পবিত্র ঈদুল আজহা বা মহান কোরবানির তাৎপর্য খোলাসা করে কবি নজরুল তাঁর ‘কোরবানি’ নামক কবিতায় ঝংকার তুলে বলেছিলেন : ‘ ওরে হত্যা নয় আজ, সত্যাগ্রহ শক্তির উদ্বোধন …’।
কবির এই উচ্চারণ ইসলামের শাশ্বত সত্যের সঙ্গে একাকার হয়ে আছে। কারণ ইসলামের মৌল শিক্ষাধারায়ও স্রেফ পশুহত্যার মাধ্যমে জাগতিক আনন্দলাভের কথা বলা হয়নি।
বরং মানুষের ভেতরে লুকিয়ে থাকা লোভ-লালসা-হিংসা-হিংস্রতা তথা সংগুপ্ত পাশবিকতাকে দূরীভূত করে মানবিক গুণাবলি জাগরণের কথাই বলা হয়েছে। ত্যাগের আনন্দ ও উৎসবে এর বহিঃপ্রকাশ ঘটে। ধনী দরিদ্র, আত্মীয়স্বজন পাড়া প্রতিবেশি সব মুসলমান মিলে মিশে সব আনন্দ সমভাগ করে নেন। পারিপার্শ্বিক হিংসা বিদ্বেষ অহংকার ভুলে খুশি মনে ভ্রাতৃত্বের বন্ধন সুদৃঢ় করেন।
প্রতি বছর ঈদুল আজহার নামাজের পর পশু কোরবানি দেওয়া হয়।
মুসলিম মিল্লাতের পিতা হজরত ইব্রাহীম (আ.) হাজার হাজার বছর ধরে চলে আসা পবিত্র ঈদুল আজহার কোরবানি পর্ব এবং অপরিহার্য এ ধর্মীয় সংস্কৃতির প্রবর্তক।
হজরত ইব্রাহীম (আ.) এর সীমাহীন ভক্তি, সর্বোচ্চ ত্যাগের সদিচ্ছা ও গভীরতম আত্মসমর্পণ পরম করুণাময় আল্লাহ তাআলা সন্তুষ্ট হয়ে হজরত ইব্রাহীমকে (আ.) কে আত্মত্যাগ ও ভালোবাসার নিদর্শন স্বরূপ কোরবানি করার নির্দেশ দেন।
এ কোরবানি কেবল পশু বিসর্জন নয়, মনের ভেতরের পশুত্ব, নিজের ক্ষুদ্রতা, নিচুতা, স্বার্থপরতা, হীনতা, দীনতা, আমিত্ব ও অহংকার ত্যাগই কোরবানিই মূল কথা এবং এটাই সব নবীÑরাসূলের অনুপম শিক্ষা।
হজরত ইব্রাহিম (আ.) স্বপ্ন দেখলেন, মহান আল্লাহপাক তাঁকে স্বপ্নে আদেশ দিচ্ছেন বারবার যেন তাঁর সবচেয়ে প্রিয়বস্তুটি আল্লাহর নামে উৎসর্গ করা হয়। এই আদেশে বিচলিত হজরত ইব্রাহিম তাঁর নানা প্রিয় বস্তু উৎসর্গ করে গেলেও আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন থেকে ব্যর্থ হচ্ছিলেন। এ অবস্থায় বিদ্যুচ্চমকের মতো তাঁর মনে হলো, তাঁর পুত্র ইসমাইলই (আ.) তো তাঁর সবচেয়ে প্রিয়! পুত্রকে এ-ঘটনা অবহিত করা হলে তিনিও পিতার ইচ্ছাকে প্রাধান্য দিলেন এবং উৎসর্গের স্থানে পিতা-পুত্র একত্র হলেন।
ইসমাইলের গলায় ছুরি চালাতে গেলে সেখানে এক অলৌকিক ঘটনা ঘটে। ইসমাইলের স্থলে একটি দুম্বা সেখানে কোরবানি হয়ে যায়। এখানে প্রিয় বস্তুকে উৎসর্গ করার পরীক্ষায় হযরত ইব্রাহীম (আ.) উত্তীর্ণ হন। এর প্রতীকী সত্যটি হলো, মানুষে-মানুষে হানাহানি বা হত্যাযজ্ঞ নয়, বরং ভেতরের পশুত্বকে হত্যা করা। আজ সেই পবিত্র দিন।
আসুন, আমরা লোভ-লালসা, দুর্নীতি-দুঃশাসন, মানবতা-দলন এসব পাশবিকতাকে হত্যা করে সত্যের মুখোমুখি হই। কেননা পবিত্র ঈদুল আজহা বা মহান কোরবানির এই হলো প্রকৃত তাৎপর্য।
মতামত সম্পাদকীয়




















































