সুপ্রভাত ডেস্ক »
আসন্ন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে ‘নির্বাচনকালীন সরকার’ গঠন করা হলেও সংসদে না থাকায় বিএনপির সেই সরকারে থাকার সুযোগ নেই বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘আমরা এইটুকু উদারতা দেখাতে পারি, পার্লামেন্টে সংসদ সদস্য যারা আছে, তাদের মধ্যে কেউ যদি ইচ্ছা পোষণ করে নির্বাচনকালীন সময়ে তারা সরকারে আসতে চায়, সেটা আমাদের মধ্যে আছে। এমনকি ২০১৪ সালে খালেদা জিয়াকেও আমরা আহ্বান করেছিলাম, তারা তো আসেনি। এখন তো তারা নাইও পার্লামেন্টে, কাজেই ওটা নিয়ে চিন্তারও কিছু নেই।’
সাম্প্রতিক ত্রিদেশীয় সফরের অভিজ্ঞতা জানাতে সোমবার গণভবনে সংবাদ সম্মেলনে আসেন প্রধানমন্ত্রী। সেখানেই এক সাংবাদিকের প্রশ্নে নির্বাচনকালীন সরকার এবং বিএনপির প্রসঙ্গ আসে। খবর বিডিনিউজের।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘নির্বাচনকালীন সরকার, আমরা ওয়েস্টমিনস্টার টাইপ অব ডেমোক্রেসি ফলো করি, তারা যেভাবে করে আমরা সেভাবেই করব।’
নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে স্পষ্ট কোনো ব্যাখ্যা এখন সংবিধানে নেই। বর্তমান ব্যবস্থায় ক্ষমতাসীন সরকারের অধীনেই নির্বাচন হয়। ভোটের আগে সংসদ ভেঙে দেওয়ার প্রয়োজন হয় না, তবে তিন মাসের ক্ষণ গণনা শুরু হলে সংসদের স্বাভাবিক কার্যক্রম বন্ধ থাকে।
২০১৪ সালের জানুয়ারিতে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার অধীনে অপেক্ষাকৃত ছোট একটি মন্ত্রিসভা গঠন করেন; যার নাম দেওয়া হয় ‘সর্বদলীয় সরকার’।
ওই মন্ত্রিসভায় আওয়ামী লীগের শরিক দলগুলোর নেতাদের নেওয়া হয়। স্বল্প পরিসরের ওই মন্ত্রিসভা সরকারের দৈনন্দিন কার্যক্রম পরিচালনার দায়িত্ব পালন করে।
নির্বাচনকালীন সেই সরকারে বিএনপিকেও অংশ নেওয়ার আমন্ত্রণ জানায় আওয়ামী লীগ। তবে বিএনপি সে সময় এই প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়ে ভোট বর্জনের পাশাপাশি নির্বাচন ঠেকানোর চেষ্টা চালায়। তুমুল সহিংসতার মধ্যে নি¤œ ভোটার উপস্থিতিতে সেই নির্বাচন হয়।
এরপর বিএনপি ২০১৮ সালের ডিসেম্বরের একাদশ সংসদ নির্বাচনে আসে আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনেই। তবে এবার দশম সংসদ নির্বাচনের আগের মত নির্দলীয় সরকারের দাবিতে ফিরে গেছে তারা। সরকার এবারও সেই দাবি নাকচ করছে।
এর মধ্যে হঠাৎ করেই নির্বাচনকালীন সরকারের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা তৈরি হয়েছে। ৭ মে নির্বাচনকালীন সরকারে বিএনপিকে অংশ নেওয়ার প্রস্তাব বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ইতিবাচক সাড়া দেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
সেদিন তিনি বলেন, ‘কোনো বিষয়ে সিদ্ধান্ত যদি নিতে হয়, তাহলে সংবিধানের মধ্যেই থাকতে হবে। সংবিধানে ছাড় দেওয়ার কোনো সুযোগ থাকলে আপনি যেটা বললেন, এটাতে কোনো অসুবিধা নেই।
‘বিএনপি যদি বলে ‘আমরা নির্বাচনে আসব’ নির্বাচনে আসলে তখন এক কথা। তারা নির্বাচন করবেই না তত্ত্বাবধায়ক ছাড়া। তারা এই সংসদকে চায় না। মন্ত্রিসভা, প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ চায়। এসব শর্তারোপের মধ্যে আমরা কীভাবে বলব যে, আপনারা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নিতে আসুন বা অন্য কোনো মন্ত্রণালয় আপনাদের দিচ্ছি? তাদের তো সম্পূর্ণ উত্তর আর দক্ষিণ মেরুর অবস্থান।’
