নির্বাচনী সব ‘জঞ্জাল’ সমাধান করে ভোট চাই

যুক্তরাষ্ট্রকে বিএনপি

সুপ্রভাত ডেস্ক »

বাংলাদেশে নির্বাচনী যত ‘জঞ্জাল’ তৈরি করা হয়েছে, তার সব কিছুর সমাধান করে ‘নির্দলীয় সরকার’ ছাড়া ‘সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়’ বলে যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক নির্বাচনী টিমের কাছে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরেছে বিএনপি।

সোমবার সকালে বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে দেড় ঘণ্টার রুদ্ধদ্বার বৈঠকে দলের পক্ষ থেকে এই দাবি তুলে ধরা হয় বলে জানানো হয়েছে। খবর বিডিনিউজের।

দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, নির্বাচনী যত জঞ্জাল সৃষ্টি করা হয়েছে ভোট চুরির প্রকল্পের অংশ হিসেবেৃ সব কিছু সমাধান করে একটি নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে দেশের জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠিত হবে, যারা জনগণের কাছে দায়বদ্ধ থাকবে, এগুলো আমরা যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদলকে বলেছি।

নির্বাচনী কী কী ‘জঞ্জাল’ তৈরি হয়েছে, তার ব্যাখ্যায় বিএনপি নেতা বলেন, ‘এখন নিপীড়ন-নির্যাতনসহ ভোট চুরির প্রকল্প আরো অধিকতর শক্তিশালী হয়েছে এবং তারা ভোট চুরির প্রকল্পকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিয়েছে।

বিচার বিভাগ থেকে শুরু করে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, অলিগার্গ লুটেরা ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদ নিয়ে তারা একটা প্রজক্টে করেছে; যে প্রজেক্টের মাধ্যমে আবারো তারা বাংলাদেশের মানুষের ভোট চুরির অভিপ্রায়ে কাজ করে যাচ্ছে।

তিনি বলেন, এখান থেকে মুক্ত হতে হলে আমাদের যে এক দফা দাবি হচ্ছে শেখ হাসিনার সরকারের বলা ভুল হবে, এই রেজিমের পদত্যাগ করতে হবে, একটা নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন হতে হবে, সংসদ বাতিল করতে হবে, এই নির্বাচন কমিশন বাতিল করে সকলের মতামতের ভিত্তিতে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হবে।

আলোচনায় বিএনপির পক্ষে মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে ছিলেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ইসমাইল জবিহউল্লাহ, সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ ও মানবাধিকার বিষয়ক সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদও।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি দলে ছিলেন মারিয়া চিন আব্দুল্লাহ, মারি মাইত্রি, জেমি ক্যানডেন্স সাক্স স্পাইকারম্যান, জিওফ্রে পিটার ম্যাকডোনাল্ট, ডেনিয়েল মাইকেল রেইলি ও আকাশ সিস্সাাই কুলোরি।

তবে তারা কেউ গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেননি।

বাংলাদেশের আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি দেখতে এবং ভোটের বিষয়ে ‘স্বাধীন ও নিরপেক্ষ পর্যালোচনা’ চালানোর জন্য শনিবার ঢাকায় এসেছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক-নির্বাচনি পর্যালোচনা মিশন (পিইএম)।

ছয় সদস্যের সমন্বয়ে গঠিত ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউট (আইআরআই) এবং ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক ইনস্টিটিউটের (এনডিআই) যৌথ এই মিশন বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বাংলাদেশে থাকবে।

সরকার, রাজনৈতিক দল, নির্বাচন কমিশন, নাগরিক সমাজের পাশাপাশি বিভিন্ন বিদেশি মিশনের সঙ্গে বৈঠক করবে এই প্রতিনিধিদল।

সফরের প্রথম দিনই যুক্তরাষ্ট্রের দলটি পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে বৈঠক করে। সেখানে মন্ত্রী তাদেরকে বলেন, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের ‍উদ্যোগ নিলেও ভোটকে সংঘাতমুক্ত করার কাজটি এককভাবে ‘সরকারের হাতে নেই’। তিনি বলেন, নন-ভায়োলেন্ট হবে সর্বদলের ঐক্যমতে। একান্ত আন্তরিকতা, ইচ্ছার উপর নির্ভর করে।

‘৩০ বছর বয়সীরা কখনও ভোট দিতে পারেনি’
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, আমাদের কথা একট্ িছিল যে, নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য, আন্তর্জাতিক মানের বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন বাংলাদেশে হবে কি না এবং হতে হলে কী প্রয়োজন, সেটা কীভাবে করা যায়।

‘বিএনপির পক্ষ যেটা বলে আসছি সবসময়, শেখ হাসিনার অধীনে কোনোভাবে অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। তারা বিগত দুইটা নির্বাচনে বাংলাদেশের জনগণের ভোটাধিকার কেড়ে নিয়েছে।

আজকে যারা বয়স ৩০-৩২ বছর হয়েছে, তারা বিগত নির্বাচনগুলোতে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেনি, তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করতে পারেনি। এখন অবস্থার কোনো পরিবর্তন হয়নি বরং আরো অবনতি হয়েছে।

বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে এর আগে ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধি দল বাংলাদেশে এসেছিল স্মরণ করিয়ে বিএনপি নেতা বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিরাও একই উদ্দেশ্যে বাংলাদেশে এসেছে। তারা নির্বাচনের পরিবেশ পর্যবেক্ষণ করতে এসেছেন যে, আগামী দিনে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে কি না।“সবার মনে আজকে বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে যে প্রশ্ন জেগেছে, তারা সেই প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশে এসেছেন। আজকে আমাদের সঙ্গে কথা বলেছেন, আরো অনেকের সঙ্গে তারা কথা বলবেন।