নিজস্ব প্রতিবেদক »
বেড়েই চলেছে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম। তবে সে তুলনায় বাড়ছে না মানুষের আয়। জীবনযাপনের ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় দিশেহারা ক্রেতা। নতুন করে চাল, চিনি, তেল, ডিম, মরিচ, ব্রয়লার মুরগির দাম বেড়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আড়তদার ও কারখানাগুলোকে মনিটরিংয়ের জোর দিতে বললেন ভোক্তা ও সাধারণ ব্যবসায়ীরা।
এক সপ্তাহের ব্যবধানে বাজারে পাইজাম, লতা, স্বর্ণা, ইরিসহ বিভিন্ন চালের দাম ৪ থেকে ৫ টাকা বেড়েছে। গতকাল প্রতি কেজি মিনিকেট (সরুচাল) ও নাজিরশাইল বিক্রি হয়েছে ৬৫ থেকে ৭৪, মাঝারি চাল (পাইজাম/লতা) বিক্রি হয়েছে ৫৫ থেকে ৬২ টাকা। চিনিগুড়া, পাইজাম (স্বর্ণা) আর মোটা চাল (স্বর্ণা/ইরি) ৫০ থেকে ৫৩ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়েছে।
হিসাব অনুসারে এখন চালের দাম কম হওয়ার কথা থাকলেও উল্টো বেড়েছে।
খাতুনগঞ্জের পাইকারি চাল বিক্রেতা ইসমাইল টেড্রার্সের মো. জামাল হোসেন বলেন, ‘মাঝে মাঝে ১ থেকে ২ টাকা দাম কমে, আবার ৩ থেকে ৪ টাকা করে বেড়ে যায়। গত এক বছরের বেশি সময় ধরে এ অবস্থা চলছে। ঠিকমতো মনিটরিং না থাকাতেই ইচ্ছামতো দাম বাড়াচ্ছে ‘সিন্ডিকেট’। এখানে আমাদের কিছু করার নেই।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রশাসন বাজার তদারকি করছে সাধারণ কিছু দোকানে। যারা কমিশনের মাধ্যমে পণ্য বিক্রি করে। কিন্ত তারা বড় করপোরেট কোম্পানি, আড়তদার ও মিলারদের বিরুদ্ধে অভিযান চালায় না।’
খাতুনগঞ্জের তৈয়ব ট্রেডার্সের স্বত্ত্বাধিকারি আলী আহমেদ বলেন, ‘এখানে ক্রেতা ও বিক্রেতা কারও দোষ নেই। নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধির পেছনে যেমন যৌক্তিক কারণ রয়েছে, তেমনি রয়েছে অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজি।’
রিয়াজউদ্দিন বাজারে বাজার করতে আসা বেসরকারি চাকরিজীবী মাহমুদুর রহমান বলেন, ‘আগে রমজানে নিত্যপণ্যের দাম বাড়তো এখন প্রতি দিন কোনো না কোনো ইস্যুতে দাম বাড়ছে। কিন্তু আমাদের আয় বাড়ছে না।’
সাধারণ ব্যবসায়ী ও ভোক্তাদের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট প্রতীক চৌধুরী বলেন, ‘আমরা শুধু সাধারণ ব্যবসায়ীদের জরিমানা বা অভিযান চালাচ্ছি তা সত্য নয়। আমরা বেশ কিছুদিন ধরে বড় প্রতিষ্ঠানে অভিযান পরিচালনা করেছি। যথাযথ অভিযোগ আসলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নিচ্ছি।’
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক নাসরিন আক্তার সুপ্রভাতকে বলেন, ‘আমরা অভিযান পরিচালনার সময় ব্যবসায়ীদের অনিয়মকে দেখি। কে ছোট-বড় কোম্পানি দেখছি না।’