দুই দিন পর এক প্রতিক্রিয়ায় বিএনপি মহাসচিব সাংবাদিকদের জানান, নির্বাচনকালীন সরকারে যোগ দেওয়ার বিষয়টি তাদের ভাবনায় নেই।
তিনি বলেন, ‘আপনারা কি বিশ্বাস করেন? ২০১৮ সালে শেখ হাসিনাকে বিশ্বাস করে আমরা তার সঙ্গে সংলাপে বসেছিলাম। সেই সংলাপে যে সমস্ত কথা তিনি দিয়েছিলেন সেগুলোর একটাও তারা রক্ষা করেননি।
‘সুতরাং ওবায়দুল কাদের সাহেবের কথায় আস্থা রাখা, বিশ্বাস করা এটার প্রশ্নই উঠতে পারে না। এগুলোকে আমি মনে করি, এটা আরেকটি চক্রান্ত জনগণকে বিভ্রান্ত করবার। তারা বলবে যে এই তো আমরা প্রস্তাব দিয়েছি, ওরা শুনছে না, যাচ্ছে না।’
এর জবাবে ১০ মে কাদের বলেন, ‘বিএনপিকে সংলাপ এবং নির্বাচনকালীন সরকারে ডাকা হয়নি। এখানে প্রলোভনের ফাঁদের প্রশ্ন আসে কেন?
ওই আলোচনার সূত্র ধরে সোমবার এক সাংবাদিকের প্রশ্নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের বর্তমান অবস্থান স্পষ্ট করেন।
নির্বাচনের আগে কোনো চাপ আছে কি না এমন প্রশ্নের উত্তরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘নির্বাচন আসতেছে, আমি কি ভয় পাব? কেনো ভয় পাব? আমি জনগণের জন্য কাজ করছি জনগণ যদি ভোট দেয় আছি, না দিলে নাই। আমাদের যে টার্গেট, সেটার মধ্যে বাংলাদেশ ডেভেলপিং কান্ট্রির মর্যাদা পেয়েছে।
‘আর ইলেকশন করব এই কারণে যে, আমি ২৪-এ করতে পারি নাই করোনাভাইরাসের কারণে, আমি ২৬-এ করে দিয়ে যেতে চাই।’
অর্থনীতির বিভিন্ন সূচকে অগ্রগতি বজায় রেখে ২০২৪ সালে জাতিসংঘের তালিকায় স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের কথা ছিল বাংলাদেশের। কিন্তু করোনাভাইরাস মহামারীর ধাক্কায় সৃষ্ট ক্ষতির কারণে সেই লক্ষ্য দুবছর পিছিয়ে ২০২৬ সাল করা হয়েছে, সে কথাই শেখ হাসিনা বলছিলেন।
আন্দোলনের টাকা কোথা থেকে আসে?
বিএনপির আন্দোলনের প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তারা মাইক লাগিয়ে আন্দোলন করেই যাচ্ছে, সরকার হটাবে, আমরা তো তাদের কিছু বলছি না। আমরা যখন বিরোধী দলে ছিলাম আমাদেরকে কি নামতে দিয়েছে? গ্রেনেড হামলা করেও হত্যা করার চেষ্টা করেছে। ২১ হাজার নেতাকর্মী আমাদের হত্যা করেছে। আগুনে পুড়িয়ে পুড়িয়ে মানুষ হত্যা করেছে।’
২০১৩-১৫ সালে বিএনপির আন্দোলনের সময় জ্বালাও-পোড়াওয়ের কথা মনে করিয়ে দিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘নির্বাচন ঠেকাতে পাঁচশ স্কুল পুড়িয়ে দিয়েছে, সাড়ে তিন হাজার লোক আগুনে পোড়া, তিন হাজার আটশটি গাড়ি পুড়িয়েছে, ছয়টি রেল পুড়িয়েছে, নয়টা লঞ্চ পুড়িয়েছে, ৭০টা সরকারি অফিস পুড়িয়েছে।
‘তারপর জ্বালাও-পোড়াও এগুলো করে গেছে। আন্দোলন করুক, মানুষ আনুক, এতে কোনো সমস্যা নাই। শুধু জ্বালাও পোড়াও যদি করতে আসে, কোনো মানুষকে যদি পোড়ায়, তাকে ছাড়ব না। মানুষের ক্ষতি আর করতে দেব না। পোড়া মানুষগুলোর কষ্ট দেখলে আপনাদের কষ্ট হয় না? এক একটা পরিবার আজকে কি দুরাবস্থায় আছে কেউ কি খবর নিয়েছেন, খবর রাখেন?’
