সুপ্রভাত ডেস্ক »
গণহত্যাকারী আওয়ামী ফ্যাসিস্ট সরকারের ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার আইন-২০২২’-এর অধীনে নির্বাচন কমিশন গঠন, কমিশনারদের নিয়োগ ও শপথ গ্রহণ প্রত্যাখ্যান করেছে জাতীয় নাগরিক কমিটি। বিদ্যমান আইন এবং আইনের অধীনে গঠিত নির্বাচন কমিশন বাতিল করে সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবের আলোকে নতুন আইনের অধীনে কমিশন গঠনের দাবি জানিয়েছেন তারা।
তাদের বক্তব্য, বিদ্যমান আইনটিসহ অন্যান্য নিবর্তনমূলক আইনের উপর দাঁড়িয়ে বিগত গণহত্যাকারী সরকার আয়নাঘর, হত্যা ও গুমের মতো নিষ্ঠুর ঘটনাগুলো ঘটিয়েছে। সেই কালাকানুনের অধীনে ইসি গঠন করে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার জুলাই ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানকে কলঙ্কিত করেছে।
আজ রোববার বিকেলে রাজধানীর বাংলামোটরে জাতীয় নাগরিক কমিটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে এ সব কথা বলেছেন মুখপাত্র সামান্তা শারমিন।
সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসীরুদ্দিন পাটোয়ারী বলেন, সংস্কার কমিশনের প্রস্তাব ব্যতীত পূর্বের কালাকানুনে নিয়োগ আমরা ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করছি। গত ১৫ বছরে নির্বাচন কমিশন ফ্যাসিবাদে ভূমিকা রেখেছে। এই পচাগলা নির্বাচন কমিশন এবং কমিশনের কায়দাকানুন সঠিকভাবে পুনর্বিন্যাস না করে আগামী নির্বাচন হলে শহীদদের রক্তের সঙ্গে ও গণঅভ্যুত্থানের স্পিরিটের সঙ্গে বেঈমানি হবে।
তিনি আরও বলেন, রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর ছাত্রদের নিয়োগপ্রাপ্ত ড. ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত সরকারের প্রতি আমরা আশাহত হচ্ছি প্রতিনিয়ত। আমরা প্রতিনিয়ত বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছি। সংস্কার কমিশনের রিপোর্ট জমা ও সংস্কার হওয়া পর্যন্ত আমরা বাংলাদেশে কোনো কিছুর আয়োজন করতে দেব না। জনগণ ঐক্যবদ্ধ হোন; সংস্কার কমিশনের রিপোর্ট, জনগণের দাবি এবং গণ অভ্যুত্থানের স্পিরিটের ব্যত্যয় হলে আমরা আবার মাঠে ফিরে যাব।
রাজনৈতিক দলগুলোর জনগণের কাছে কমিটমেন্ট ছিল; সরকারকে সহযোগিতা করা জানিয়ে নাসীর আরও বলেন, সেই জায়গাটি দেখতে পাচ্ছি না। উপদেষ্টারা তাদের প্রতিশ্রুতির আহ্বান জানালেও তাদের সহযোগিতা লক্ষ করছি না। প্রতিনিয়ত দেখতে পাচ্ছি, রাজনৈতিক দলগুলো টেন্ডার-চাঁদাবাজিতে জড়িয়েও তড়িৎ গতিতে নির্বাচনের দিকে যাত্রা শুরু করেছে। রাজনৈতিক দলগুলো ধৈর্যের পরিচয় দিয়ে জনগণের অভ্যুত্থানের ম্যান্ডেট বজায় রাখুক। নইলে জনগণ যে কোনো রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে আবার রুখে দাঁড়াতে বাধ্য হবে।
সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ইসি গঠনের কথা জানিয়ে নাসীরুদ্দিন আরও বলেন, অতিসত্বর যারা নিয়োগ নিয়েছেন, সকলের শপথ প্রত্যাখ্যান করে বদিউল আলম মজুমদারের নেতৃত্বে গঠিত ইলেকশন কমিশনের সংস্কার কমিটির ডিসেম্বরে যে রিপোর্ট আসবে, তার ভিত্তিতে সুন্দর প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে একটি গণভোট আয়োজনের মাধ্যমে সুন্দর বাংলাদেশ দেখতে চাই।
