্রবল হচ্ছে। সে কথা সবার সবার মনে রাখা দরকার। স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে সবাইকে জীবনযাপন করতে হবে। ঈদের জামাতেও এই নিয়ম মেনে চলতে হবে। করমর্দন ও মোলাকাতের মতো চিরাচরিত অভ্যাস বা প্রথা এখন পরিহার করতে হবে। অনেকে আর্থিক অনটনের কারণে প্রয়োজনীয় খাদ্যও সংগ্রহ করতে পারছে না। প্রতিটি স্বচ্ছল মানুষকে মনে রাখতে হবে এমন দিনে কেউ যেন অনাহারে কষ্ট না পায়। সরকার সাধ্যমতো চেষ্টা করছে। সে সঙ্গে ব্যক্তিগত উদ্যোগও বহাল থাকুক।
এই মহামারী থেকে বিশ্বকে বাঁচিয়ে তুলতে মহান রাব্বুল আলামিনের দরবারে সবাইকে প্রার্থনা করতে হবে। এই কঠিন সময়ে সবাই সুস্থ থাকুন।
অগ্রিম ঈদ মোবারক।