বিএনপির আন্দোলনের অর্থায়ন নিয়ে প্রশ্ন তুলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আর কার কথায় আন্দোলন করছে, কোথা থেকে টাকা পাচ্ছে? বাংলাদেশের মানুষ কি অন্ধ হয়ে গেছে? চোখে দেখে না? হাজার হাজার কোটি টাকা তো লোপাট করে নিয়েই গেছে।
‘আর কাদের মদদে করছে সেটা একটু খোঁজ নেন না। এত টাকা কোথায় পাচ্ছে, এই যে লোক নিয়ে আসে, প্রতিদিন মাইক লাগিয়ে বক্তব্য দিচ্ছে এগুলো তো বিনা পয়সায় আর হচ্ছে না। কত টাকা পাচ্ছে, কত লোক আনছে, মোটর সাইকেলে কত লোক চড়বে, সেসব হিসাব তো আছে। সেগুলো আপনারা দেখেন না কেন? জিজ্ঞাসা করেন। প্রতিদিন তাদের এই আন্দোলন।’
রাস্তা বন্ধ করে আন্দোলন করার প্রসঙ্গ তুলে ধরে সরকার প্রধান বলেন, ‘গাজীপুরে রাস্তা বন্ধ করে মিটিং হল; কোন এক সংবাদপত্রে প্রশ্ন তুলেছে? প্রতিদিন বিএনপি যে অর্থনৈতিক হার্ট অব দ্য সিটি, সেইখানে বিএনপি যে তাদের অফিসের সামনে রাস্তা বন্ধ করে মিটিং করে, এই যে জ্ঞানী লোক কথা বললেন, এই দৃশ্য চোখে পড়ে না? প্রেসক্লাবের সামনে, পুরানা পল্টনে, সব জায়গায় রাস্তা বন্ধ করে আন্দোলন করে, এটা চোখে পড়ে না?
‘যারা এই কথাগুলো বলেছে, তাদের কাছে আমার প্রশ্ন, এটা তো নির্বাচনী প্রচার, নির্বাচনী প্রচারে এমন হতে পারে। বিএনপি রাস্তা বন্ধ করে আন্দোলন করে, আমি জানি এই আন্দোলন করে কোথাও থেকে লাভবান হচ্ছে। যত পারে আন্দোলন করুক, আমার কোনো ব্যপার না। আমি আমার জনগণের সঙ্গে আছি। জনগণের জন্য কাজ করে যাচ্ছি, জনগণের আস্থা বিশ্বাসই আমার একমাত্র শক্তি।’
দেশের মানুষকে ভালো রাখার জন্যই কাজ করে যাচ্ছেন মন্তব্য করে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমার তো হারাবার কিছু নেই, বাবা মা, ভাই, সব হারিয়েছি। আমার কী আর হারাবার আছে? আমি আমার দেশের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। যারা আমার দুর্বলতা খোঁজে, মানি লন্ডারিং করেছে তো খালেদা জিয়ার দুই ছেলে। ৪৪ কোটি টাকা তো উদ্ধার করে নিয়ে আসছি।
‘এখনও বিএনপির বহু নেতারা টাকা বিদেশের ব্যাংকে জমা আছে, কারও কারও টাকা ফ্রিজ করা আছে। মানি লন্ডারিং করে কারা টাকা বিদেশে নিয়ে যেয়ে বড় বড় নাম কিনেছে, সেটাও খুঁজে বের করেন আপনারা। এটা করতে তো আপনাদের দেখি না।’
‘যারা নিষেধাজ্ঞা দেবে, তাদের কিচ্ছু কিনব না’
বাংলাদেশের ওপর যারা নিষেধাজ্ঞা দেবে, সেসব দেশের কাছ থেকে কেনাকাটা না করার জন্য সরকারি ক্রয়বিধিতে নতুন ধারা যুক্ত করার সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেছেন, আমি আমাদের অর্থ মন্ত্রণালয়কে বলে দিচ্ছি, আমাদের কেনাকাটা পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়কে বলে দিয়েছি, এখন থেকে আমরা যে বিদেশ থেকে জিনিসপত্র ক্রয় করি, সেখানে আমাদের একটা ক্লজ থাকবে যে, যারা আমাদেরকে স্যাংশন দেবে, তাদের থেকে আমরা কোনো কিছু কেনাকাটা করব না।’ এক সাংবাদিকের প্রশ্নে ওই সিদ্ধান্তের কথা জানান সরকারপ্রধান।
বাংলাদেশের ওপর যারা নিষেধাজ্ঞা দেবে, তাদের কাছ থেকে কিছু না কেনার সিদ্ধান্ত জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘পরিষ্কার কথা, এতে সংকট আর ভয়ের কী আছে? আমরাতো কারও উপর এই রকম নির্ভরশীল না এখন।’