রাজনৈতিক দলগুলোকে অসহযোগিতার মনোভাব থেকে সরে এসে সংস্কার কমিশন এবং সরকারকে সময় দেওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেন তিনি।
লিখিত বক্তব্যে সামান্তা শারমিন উল্লেখ করেন, ২০২২ সালে ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ সরকার নির্বাচন কমিশনার নিয়োগে প্রণীত আইনটি বিএনপিসহ অপরাপর রাজনৈতিক দলগুলো প্রত্যাখ্যান করেছিল। আমরা বিস্ময়ের সঙ্গে লক্ষ্য করেছি, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার ওই আইনের অধীনে নির্বাচন কমিশন গঠনের সার্চ কমিটি গঠন করে। জুলাই ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর ওই আইন বাতিল করাটাই যুক্তিযুক্ত হত।
তিনি আরও উল্লেখ করেন, নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনও আইনটি বদলানোর পক্ষে। তারা ইতোমধ্যেই একটি নতুন আইনের খসড়া তৈরি করেছে যা সরকারের কাছে পাঠানোর প্রক্রিয়ার মধ্যে আছে। সার্চ কমিটি গঠন করায় এ কাজ আর এগুবে কিনা তা নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্ব তৈরি হয়েছে। ইসি গঠনে সার্চ কমিটি গঠনের আগে সংস্কার কমিশনের সঙ্গেও কোনো যোগাযোগ করা হয়নি।
তিনি উল্লেখ করেন, নির্বাচন কমিশন সংস্কারের প্রস্তাব পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগেই রাজনৈতিক দলগুলোর চাপের কাছে নতি স্বীকার করে সরকার নির্বাচন কমিশন গঠন করতে বাধ্য হয়েছে। এ কাজ গণঅভ্যুত্থানের কমিটমেন্টের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতার শামিল।
লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, ড. ইউনুস ও তার সরকারকে অবশ্যই মনে রাখতে হবে, ফ্যাসিবাদী ও অবৈধ সংবিধানের আইনি কাঠামোয় নির্বাচন দিতে এত মানুষ প্রাণ দেয়নি। গণঅভ্যুত্থানের দাবি কেবল নির্বাচনের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়।
নাগরিক কমিটির সদস্যসচিব আখতার হোসেন বলেন, বর্তমান সরকার তত্ত্বাবধায়ক সরকার নয়। দুই হাজার মানুষ জীবন দিল, এত মানুষ পঙ্গু-আহত হল তাদের আন্দোলনের মধ্য দিয়ে গঠিত সরকার নির্বাচন দিয়ে দায়মুক্তি পেয়ে গেল, বিষয়টি এমন নয়। নির্বাচন নিয়ে অনেক প্রশ্ন আছে সেই সমাধানে সংস্কার কমিশন হয়েছে।
তিনি বলেন, ৩১ তারিখের মধ্যে সংস্কার কমিশনের রিপোর্ট আসার কথা, আইন নিয়ে তাদের কী বক্তব্য সেটাই জানতে পারলাম না। সে বক্তব্য জানা পর্যন্ত অপেক্ষা করা দরকার ছিল। সেই অনুযায়ী কার্যক্রম সমাপ্ত হওয়ার পর নির্বাচন কমিশন হওয়ার কেন এত তাড়া? প্রয়োজনীয় সংস্কারের পরেই যেন নির্বাচন হয়, আমরা কোনো প্রহসন দেখতে চাই না। আমরা নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত পেতে চাই; ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার সমস্ত উপাদান নিশ্চিহ্ন করতে চাই।
সরকারের সংস্কারের ম্যান্ডেট আছে কিনা এমন প্রশ্নে আখতার হোসেন বলেন, বাংলাদেশের মানুষ জীবন দেওয়ার মধ্য দিয়ে এ সরকারকে ক্ষমতায় আসীন করেছে, ম্যান্ডেট দিয়েছে, ন্যায্যতা-বৈধতা দিয়েছে। এই বৈধতার ভিত্তিতে সংস্কারের বিষয়গুলো নিয়ে তারা কাজ করবেন। কাজেই এখন সরকার অনির্বাচিত এ কারণে তাদের ক্ষমতায় আসীন হওয়ার ন্যায্যতা প্রশ্নবিদ্ধ নয়।
সংবাদ সম্মেলনে নাগরিক কমিটির সদস্য আকরাম হুসাইন, আরিফুল ইসলাম আদীব, সারোয়ার তুষার প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।