চট্টগ্রাম মহানগরীর লোকসংখ্যা দিনদিন বাড়লেও নাগরিকদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বিনোদন প্রভৃতির সুযোগ সুবিধা একেবারেই অপ্রতুল তদুপরি নগরীর কেন্দ্র এবং এর আশেপাশের কয়েকটি ওয়ার্ডে কিছু সুবিধা থাকলেও অধিকাংশ ওয়ার্ডে নাগরিক সুবিধার প্রবল ঘাটতি রয়েছে। এসব এলাকাগুলি অনেকটা মফস্বলীয় ধাঁচের। নগরীর সকল এলাকার সুষম উন্নয়ন না হলে উন্নয়নবৈষম্য প্রকট হয়ে নাগরিকদের মধ্যে অসন্তোষ বিরাজ করা অস্বাভাবিক নয়। নগরীর অধিবাসীরা দিন-রাত পরিশ্রম করে নগরীর অর্থনীতি, ব্যবসা-বাণিজ্য, সরকারি-বেসরকারি প্রশাসন সচল রাখেন। তাই তাদের সেবা দিতে সিটি কর্পোরেশন ও অন্যান্য সেবা সংস্থাগুলিকে তৎপর হতে হবে।
আমাদের সহযোগী এক দৈনিকে নগরের পতেঙ্গা ও হালিশহর এলাকায় সরকারি হাসপাতাল না থাকায় এলাকার প্রায় ১৯ লক্ষ মানুষের দুর্ভোগের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। চিকিৎসা সেবার জন্য তাদের চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও নগরের কেন্দ্রস্থলের বেসরকারি হাসপাতালগুলিতে ছুটে আসতে হয়।
চট্টগ্রাম মহানগরীর দক্ষিণÑপশ্চিমে অবস্থিত পতেঙ্গা হালিশহর এলাকার ৫টি ওয়ার্ডের প্রায় ১৯ লাখ মানুষ সরকারিÑহাসপাতাল না থাকায় উন্নত ও ফ্রি চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত। শুধু পতেঙ্গা-হালিশহর নয় বরং বাকলিয়া, চান্দগাঁও, নাসিরাবাদ ও ফতেয়াবাদ এলাকা কিংবা পাহাড়তলী এলাকায়ও সরকারি হাসপাতাল নেই। স্বাধীনতার ৫০ বছরে একমাত্র ভরসা চমেক হাসপাতাল, আন্দরকিল্লা জেনারেল হাসপাতালটি শতবর্ষের হলেও এই হাসপাতালটিতে পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধা নেই।
পতেঙ্গা-হালিশহর এলাকাটি ঘনবসতিপূর্ণ, নানা গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা এখানে রয়েছে। সড়কগুলি ব্যস্ত থাকে এ কারণে। গুরুতর অসুস্থ রোগীদের চমেক কিংবা নগরীর বেসরকারি হাসপাতালে নিতে দীর্ঘ সময় লেগে যায়। অনেক সময় পথেই রোগীর মৃত্যু ঘটে। এ ধরণের বিষাদময় মৃত্যু স্বজনদের কাছে অনাকাক্সিক্ষত। এলাকার স্থানীয় অধিবাসী ও বিপুলসংখ্যক কর্মজীবী মানুষ গরিব ও নি¤œআয়ের। তাদের পক্ষে সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসা সেবা ছাড়া গত্যন্তর নেই। প্রসূতি মায়েদের হাসপাতালে নেওয়া খুবই কষ্টকর। এলাকায় চসিক এর ২/১টি মাতৃসদন থাকলেও সেখানে চিকিৎসা সেবা পর্যাপ্ত নয়। গল্পে উপন্যাসে স্বাস্থ্যসেবা আর নানা অসুখ বিসুখে মানুষের অসহায়ত্বের যে বিবরণ পাওয়া যায়, পতেঙ্গা-হালিশহর এলাকায় এখনো সে অবস্থার তেমন উন্নতি ঘটেনি। অনেক জেলা শহরের লোকসংখ্যা ১৫/২০ লক্ষ নয় কিন্তু সেসব জেলায় ২৫০ শয্যার হাসপাতাল রয়েছে কিন্তু পতেঙ্গা-হালিশহর এলাকায় জনসংখ্যা বিপুল হলেও এখানে কোন সরকারি হাসপাতাল নেই। এলাকায় পূর্ণাঙ্গ হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার দাবিতে অনেকদিন ধরে মানুষ আন্দোলন করে আসছে। এই এলাকায় প্রসূতি মায়েদের জন্য হাসপাতাল প্রতিষ্ঠায় চসিক প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছেন। পতেঙ্গা-ইপিজেড, অঞ্চলে ১শ শয্যায় হাসপাতাল নির্মাণে স্থান নির্বাচন কমিটি কাজ করছে বলে পত্রিকান্তরে জানা গেছে। নগরীর এই গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় বন্দর-কাস্টম, ইপিজেড পোশাক কারখানা ও অন্যান্য সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান-কারখানা রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানে কর্মরত পেশাজীবী-শ্রমজীবী ও স্থানীয় অধিবাসীদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে একটি পূর্ণাঙ্গ হাসপাতাল (অন্তত ২৫০ শয্যার) স্থাপন করা হোক। সেই সাথে নগরীর অন্যান্য পশ্চাদপদ এলাকায় হাসপাতাল প্রতিষ্ঠায় উদ্যোগ নেওয়া হোক।
চসিক এর মাতৃসদন ও ক্লিনিকগুলি উন্নত ও আধুনিক যন্ত্রপাতি দ্বারা সজ্জিত করা হোক যাতে এলাকার মানুষ সহজে উন্নত স্বাস্থ্যসেবা পেতে পারে।
মতামত সম্পাদকীয়