‘গুরুতর’ মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে ২০২১ সালের ১০ ডিসেম্বর এলিট ফোর্স র্যাব এবং এর সাবেক ও বর্তমান সাত কর্মকর্তার উপর নিষেধাজ্ঞা দেয় যুক্তরাষ্ট্র সরকার।
এরপর বিভিন্ন সময় বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের অনুরোধ জানানো হলেও যুক্তরাষ্ট্রের সাড়া মেলেনি। যুক্তরাষ্ট্র বরাবরই বলে আসছে, নিষেধাজ্ঞা উঠানোর প্রক্রিয়া বেশ ‘জটিল’।
এর মধ্যে গত ১৫ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডনাল্ড লু’র ঢাকা সফরের পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেছিলেন, র্যাবের নিষেধাজ্ঞা অচিরেই উঠে যাবে বলে তার আশা।
তবে বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের মুখপাত্র জেফ রাইডেনাওয়ার পরদিন জানান, বিচারবহির্ভূত হত্যা কমে আসায় র্যাবের প্রশংসা করলেও এই বাহিনীর উপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে কোনো সময়সীমার ইঙ্গিত দেননি ডনাল্ড লু। শনিবার এক অনুষ্ঠানে কেনাকাটার ক্ষেত্রে এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার বিষয়ে ধারণা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর যুক্তরাষ্ট্রসহ তিন দেশে ১৫ দিনের সফর নিয়ে সোমবার গণভবনে সংবাদ সম্মলনে বিষয়টি নিয়ে প্রশ্নের উত্তর দেন তিনি।
ক্রয়বিধিতে নতুন ধারা যুক্ত করার আগেই এর সঙ্গে সঙ্গতি রেখে কেনাকাটা সংক্রান্ত দুটি বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলেও জানান সরকার প্রধান। কোনো দেশের নাম উল্লেখ না করেই তিনি বলেন, ‘আমাদের উপর যারা স্যাংশন দেবে তাদের কাছ থেকে কিচ্ছু কিনব না। পরিষ্কার কথা। এর মধ্যে দুটা অ্যাকশন আমি নিয়েছি, আগেই।’ কোন কোন ক্ষেত্রে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে সাংবাদিকরা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বলব না আমি সব তথ্য। সাংবাদিকরা খবর না রাখলে আমি কেন বলব।
মার্কিন নিষেধাজ্ঞার সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদেরকে কী কারণে স্যাংশন দিল? যাদেরকে দিয়ে আমরা সন্ত্রাস দূর করলাম, যাদেরকে দিয়ে দেশে শান্তি।’
২০১৬ সালে হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলার পর নেওয়া পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘তারপর এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটতে পারেনি। কারণ, আমাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা ভালোভাবে কাজটা করেছে, গোয়েন্দা সংস্থা তাদের নজরদারি এত ভালোভাবে করেছে, আর কোনো ঘটনা ঘটাতে পারেনি। এরপরও স্যাংশনটা কীসের জন্য, সেটাইতো আমার প্রশ্ন।’
উন্নত দেশেও ম্লূস্ফীতি ও খাদ্য সংকট চলার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সেদিক থেকে আমরা আমাদের মানুষদেরকে প্রণোদনা দিয়েছি, এবার রোজার সময়তো কোনো হাহাকার শোনা যায়নিৃ. রোজার সময়তো কোনো হাহাকার শোনা যায়নি, গেছে?