এদিকে গতবছর আগস্টের মাঝামাঝি ডিমের দাম ডজনপ্রতি ১৫০ থেকে ১৭০ টাকা পর্যন্ত বাড়িয়ে ছিলেন সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীরা। সেপ্টেম্বরের শেষ সপ্তাহ ও অক্টোবরের মাঝামাঝি প্রশাসনের অভিযানে ডিমের বাজার নিয়ন্ত্রণে আসে। কিন্তু গত কয়েকদিন ধরে আবারও ডিমের দাম বাড়তি। গতকাল বিভিন্ন বাজারে প্রতিডজন লেয়ার মুরগির ডিম (লাল) ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকা দামে বিক্রি হয়েছে। হাঁসের ডিম ডজনপ্রতি ২১৫ থেকে ২২৫ টাকা দামে বিক্রি হচ্ছে।
রিয়াজউদ্দিন বাজারের ডিম আড়তদার শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘পাহাড়তলীর বাজারে ডিম নেই। এবার ফার্মে লেয়ার মুরগির কম চাষ হয়েছে। যার কারণে ডিমের সংকট।
অন্যদিকে গত এক মাস ধরে দেশি ও আমদানি পেঁয়াজের দাম কম থাকলেও গত চারদিনে কেজিপ্রতি দাম বেড়েছে ৫ থেকে ৭ টাকা। গতকাল বাজারে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৩৮ থেকে ৪০ টাকা, যা গত সপ্তাহে বিক্রি হয়েছে ৩০ থেকে ৩৫ টাকা। আর আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৪৫ টাকা।
খাতুনগঞ্জের পেঁয়াজ আড়তদার মো. ফোরকান বলেন, ‘এ বছর দেশে পেঁয়াজের ফলন ভালো হয়েছে। পরিবহন খরচ ও শ্রমিকদের বেতন সমন্বয় করে কিছুটা দাম বাড়ছে।
রিয়াজউদ্দিন বাজারে মাঝারি সাইজের পাবদা ৩৫০ টাকা, পোয়া ৩৫০, চিতল ৪৫০ টাকা বিক্রি হয়েছে। তাছাড়া সাগরের কোরাল (সাইজভেদে) ৩৫০ থেকে ৭০০ টাকা বিক্রি হয়েছে। চাষের তেলাপিয়া ১৮০ থেকে ২৫০, বাটা মাছ ৩২০ থেকে ৬০০ , কাতলা ৩৫০ থেকে ৩৮০, চিংড়ি ৫৮০ থেকে ৭৫০, শোল ৫৫০ টাকা, টাকি ৪০০, শিং ৩৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
অন্যদিকে চড়া দামে ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে। ব্রয়লার মুরগি কেজিপ্রতি ৪০ টাকা বেড়ে ১৮৫ থেকে ১৯০ টাকা, সোনালি মুরগি ৫০ টাকা বেড়ে ২৭০ টাকা থেকে ২৯০ টাকা ও দেশি মুরগির মাংস ৩০ টাকা দাম বেড়ে ৪৭০ থেকে ৫০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। অন্যদিকে খাসি ও গরুর মাংসের দাম বেড়েছে কেজিপ্রতি ১০০ টাকার উপরে। গরুর মাংস বিক্রি হয়েছে কেজিপ্রতি ৮৫০ টাকা এবং খাসির মাংস ১০০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
সবজিতে একটু স্বস্তি রয়েছে। কেজিপ্রতি ১০ থেকে ১২ টাকা কমেছে। প্রতি কেজি মিষ্টিকুমড়া বিক্রি হয়েছে ৩০ টাকা, শিম ৩০ থেকে ৩৫, শালগম ১৮ থেকে ২০, মুলা ১৫, করলা ৬০ থেকে ৭০, শিমের বিচি ৮০, শশা ৪০ থেকে ৫০, গাজর ৩০ থেকে ৩৫, টমেটো ২০ থেকে ২৫, বেগুন ৩০ থেকে ৩৫, পেঁপে ২০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া প্রতিকেজি ফুলকপি ১২ থেকে ১৫ টাকা, বাধাকপি ১৮ থেকে ২০ টাকা, লাউ ২০ থেকে ২৫ টাকা দামে বিক্রি হচ্ছে। কাঁচামরিচ বিক্রি হয়েছে ১০০ টাকায়।