নিজস্ব প্রতিবেদক »
বাজারে বেড়ে চলেছে নিত্যপণ্যের দাম। চাল, ডাল, পেঁয়াজ, চিনি, আটা, আদা, রসুন, এলাচ, শুকনা মরিচ, ভোজ্যতেলসহ সকল ধরনের নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্য বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে। তাছাড়া গ্রীষ্মকালীন মৌসুমি সব ধরনের সবজির সরবরাহ স্বাভাবিক থাকলেও দাম এখনো চড়া। এতে খরচের চাপে ভোক্তাদের নাভিশ্বাস ।
সপ্তাহের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম আরেক দফা বেড়েছে। আমদানি বন্ধের কারণে এ পণ্যের দাম বেড়েছে বলে জানান খাতুনগঞ্জের পেঁয়াজ ব্যবসায়ীরা।
গতকাল খুচরা বাজারে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৬০-৭০ টাকা। আর পাইকারি বাজারে ৫২ থেকে ৫৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এপ্রিলের মাঝামাঝি সময়েও বাজারে দেশী পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছিল ১৮ থেকে ২৫ টাকা। যা গত বছর এ দিনে বিক্রি হয়েছিল ৩০ থেকে ৪০ টাকা। পণ্যটির দাম বছরের ব্যবধানে বেড়েছে ৭৮ শতাংশেরও বেশি। অন্যদিকে পাইকারি ও খচরা উভয় বাজারে কোন ধরনের আমদানি পেঁয়াজ নেই বলে জানান ব্যবসায়ীরা।
রেয়াজউদ্দিন বাজারে মো. পারভেজ নামে এক ক্রেতা বলেন, পেঁয়াজ এখনে চালের চেয়েও দামি। বেড়েই চলেছে পেঁয়াজের দাম। অথচ বাজার তদারকি প্রতিষ্ঠানগুলোর কোন তৎপরতা নেই। তারা যদি তদারকি করত, তাহলে দাম কমে আসত।
চাক্তাইয়ের পেঁয়াজ ব্যবসায়ী মো. ফোরকান বলেন, মার্চের ২৫ তারিখ থেকে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ রেখেছে সরকার। যার ফলে বাজারে ভারতীয় পেঁয়াজের সংকট রয়েছে। ফলে দিন দিন দাম বাড়ছে এ পণ্যের। পেঁয়াজের বাজার নিয়ন্ত্রণ রাখতে হলে একমাত্র উপায় আমদানি চালু রাখা। আমদানি পেঁয়াজ বাজারে আসলে আবারো কমে যাবে।
গতকাল বৃহস্পতিবার নগরীর রেয়াজউদ্দিন, বক্সিরহাট ও ফিরিঙ্গিবাজার ঘুরে দেখা যায়, বাজারে প্রতি কেজি সরু চালের মধ্যে (নাজির/মিনিকেট) মানভেদে ৬০-৬৫ টাকা। মাঝারি চালের মধ্যে পাইজাম ও লতা বিক্রি হয়েছে ৪৮ থেকে ৫৫ টাকা। আর মোটা চালের মধ্যে স্বর্ণা/চায়না/ইরি জাতের চাল বিক্রি হয়েছে ৪৮ থেকে ৫০ টাকা দামে। বছরের ব্যবধানে সকল ধরনের চালের দাম বেড়েছে ৪ থেকে ৬ শতাংশ।
চাক্তাইয়ের খালেক রাইস এজেন্সির মালিক জামাল হোসেন বলেন, দেশের বিভিন্নস্থানে যেভাবে ধানের দাম কমেছে ঠিক সে অনুযায়ী হিসেব করলে বড় বড় চাল বিক্রির প্রতিষ্ঠানগুলো চড়া দামে বিক্রি করছে। মূলত চালের বাজার তারাই নিয়ন্ত্রণ করে। সাধারণ ব্যবসায়ীরা ব্যবসায়ীরা খরচের সাথে সমন্বয় করে হয়তো কিছু টাকা দামে বিক্রি করছে।
চাক্তাইয়ে চাল কিনতে আসা মো. আশিকুর রহমান নামের এক ক্রেতার সাথে কথা হলে তিনি বলেন, সামান্য একটি ইলেকট্রনিক্স পণ্য বিক্রির প্রতিষ্ঠানে চাকরি করি। যে মাসিক আয় তা দিয়ে পুরো মাসের সংসারের খরচ ব্যয় বহন করতে হয়। বাড়ি ভাড়া থেকে শুরু করে সন্তানদের লেখাপড়ার খরচ, সঙ্গে খাবারের খরচ তো আছেই। বর্তমানে খরচ মেটাতে হিমসিম খেতে হচ্ছে।