তিনি বলেন, ‘আমাদের এত দুশ্চিন্তা কিসের? কথা নাই বার্তা নাই স্যাংশনের ভয় দেখাবে, আর আমরা ভয়ে বসে থাকব, কেন? ‘আমরা মুক্তিযুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছি, যারা আমাদের সপ্তম নৌবহরের ভয় দিয়েছিল, আমরা সেটাও পার করে বিজয় অর্জন এ কথা ভুললে চলবে না। আত্মবিশ্বাসটা নিয়ে চলতে হবে। আত্মবিশ্বাস থাকলে এক বেলা খেয়ে থাকব, তাতেও অসুবিধা নাই।’
বাংলাদেশের কিছু নাগরিকই দেশের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ নিয়ে বিদেশে যায় বলে মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘নিজের ভাঁড় ভালো নাই, ঘি ওয়ালার দোষ দিয়ে লাভ কী?
তিনি বলেন, ‘দুর্ভাগ্যের বিষয়টি হল, আমাদের দেশের কিছু মানুষই বাংলাদেশের বদনাম করে। তাদের স্বার্থ রক্ষা, অথচ তারা যে কত রকম দুর্নীতি, অপকর্ম, কতকিছুর সাথে জড়িত, সেগুলোতো আমাদের সাংবাদিকরা খুঁজে বের করে না। খুঁজলে দেখা যাবে অনেক কিছু পাওয়া যাবে। এরাই বাংলাদেশের বদনাম করে।’ এক্ষেত্রে শ্রম ও পরিবেশ আন্দোলনের নেতৃত্ব দেওয়া ব্যক্তিদের কথা আলাদাভাবে তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের কিছু শ্রমিক নেতা আছে, নিজেরা খাবেন দাবেন, আরাম-আয়েশে থাকবেন, দামি গাড়িতে চলবেন, পরিবেশ নিয়ে আন্দোলন করেন, দামি-দামি গাড়িতে চলেন।
মামলা করেন, মামলা করে কয়টা মামলার রায় পাওয়া গেছে? প্রথমে মামলা, পরে আসে নেগোসিয়েশন। নেগোসিয়েশন মানেইতো আদান-প্রদান। এবং আয়েশে থেকে বাংলাদেশের বদনামটা করে আসে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের দেশের লোকরা গিয়েইতো বিভিন্ন জায়গায় বদনামটা করে আসে। এটাই দুর্ভাগ্যজনক। সাংবাদিকরা যদি এদিকটায় নজর দেন, অনেক কিছু পাবেন, অনেক তথ্য পাবেন।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমার কথা হচ্ছে, বাংলাদেশ একটা উর্বর ভূমি। বাংলাদেশের মানুষ অনেক শক্তিশালী। তাছাড়া, অনেক দেশের মানুষ বয়োবৃদ্ধ হয়ে গেছে, আমাদের আয়ুষ্কাল বেড়েছে ঠিক।’
আমাদের নারী সমাজ, যুব সমাজ, সাধারণ মানুষ প্রত্যেকে কাজ করে, আমরা নিজেদের কাজ করে নিজেরা খাব। আমাদের উপর যারা স্যাংশন দেবে তাদের কাছ থেকে কিচ্ছু কিনব না।’
রিজার্ভ নিয়ে এত দুশ্চিন্তার কারণ নেই
বাংলাদেশের বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ এখন যে পর্যায়ে আছে, তা নিয়ে দুশ্চিন্তার কোনো কারণ দেখছেন না প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, আমাদের সেইটুকু থাকা দরকার, যদি কোনো আপৎকালীন সময় হয়, যেমন এই ঝড় ঝঞ্ঝা এরকম ক্ষেত্রে, আমাদের খাদ কিনতে যদি ঘাটতি দেখা দেয়, সেই খাদ্য কেনার মত, অর্থাৎ তিন মাসের খাদ্য কেনার মত ডলারটা যেন আমাদের হাতে থাকে। ওইটা নিয়েই রিজার্ভের জন্য চিন্তা। এছাড়া রিজার্ভের এত চিন্তা না।
