নিয়ন্ত্রণহীন মশা : মানুষের আতঙ্ক কাটছে না

ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া প্রতিরোধ ও মশকনিধনে গত ২৮ জুন ১০০ দিনের ক্র্যাশ কর্মসূচি শুরু করে সিটি করপোরেশন। যে কর্মসূচি এখনো চলমান। এই কার্যক্রমের ফল পাচ্ছেন না নগরবাসী। কেননা, এই কর্মসূচি চলার মধ্যেই বেড়ে চলছে ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। নাগরিকেরা অভিযোগ করেছেন, সিটি করপোরেশনের অন্যতম কাজই হচ্ছে মশা মারা। এই কাজে করপোরেশনের কার্যকর কোনো পদক্ষেপ দেখছেন না তাঁরা। সিটি করপোরেশন যদি ঠিকভাবে মশা মারার কাজ করত, তাহলে এই পরিস্থিতি হতো না।
জুলাইয়ের পর থেকে চট্টগ্রাম নগরে ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরে এখন পর্যন্ত ১ হাজার ৯০৪ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন। প্রথম ছয় মাসে যেখানে আক্রান্ত হয়েছিলেন ৪৪৫ জন, সেখানে ১ জুলাই থেকে গতকাল শুক্রবার পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ১ হাজার ৪৫৯। মারা যাওয়া ১৭ জনের মধ্যে ১৫ জনই মারা গেছেন এই সময়ে।
গত বছরের জুলাই-আগস্ট মাসে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছিলেন ৪০০ জন। দুই মাসে মৃত্যু হয়েছিল দুজনের। এবার এই সময়ে আক্রান্ত হয়েছেন ১ হাজার ১৩৫ জন। আগের বছরগুলোতে চিকুনগুনিয়ার হিসাব রাখা হতো না। এবার তালিকা করা হচ্ছে। চলতি বছরে গতকাল পর্যন্ত চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন ৩ হাজার ২২১ জন।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র শাহাদাত হোসেন নিজেই মশকনিধন কর্মসূচির গাফিলতি নিয়ে নিজেই অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। গত ৬ আগস্ট সিটি করপোরেশনের এক সভায় মেয়র বলেন, ‘অনেক ওয়ার্ডে মশকনিধনের কার্যক্রম এখন অনেকটাই কমে গেছে। আগ্রাবাদে গিয়ে দেখলাম, যতক্ষণ আমি ছিলাম ততক্ষণ স্প্রে করা হয়েছে, পরে কাজ বন্ধ।’

সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতা বিভাগের এক কর্মকর্তা এমন পরিস্থিতির জন্য তিন সংকটকে দায়ী করেছেন। তাঁর মতে, চট্টগ্রাম নগরের ৪১টি ওয়ার্ডে নিবিড়ভাবে মশা মারার ওষুধ ছিটানোর জন্য অন্তত সাড়ে চার শ কর্মী দরকার। কিন্তু আছে আছে ২৭০ জন। তাঁদের মধ্যে ৭০ জন আবার বিশেষ দলের সদস্য। বাকি ২০০ সদস্য ওয়ার্ড পর্যায়ে কাজ করেন। নগরের ওয়ার্ডগুলোর আয়তনের তুলনায় এই জনবল কম। আর দুটি সংকট হচ্ছে বাজেট স্বল্পতা এবং পর্যাপ্ত ওষুধের অভাব। মশকনিধন কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য প্রতি অর্থবছরে বাজেটে ৮-৯ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়। কিন্তু বাস্তবে বরাদ্দ পাওয়া যায় তিন ভাগের এক ভাগ। ফলে চাহিদা অনুযায়ী ওষুধ কেনা যায় না। ওই কর্মকর্তার মতে, নগরের সব কটি ওয়ার্ডে ছিটানোর জন্য বছরে ৬০ থেকে ৬৫ হাজার লিটার অ্যাডাল্টিসাইডের (পূর্ণবয়স্ক মশা মারার ওষুধ) প্রয়োজন। কিন্তু সিটি করপোরেশন কিনে ২৫ থেকে ৩০ হাজার লিটার। অর্থাৎ চাহিদার তুলনায় অর্ধেক। ফলে ওষুধ ছিটানোর কার্যক্রম চলে টেনেটুনে।
আসলে মশক নিয়ন্ত্রণে বাস্তবভিত্তিক কর্মপরিকল্পনার অভাব আছে। একদিকে চাহিদার তুলনায় কম ওষুধ কেনা অন্যাদিকে প্রয়োজনের তুলনায় কম লোকবল নিয়ে বছরের পর বছর মশা নিয়ন্ত্রণের মতো জটিল কাজ সুচারুভাবে সম্পন্ন করা সম্ভব নয়, এ কথা যত দ্রুত বুঝবে কর্তৃপক্ষ তত দ্রুত সমস্যার সমাধান হবে। নতুবা নয়।