অলোক আচার্য »
আমাদের দেশে পরিচিত পাখিদের মধ্যে একটি হলো প্যাঁচা। পাখিটি নিশাচর হওয়ায় দিনের বেলা দেখা পাওয়া যায় না। অনেক সময় দিনের বেলায় কোথাও কোথাও মানুষের হাতে পড়ে যায়। প্যাঁচাকে নিয়ে মানুষের মাঝে নানা কুসংস্কার এবং অলৌকিক চিন্তা-ভাবনা প্রচলিত রয়েছে। যেমন- জার্মানিতে বিশ্বাস ছিল, যদি সন্তান জন্মের সময় প্যাঁচা ডাকে তবে সেই সন্তানের ভাগ্য ভালো হয় না আবার ফ্রান্সের লোকেরা বিশ্বাস করত, অন্তঃসত্ত্বা নারী যদি প্যাঁচার ডাক শোনেন, তাহলে তার কন্যা সন্তান হবে। কোনো কোনো জায়গায় অশুভ মনে করে পুড়িয়ে মারা হয় প্যাঁচা। কিছু ধর্মে ভাগ্য উন্নয়নের আশায় ‘প্যাঁচাবলি’ দিয়ে প্যাঁচার দেহের বিভিন্ন অংশ তাবিজে করে গলায় পরানো হয় ব্যক্তির।
মানুষ যাই বলুক বা করুক, পরিবেশবিদদের মতে, প্যাঁচা একটি পরিবেশবান্ধব পাখি এবং পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করতে এই পাখির প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। আবার হিন্দু ধর্মে প্যাঁচাকে পবিত্রতার প্রতীক হিসেবে দেখা হয়। কারণ ঐশ্বর্যের দেবী লহ্মীর বাহন হলো প্যাঁচা। এর সাথে মিল রয়েছে গ্রিক পুরাণের দেবী অ্যাথেনার। সেই দেবীরও সঙ্গী ছিল প্যাঁচা। প্যাঁচার চেহারা খারাপ না হলেও মানুষের বাহ্যিক কদর্য বোঝাতে প্যাঁচার সাথে তুলনা করা হয়। আর প্যাঁচার ডাকতে বেশিরভাগ মানুষই অশুভ বলে ধরে নেয়। অথচ বিষয়টি মোটেই এরকম নয়। অন্যান্য পাখিদের মতোই প্যাঁচাও রাতে শিকার ধরে। আর সে সময়ই ডাকাডাকি করে। প্যাঁচার বিশেষত্ব হলো পাখিটি প্রায় নিঃশব্দে উড়তে পারে। ওড়ার সময় ডানা ঝাপটানোর শব্দ হয় না। এজন্য শিকার বুঝতেই পারে না শিকারীর উপস্থিতি। আর রাতের বেলায় প্যাঁচার দৃষ্টিশক্তি প্রখর হয়।
পৃথিবীজুড়ে প্রায় ২০০ প্রজাতির প্যাঁচা দেখা যায়। বাংলাদেশে রয়েছে প্রায় ১৬ প্রজাতির প্যাঁচা। এরমাঝে লহ্ম¥ীপ্যাঁচা, কোটরে প্যাঁচা, নিম প্যাঁচা, কুপোখ বা কালো প্যাঁচা, ভুতম প্যাঁচা, পাহাড়ি প্যাঁচা, ঘাসবনের প্যাঁচা, ভুমা প্যাঁচা, বন্ধনিযুক্ত নিমপোখ প্যাঁচা, বনের বড় প্যাঁচা উল্লেখযোগ্য। প্যাঁচা পাখিদের দলের হলেও এরা অন্যান্য পাখির সাথে একত্রে না থেকে একাকী নির্জনে বড় গাছের কোটর, বন-জঙ্গল, দালানের ফাঁক-ফোকর কিংবা গাছ-গাছালির ঘনপাতার আড়ালে লুকিয়ে থাকে। পরিবেশবিদদের মতে, পেঁচা একটি পরিবেশবান্ধব পাখি এবং পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করতে এই পাখির প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। ছোট ছোট প্রাণী, যেমন- ইঁদুর, টিকটিকি, উড়ন্ত পাখি এবং বিভিন্ন ধরনের কীটপতঙ্গ এদের প্রধান খাবার। একসময় বাংলাদেশের শহর ও গ্রামে অনেক প্যাঁচা দেখা গেলেও এখন আর তেমন দেখা মেলে না। বিজ্ঞানীরা গবেষণায় দেখেছেন, প্যাঁচার বুদ্ধিশক্তি খুব প্রখর না হলেও, অন্য পাখির তুলনায় একেবারে কমও নয়। নির্বিচারে বন উজাড়, ফসল আবাদ করতে জমিতে বিভিন্ন রাসায়নিক সার ও কীটনাশক প্রয়োগ, শিকারিদের দৌরাত্ম্য, খাদ্যের অভাব, অশুভ পাখি বলে মেরে ফেলাসহ নানা কারণে প্রকৃতি থেকে দিনদিন প্যাঁচার সংখ্যা কমে যাচ্ছে। এই শান্ত স্বভাবের পাখিটিকে আমাদের রক্ষা করতে হবে।





















































