আকাশ ঝকঝকে পরিষ্কার, বৃষ্টি নেই কোথাও, অথচ মহানগরীর বেশ কিছু এলাকা জলাবদ্ধতায় তলিয়ে গেছে কোথাও হাঁটু সমান পানি। না, বৃষ্টির পানি নয়, গত শুক্রবার দুপুরের পর জোয়ারের পানিতে নগরের জিইসি, দুই নম্বর গেইট এলাকা, আগ্রাবাদ, শান্তিবাগ, গোসাইলডাঙ্গা, হালিশহর আবাসিক এলাকা, সিডিএ আবাসিক এলাকা, বাকলিয়া, চাক্তাইÑখাতুনগঞ্জ, পাথরঘাটা, চান্দগাঁও, বেপারি পাড়াসহ নগরীর নি¤œাঞ্চল তলিয়ে গেছে।
কদিন আগেই ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’ এর তা-বে দেশের উপকূলীয় অনেক এলাকায় বেড়ি বাঁধ ভেঙে সমুদ্রের পানি ঢুকেছে। ফসল ও বসতঘরের ক্ষতি হয়েছে ব্যাপক। গত শুক্রবার পূর্ণিমার প্রভাবে জোয়ারের পানি খাল, নালা উপচে নগরীতে ঢুকেছে। রাস্তা উঁচু করায় পানি অলিতে গলিতে, বাসাবাড়ি, দোকানপাটে ঢুকেছে। নগরীর মানুষ দীর্ঘক্ষণ জলাবদ্ধতায় ভুগেছে। জোয়ারের পানি নেমে গেলে ময়লা, আবর্জনা রাস্তায় জমে থেকেছে। বাসাবাড়ি, দোকানে দূষিত বর্জ্য পরিবেশ দূষণ ঘটাচ্ছে ভয়াবহ। আগ্রাবাদ মা ও শিশু হাসপাতালের নীচতলা যথারীতি পানিতে সয়লাব, রোগীদের দুর্দশা চরম হয়েছে। যানবাহন চলাচল বিঘিœত হয়েছে। ময়লা পানি, বর্জ্যরে মধ্যদিয়ে হেঁটে মানুষ চলাচল করেছে। দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম নগরটির এ দৃশ্য নিশ্চয়ই সুখকর নয়।
মহানগরীর জলাবদ্ধতায় নগরবাসীর দুর্ভোগ নিত্য সময়ের। নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (চউক) প্রকল্প নিলেও তার উপযোগিতা নগরবাসী এখনো পায়নি। সামান্য বৃষ্টিতে বা জোয়ারের পানিতে চাক্তাই, খাতুনগঞ্জের ব্যবসাÑবাণিজ্য অচল হয়ে পড়ে। গুদামে পানি ঢুকে কোটি কোটি টাকার পণ্য নষ্ট হয় অথচ এটি দেশের সর্ববৃহৎ পাইকারি বাণিজ্য কেন্দ্র। নগরীর অন্যান্য এলাকার মার্কেট ও বাসাবাড়িতে বর্ষায় নিত্যই পানি ঢুকে মানুষের জীবন জীবিকার যে সমূহ ক্ষতি হচ্ছে তা অপরিমেয়। করোনা মহামারিতে স্বাস্থ্যসম্মত জীবনযাপন যেখানে মুখ্য বিষয়, সে ক্ষেত্রে জলাবদ্ধতায় পরিবেশের দূষণ ভয়াবহ রকমের। তদুপরি ‘ব্ল্যাক ফাঙ্গাস’ মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকির কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে। নগরীতে ডায়রিয়া, জ্বরে শিশুদের হাসপাতালে ভর্তি হবার খবরও আছে। জোয়ারের পানিতে জলাবদ্ধতা, দূষণ জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকির সৃষ্টি করবে। ময়লা আবর্জনা, দূষণ থেকে রক্ষা পেতে সিটি কর্পোরেশনের উচিত দ্রুত এগুলি পরিষ্কার করা, জীবাণুনাশক স্প্রে করে দেওয়া। নগরীর খালÑনালাÑনর্দমা নিয়মিত পরিষ্কার রাখলে জলাবদ্ধতা এত প্রকট হয় না। অথচ এগুলি চসিক এর রুটিন কাজ।
জোয়ারজনিত জলাবদ্ধতা নিরসনে কর্ণফুলী নদীর সঙ্গে যুক্ত খালগুলোর মুখে জলকপাট (স্লুইস গেট) নির্মাণ করছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ। প্রকৌশলীরা বলছেন, জলকপাটগুলির নির্মাণ কাজ শেষ হলে দুর্ভোগ থাকবে না। বর্ষাকাল সামনে, নগরীর মানুষ আবার দুর্ভোগে পড়বে, খাতুনগঞ্জ, চাক্তাই ও নগরীর মার্কেটে যথারীতি পানি ওঠে পণ্য নষ্ট হবে, বসতবাড়িতে পানি ঢুকবে-এসব আশঙ্কায় এখন থেকেই দুশ্চিন্তায় নগরবাসী। বর্ষার আগেই খাল, নর্দমা পরিষ্কার করে পানি প্রবাহ স্বাভাবিক করা হোক, ময়লা আবর্জনা সাফ করে ফেলা হোক, চসিক এবং সিডিএ এ কাজগুলো করে নগরবাসীকে কিছুটা হলেও স্বস্তি দিক। নগরবাসীর দুর্ভোগে সেবা সংস্থাগুলির নির্মোহ অবলোকন, দায়সারা গোছের কর্তব্য পালন, চলমান প্রকল্পের ধীরগতি কাম্য নয়।
মতামত সম্পাদকীয়