অবশেষে জট খুলে চট্টগ্রাম বন্দরের পতেঙ্গা কন্টেইনার টার্মিনাল (পিসিটি) পরিচালনার জন্য বিদেশি অপারেটর নিয়োগের চুক্তি হচ্ছে। বাংলাদেশ সরকারের পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি) অথরিটির তত্ত্বাবধানে প্রধানমন্ত্রীর দফতরে বুধবার এই চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানের কথা রয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ সৌদি আরবের রেড সী গেটওয়ে টার্মিনাল (আরএসজিটি) কর্তৃপক্ষের সাথে চুক্তি স্বাক্ষর করবে। চুক্তি অনুযায়ী পিসিটির প্রয়োজনীয় সব ইকুইপমেন্ট বিদেশি অপারেটর ক্রয় করবে। তারা দুই বছরের গ্রেস পিরিয়ডসহ মোট ২২ বছর এই টার্মিনাল পরিচালনা করবে। এরপর ইকুইপমেন্টসহ বন্দরটি যেভাবে থাকে তা চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের নিকট হস্তান্তর করবে।
পতেঙ্গা কন্টেইনার টার্মিনাল পুরোপুরি প্রস্তুত হয় ২০২২ সালের মাঝামাঝি। নির্মাণকাজ শেষ হলে পিসিটি উদ্বোধনের দিনক্ষণও ঠিক করা হয়। কিন্তু পরে তা আর হয়নি। নতুন টার্মিনালটি পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপে পরিচালনার জন্য সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে সিদ্ধান্ত দেয়া হয়। সরকারের পিপিপি অথরিটি এই টার্মিনালের অপারেটর নিয়োগের জন্য বিশ্বব্যাংকের সহযোগী প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল ফিন্যান্স কর্পোরেশনকে (আইএফসি) পরামর্শক নিয়োগ দেয়। এরই আলোকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বেশ কয়েকটি টার্মিনাল অপারেটর পিসিটি পরিচালনার দায়িত্ব নেয়ার আগ্রহ প্রকাশ করে। পরামর্শক প্রতিষ্ঠানসহ সরকারের বিশেষজ্ঞরা বিভিন্ন দিক যাচাই বাছাই করে। অবশেষে সৌদি আরবের রেড গেটওয়ে টার্মিনাল কর্তৃপক্ষকে পিসিটি পরিচালনার দায়িত্ব দেয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়।
অবস্থানগত কারণে পিসিটি বর্তমানে চট্টগ্রাম বন্দরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ টার্মিনাল হয়ে উঠেছে। এই টার্মিনালে বড় জাহাজগুলোকে অনায়াসে বার্থিং দেয়া যাবে যা আগে দেওয়া যেত না। বাঁক না থাকায় এখানে বড় জাহাজ ভেড়ানোর সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। তাই বিদ্যমান বন্দরের টার্মিনালগুলোর তুলনায় পিসিটি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে ভবিষ্যতে।
৩২ একর জায়গায় নির্মিত টার্মিনালটিতে ১৬ একর ইয়ার্ডসহ বিভিন্ন পশ্চাৎ সুবিধা এবং ৫৮৪ মিটার দীর্ঘ জেটি রয়েছে। জেটি এলাকায় পানির গভীরতা সাড়ে ১১ মিটার হলেও ১০ থেকে সাড়ে ১০ মিটার ড্রাফটের জাহাজ ভিড়ানো যাবে। এই টার্মিনালে ১৯০ মিটার লম্বা ও ১০ বা সাড়ে ১০ মিটার ড্রাফটের ৩টি কন্টেইনার জাহাজ একসাথে এবং ২২০ মিটার দীর্ঘ ডলফিন জেটিতে ১টি ভোজ্যতেলবাহী জাহাজ ভেড়ানো যাবে। টার্মিনালে ১ লাখ ১২ হাজার বর্গমিটারের আরসিসি পেভমেন্ট (অভ্যন্তরীণ ইয়ার্ড ও সড়ক), ২ হাজার ১২৮ বর্গমিটার কন্টেনার ফ্রেইট স্টেশন (সিএফএস) শেড, ৬ মিটার উঁচু ১ হাজার ৭৫০ মিটার কাস্টমস বন্ডেড ওয়াল, ৫ হাজার ৫৮০ বর্গফুটের পোর্ট অফিস ভবন, ১ হাজার ২০০ বর্গমিটারের যান্ত্রিক ও মেরামত কারখানাসহ বিভিন্ন অবকাঠামো গড়ে তোলার মাধ্যমে টার্মিনালকে একটি স্বতন্ত্র বন্দরের আদল দেয়া হয়েছে।
সবকিছু বিবেচনায় নিলে বলতে হয় বন্দর কর্তৃপক্ষ তথা সরকারের এই সিদ্ধান্ত ইতিবাচক এবং যুগোপযোগী। বর্তমান সময়ে বন্দর পরিচালনায় নতুন চিন্তা, নতুন পদ্ধতির অনুশীলন হচ্ছে। সবকিছু একটি সংস্থার হাতে রেখে না দিয়ে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে পরিচালনা করার ধারণা ও পদ্ধতি জনপ্রিয় হচ্ছে। যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমাদেরও সে পথে অগ্রসর হওয়া দরকার। আমরা আশা করব চট্টগ্রাম বন্দর ও সৌদি মালিকানাধীন আরএসজিটির যৌথ প্রচেষ্টায় চট্টগ্রাম বন্দর আরও আধুনিক, আরও গতিশীল হবে।
এ মুহূর্তের সংবাদ