নেপালকে হারিয়ে সুপার এইটে বাংলাদেশ

৪ উইকেট নিয়ে ম্যাচসেরা তানজিম সাকিব।

সুপ্রভাত স্পোর্টস ডেস্ক »

ম্যাচ শুরু ভোরের আলো ফোটার আগেই। শুরুতেই অন্ধকার দেখতে শুরু করে বাংলাদেশ। ঈদের আনন্দই মাটি হওয়ার শঙ্কা! ব্যাট হাতে এক দুঃস্বপ্ন উপহার দিলো বাংলাদেশ। বাংলাদেশকে ১০৬ রানে থামিয়ে জয়ের সম্ভাবনা জাগিয়েছিল নেপাল।

তবে সেন্ট ভিনসেন্টে খেলা হয়েছে এমন এক উইকেটে যেখানে মামুলি পুঁজিও আসলে বিশাল। তানজিম হাসান সাকিব, মোস্তাফিজুর রহমানের বোলিংয়ে মিলেছে সেই প্রমাণ। লো স্কোরিং ম্যাচে নেপালকে অনায়াসে হারিয়ে তাই সুপার এইট রাউন্ড নিশ্চিত করেছে নাজমুল হোসেন শান্তর দল।

ব্যাট হাতে প্রত্যাশা পূরণ করতে না পারলেও বোলাররা নিজেদের কাজটা ঠিকঠাক ভাবেই করছেন। পাওয়ার প্লেতেই নেপালকে বিপদে ফেলে দিয়েছে বাংলাদেশ। কম লক্ষ্য দিলেও নেপালকে চাপে রাখার কৌশলে সফল বাংলাদেশ।

সোমবার (১৭ জুন) সেন্ট ভিনসেন্টের আর্নোস ভালে স্টেডিয়ামে টস জিতে নেপাল বাংলাদেশকে ব্যাট করার আমন্ত্রণ জানায়।  টস হেরে ব্যাট করতে নেমে প্রথম বলেই উইকেট হারায় বাংলাদেশ।

নেপালের বোলিংয়ে অসহায়ভাবে আত্মসমর্পণ করে ১০৬ রানে গুটিয়ে গেছে তারা। প্রথম বলেই বাংলাদেশকে কাঁপিয়ে দেয় নেপাল। পাওয়ার প্লেতেই টপ অর্ডারে ধস নামে। তারপর নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারাতে থাকলে বিপর্যয়টা অবশ্যসম্ভাবী হয়ে উঠে। সর্বোচ্চ স্কোর বলতে সাকিবের ১৭। সাকিব-মাহমুদউল্লাহ ধসের মুহূর্তে প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক রান আউটে সেটির সম্ভাবনাও মিলিয়ে গেছে। রিশাদের আউটের পর তো শত রানের মাঝেই গুটিয়ে যাওয়ার শঙ্কা জেগেছিল। সেটা হয়নি তাসকিনের ১৫ বলে ১২ রানের কল্যাণে। তার পরেও সহযোগী কোনও দেশের বিপক্ষে সর্বনিম্ন রানের নজির গড়েছে বাংলাদেশ।

নেপালের হয়ে ১০ রানে ২ উইকেট নিয়েছেন সোম্পাল কামি। শুরুতেই বাংলাদেশকে তিনি কাঁপিয়ে দিয়েছেন। তাছাড়া দুটি করে উইকেট নিয়েছেন দীপেন্দ্র সিং, রোহিত পাওডেল ও সন্দীপ লামিচানে।

আগে বোলিং বেছে উইকেটের সুবিধা কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশকে ১০৬ রানে আটকায় নেপালিরা। তবে নিজেরা ব্যাট করতে নেমে  করতে পেরেছে স্রেফ ৮৫ রান। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে সবচেয়ে কম রান ডিফেন্ড করার রেকর্ডও এটি। মাত্র ৭ রান দিয়ে ৪ উইকেট তুলে বাংলাদেশের সফল বোলার তানজিম। মোস্তাফিজ এক উইকেট কম পেলেও দারুণ বল করে দেন স্রেফ ৭ রান।

রান তাড়ায় প্রথম দুই ওভার পার করে দিলেও তৃতীয় ওভারে উইকেট হারায় নেপাল। কুশাল ভুর্টাল তানজিমের ফুলটস বলে হয়ে যান বোল্ড। এক বল পরই আরেক উইকেট। এবার অনিল শাহ অহেতুক তুলে মারতে গিয়ে দেন সহজ ক্যাচ। ৯ রানে ২ উইকেট ফেলে প্রতিপক্ষকে চেপে ধরে বাংলাদেশ।