এদিকে সপ্তাহের ব্যবধানে ব্রয়লার মুরগির দাম কমেছে কেজিপ্রতি ১৫ থেকে ২০ টাকা। যা গতবছর এদিনে বিক্রি হয়েছিল ১৫৭ থেকে ১৭০ টাকা। এক বছরের ব্যবধানে বেড়েছে ১৬ শতাংশেরও বেশি। গতকাল বাজারে ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হয়েছে কেজিপ্রতি ২০৫ থেকে ২১৫ টাকা, সোনালি মুরগি ৩২৫ থেকে ৩৩০ টাকা ও দেশি মুরগি বিক্রি হয়েছে ৬০০ থেকে ৬৫০ টাকা। তাছাড়া অন্যান্য মাংসের মধ্যে খাসি ও গরুর মাংসের দাম গত সপ্তাহের দরে স্থিতিতে রয়েছে। বাজারে খাসির মাংস বিক্রি হয়েছে ১০৫০ টাকা ও গরুর মাংস হাঁড়সহ বিক্রি হয়েছে ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকা আর হাড়-চর্বিহীন মাংস বিক্রি হয়েছে ৯০০ টাকা কেজিতে।
এদিকে সপ্তাহের ব্যবধানে ১০ টাকা বেড়েছে ডিমের দাম। গতকাল বাজারে ফার্মের মুরগির ডিম বিক্রি হয়েছে ডজনে ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকা। গতবছর এ দিনে বিক্রি হয়েছিল ৮৫ থেকে ৯০ টাকা। যা এক বছরের ব্যবধানে বেড়েছে ৩১ শতাংশেরও বেশি।
ডিমের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে, বক্সিরহাটের ডিম ব্যবসায়ী মো. আলম বলেন, বাজারে উত্তরবঙ্গ থেকে ডিম না আসার কারণে এ সপ্তাহে যোগান কমেছে। যার ফলে দাম একটু বাড়িয়েছে ব্যবসায়ীরা।
অন্যদিকে বাজারে মাংসের দাম বাড়লেও কিছুটা কমেছে মাছের দাম। নগরীর মাছের বাজারে গিয়ে দেখা যায়, বড় আকারের রূপচাঁদা বিক্রি হচ্ছে ৯৫০ থেকে ১ হাজার ১০০ টাকার মধ্যে। কিছুটা ছোট আকৃতির রূপচাঁদা বিক্রি হচ্ছে ৪৫০ থেকে ৬০০ টাকার মধ্যে। ঈদের আগে বড় রূপচাঁদা ১ হাজার ২০০ টাকার নিচে পাওয়া যায়নি। ছোটগুলোও বিক্রি হয়েছিলো ৬০০ থেকে ৭০০ টাকায়। কেজিতে ২০ থেকে ১০০ টাকা কমে প্রতি কেজি চাষের শিং আকারভেদে বিক্রি হচ্ছে ২২০ থেকে ৩০০ টাকা, দেশি শিং ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা, দেশি মাগুর ৪৫০ টাকা, পাবদা ২৮০ থেকে ৩৫০ টাকা, রুই ১৮০ থেকে ৩৫০ টাকা, মলা ২০০ থেকে ২৫০ টাকা, কাঁচকি ২৫০ থেকে ২৮০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
এদিকে কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা যায়, বাজারে পর্যাপ্ত গ্রীষ্মকালীন সবজি রয়েছে। কিন্তু সে হারে প্রত্যেক সবজির দাম বেশ চড়া। ব্যবসায়ীদের মতে সপ্তাহের ব্যবধানে সকল ধরনের সবজির দাম বেড়েছে কেজিপ্রতি ১০-১৫ টাকা। গতকাল বাজারে প্রতি কেজি শসা আকারভেদে বিক্রি হয়েছে ৫০ থেকে ৭০ টাকা। যা গত সপ্তাহে বিক্রি হয়েছিল ৫০ টাকা। প্রতি কেজি করলা বিক্রি হয়েছে ১০০ থেকে ১২০ টাকা। যা গত সপ্তাহে বিক্রি হয়েছিল ৮০ থেকে ১০০ টাকা। প্রতি কেজি পেঁপে বিক্রি হয়েছে ৩০-৫০ টাকা। এদিকে শীতকালীন সবজির মধ্যে দেশি পাকা টমেটোর কেজি বিক্রি হয়েছে ৪০-৬০ টাকা। ভালো মানের শিমের কেজি বিক্রি হয়েছে ৬০ থেকে ৭০ টাকা। এ ছাড়া প্রতি কেজি গাজর বিক্রি হয়েছে ৪০ টাকা। বেগুন বিক্রি হয়েছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজি। মাঝারি আকারের প্রতি পিস লাউ বিক্রি হয়েছে ৭০-৯০ টাকায়।
জানতে চাইলে ক্যাবের ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন বলেন, বাজারে প্রতিদিনই কোন না কোন ইস্যুতে নিত্যপণ্যের দাম বাড়ছে। ব্যবসায়ীদের নানা অজুহাতে দাম বাড়ানোর কারনে ভোক্তারা অসহায় হয়ে পড়ছে। যা কাম্য নয়। অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজি রোধে সংশ্লিষ্টদের জোরালো ভূমিকা দরকার।