সাংবাদিকদের প্রশ্নে রিজার্ভ ও ডলার সঙ্কট নিয়ে কথা বলেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ডলার সঙ্কট এখন পুরো বিশ্বব্যাপী, এটা শুধু বাংলাদেশে না।
প্রথম গেল করোনা অতিমারী, আর তারপর ইউক্রেইন-রাশিয়া যুদ্ধ, আর সেই যুদ্ধের সাথে স্যাংশন, কাউন্টার স্যাংশন। যার ফলে আজকে সারা বিশ্বব্যাপী মুদ্রাস্ফীতি যেভাবে বেড়ে গেছে। দ্বিতীয় হচ্ছে পরিবহন, পরিচালন ব্যয় বেড়ে গেছে, যার কারণে ডলার সঙ্কটটা এখন সমগ্র বিশ্বেই রয়ে গেছে। শেখ হাসিনা বলেন, ‘করোনা অতিমারীর মধ্যে যেটা হয়েছিল যে আমদানি রপ্তানি বন্ধ, বিদেশে যাতায়াত বন্ধ, সবকিছু বন্ধ থাকাতে খরচও আমাদের কম ছিল, ভ্যাকসিন কিনতেই যা ডলার লেগেছিল, বাকি আমরা খুল ভালোভাবে একটা রিজার্ভ রাখতে পেরেছিলাম।
কিন্তু এরপর যখন আবার অর্থনীতি উন্মুক্ত হল, স্বাভাবিকভাবেই সেই সুযোগটা থাকেনি, ডলার খরচ হচ্ছে এবং হবে। তার থেকেও বড় কথা, মানুষকে ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ দিচ্ছি, গ্যাস দিয়ে এখানে ডেভেলপমেন্ট হচ্ছে, বিনিয়োগ হচ্ছে, উৎপাদন বাড়ছে।
কাজেই ডলারের ওপর চাপ পড়বে, তবে সেই চাপটা আমরা একটা কথা বলি, আমরা তো আগেও সরকারে এসেছি, যখন ৯৬ সালে এসেছিলাম, তখন কতটুকু ছিল আমাদের রিজার্ভ? জাতির পিতা যখন যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশ গড়তে শুরু করেন, তখন তো এক পয়সাও রিজার্ভ ছিল না। আমরা কি চলি নাই, আমরা কি এগোতে পারিনি?
ডলার আর রিজার্ভ নিয়ে বেশি বেশি কথা বলতে বলতেই সবার মাথায় ‘ওই রিজার্ভই ঢুকে গেছে’ বলে মন্তব্য করেন শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, ‘আমাদের রিজার্ভ এখনও যা আছে, তাতে অন্তত এটুকু বলতে পারি, আমাদের এখনও কোনো সঙ্কট এভাবে নাই। তবে হ্যাঁ, আমরা সব সময় চেষ্টা করি, যে রিজার্ভটা যেন আমাদের ধরে থাকে, সেদিকে।’
২০০৬ সালে যখন আওয়ামী লীগ শেখ হাসিনার নেতৃত্বে প্রথমবার ক্ষমতায় আসে, সেই সময়ের কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, ‘যখন বিএনপি ক্ষমতায়, তখন রিজার্ভ কত ছিল? ০.৭৪৪ বিলিয়ন ইউএস ডলার, মানে এক বিলিয়ন ডলারের চেয়ে কম। আর এখন আমাদের আছে ৩১.২২ বিলিয়ন ডলার। কাজেই এটা নিয়ে দুশ্চিন্তর খুব বেশি একটা কারণ নেই।
‘যে কারণে আমরা বলছি যে আমাদের দেশের যত অনাবাদি জমি, তাতে ফসল ফলাব, নিজের খাবার খাব, অন্যের ওপর আর নির্ভরশীল হব না। কারো কাছে হাত পেতে চলব না। কারো কাছে ভিক্ষা আনব না। নিজের উৎপাদন করে আমরা নিজেরাই চলব। আমাদের খাবারের অভাব হবে না।’
যে কোনো দুর্যোগ মোকাবেলার সরকারের প্রস্তুতি থাকে জানিয়ে রসিকতা করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এমনই প্রস্তুতি নিলাম যে ঘূর্ণিঝড় চলেই গেল, আঘাত হানতেই সাহস পেল না। তবে আবার আসবে। একটা নিয়ম আছে, একটার পর পরই আরেকটা আসে, সেজন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।’