তানজিম তার পরের ওভারে ধরেন আরেক শিকার। প্রতিপক্ষের সেরা ব্যাটার অধিনায়ক রোহিত পাউডেল তানজিমের বলে স্কয়ার কাট করে দেন পয়েন্টে ক্যাচ। ২০ রানে ৩ উইকেট খুইয়ে ব্যাকফুটে চলে যায় নেপাল। এই অবস্থা থেকে ক্রমাগত কোণঠাসা হতে থাকে তারা।

পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে এসে মোস্তাফিজ আউট করেন আসিফ শেখকে। ড্রাইভ করতে গিয়ে শর্ট কাভারে সাকিবের হাতে ধরা দেন ১৭ রান করা ব্যাটার। তানজিম তার শেষ ওভারে ধরেন আরেক শিকার। সন্দিপ জোরা তানজিমকে আলগা শট মারতে গিয়ে দেন সহজ ক্যাচ। ২৬ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে খাদের কিনারে চলে যায় হিমালয়ের দেশ।

মন্থর ও নিচু বাউন্সের উইকেটে স্পিনাররা বল করতে আসার আগেই নেপাল ম্যাচ থেকে ছিটকে যায়। স্পিনাররা এসেও চাপ জারি রাখেন। উইকেটে লেন্থে বড়ে বেশ কিছু বল নেয় আচমকা বাউন্স, আবার কিছু বল হয়ে যায় নিচু। ছিলো অনেক টার্ন। ব্যাটারদের জন্য প্রায় নরক পরিস্থিতিতে বোলারদের রাজত্ব থাকাই ছিলো স্বাভাবিক।

২৬ রানে ৫ উইকেট পড়ার পর  চরম বিপর্যস্ত অবস্থায় জুটি গড়েন দীপেন্দ্র আইরি ও কুশল মাল্লা। শুরুতে থিতু হতে অনেক সময় নেন তারা, তাতে রানের চাপ বাড়ে। এই দুজনের ৫৮ বলে ৫২ রানের জুটি ভাঙেন মোস্তাফিজ। নিজের তৃতীয় ওভারে স্লোয়ার বলে কাবু করে করেন উড়িয়ে মারতে যাওয়া মাল্লাকে। দীপেন্দ্র কিছুটা সম্ভাবনা জাগালেও বাকিরা আর পারেননি। গুলশান ঝা ক্রিজে এসেই ক্যাচ দেন তাসকিনের বলে।

দীপেন্দ্র পারেননি মোস্তাফিজকে সামলাতে। ১৯তম ওভারে উইকেট মেডেন নেন বাংলাদেশের সেরা পেসার। শেষ ওভারে ২২ রানের সমীকরণ মেলানোর কাছেও যেতে পারেনি নেপাল। ওই ওভারে জোড়া উইকেট নিয়ে সাকিব বিশ্বকাপে এবার উইকেটের খাতা খুলেন।

সাকিব ৯ রানে ২ উইকেট নিয়েছেন। তাছাড়া মোস্তাফিজ ৪ ওভারে ১ মেডেন আর ৭ রান দিয়ে নিয়েছেন ৩ উইকেট। ২৯ রানে একটি নিয়েছেন তাসকিন।  ৪ উইকেট নিয়ে ম্যাচসেরা তানজিম সাকিব।

ব্যাট হাতে দুঃস্বপ্ন উপহার দিলেও বোলাররা মান রেখেছেন। নেপালকে ২১ রানে হারিয়ে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে সুপার এইট নিশ্চিত করেছে বাংলাদেশ। সুপার এইটে গ্রুপ ওয়ানে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ ভারত, অস্ট্রেলিয়া ও আফগানিস্তান।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

বাংলাদেশ: ১৯.৩ ওভারে ১০৬ (তানজিদ ০, লিটন ১০, শান্ত ৪, সাকিব ১৭, হৃদয় ৯, মাহমুদউল্লাহ ১৩, জাকের ১২, তানজিম ৩, রিশাদ ১৩, তাসকিন ১২*, মুস্তাফিজ ৩; কামি ৩-০-১০-২, ঐরি ৩.৩-০-২২-২, রোহিত ৪-০-২০-২, লামিছানে ৪-১-১৭-২, ভুরতেল ৪-০-২২-০, আবিনাশ ১-০-১০-০)

নেপাল: ১৯.২ ওভারে ৮৫ (ভুরতেল৪, আসিফ ১৭, ০, রোহিত ১, জোরা ১, মাল্লা ২৭, ঐরি ২৫, ঝা ০, কামি ০, লামিছানে ০*, আবিনাশ ০; তানজিম ৪-২-৭-৪, তাসকিন ৪-০-২৯-১, মুস্তাফিজ ৪-১-৭-৩, রিশাদ ৩-০-১৫-০, সাকিব ২.২-০-৯-২, মাহমুদউল্লাহ ২-০-৫-০)

ফল: বাংলাদেশ ২১ রানে জয়ী

ম্যান অফ দ্যা ম্যাচ: তানজিম সাকিব